Samakal:
2025-06-16@06:10:36 GMT

সেজার ভ্যালেজোর প্রেমজীবন

Published: 4th, April 2025 GMT

সেজার ভ্যালেজোর প্রেমজীবন

মার্ক্সবাদী আদর্শে গভীরভাবে প্রভাবিত হলেও, ট্রটস্কিবাদ এবং পরে স্ট্যালিনবাদ দ্বারা প্রভাবিত পেরুর সেজার ভ্যালেজো (১৮৯২-১৯৩৮) ছিলেন বিশ শতকের অন্যতম গভীর ও রহস্যময় কবি। তাঁর কবিতা অস্তিত্বের যন্ত্রণা, রাজনৈতিক বিদ্রোহ ও গভীর আবেগে পরিপূর্ণ, যেখানে প্রেম প্রকাশ পেয়েছে অপূর্ণতা, ট্র্যাজেডি এবং অতীন্দ্রিয়তার মিশেলে। ভ্যালেজোর প্রেমজীবন ছিল এক বিস্ময়কর পরিক্রমা–অন্ধ আবেগ, অন্তর্দহন, এবং পরিণতিহীন আকাঙ্ক্ষার এক অনির্বচনীয় সংমিশ্রণ। ভ্যালেজোর শৈশবের প্রেমের আঘাত থেকে শুরু করে প্যারিসের রোমান্টিক সম্পর্ক এবং স্ত্রী জর্জেট ফিলিপার্টের সঙ্গে জটিল দাম্পত্য, হৃদয় অন্তর্লীন ভালোবাসার গল্প তাঁর কবিতার মতোই বেদনাদায়ক ও গভীর।

প্রেম তাই আকাশ ভিশনের মতো–কখনও তা জীবনকে আলোকিত করেছে, আবার কখনও অন্ধকারেও ফেলেছে। তাঁর প্রেমসত্তার অনুভব : ‘Amar, amar intensamente, hasta que duela.

’ (‘ভালোবাসো, গভীরভাবে ভালোবাসো, যতক্ষণ না তা ব্যথা দেয়।’)

সেজার ভ্যালেজো জীবনে একাধিক প্রেমে পড়েছেন। গবেষকদের মতে তাঁর চারটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেম চিহ্নিত হয়েছে, যা তাঁর ব্যক্তিত্ব, কবিতা এবং দার্শনিক চেতনায় গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই চারজন প্রেমময় নারী–মারিয়া রোজা, জিয়াভেলিটা (ওতিলিয়া ভিলানুয়েভা), হেনরিয়েট মাইস এবং জর্জেট ফিলিপার্ট–তাঁর হৃদয় ও সাহিত্যকে নির্মাণ ও বিনির্মাণ করেছে।

ভ্যালেজোর প্রথম ভালোবাসা মারিয়া রোজা সান্দোভাল সানচেজ (Maria Rosa Sandoval Sanchez)। তাদের প্রেম যেমন গভীর ও আবেগপূর্ণ ছিল, তেমনি দুঃখময় ও নিয়তির নির্মম খেলায় ক্ষতবিক্ষতও হয়েছিল। তাঁর সাথে পরিচয় অন্যভাবে।

ভ্যালেজোর জন্ম পেরুর সান্তিয়াগো দে চুকোতে, আর মারিয়া রোজা ছিলেন পেরুর ত্রুজিলো শহরের এক সাধারণ পরিবার থেকে আসা অত্যন্ত রূপবতী, সংস্কৃতিমনা এক তরুণী। তাদের প্রেম শুরু হয় যখন তারা ত্রুজিলোর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছিলেন। এই প্রেম চিঠির মাধ্যমে আরও বেশি গভীর হয়ে ওঠে এবং তাঁর কবিতায়ও মারিয়া রোজা প্রথম ও প্রধান অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠেন। কিন্তু তাদের এই ভালোবাসা বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারেনি।

ভালোবাসার শিল্পে যখন অর্থ এবং অবস্থানের প্রশ্ন ওঠে আসে তখন বেদনাই শিল্পিত হয়। ভ্যালেজো ছিলেন দারিদ্র্যপীড়িত একজন মানুষ। রোজার পরিবার এ সম্পর্ক তাই মেনে নেয়নি, কারণ তারা চাননি তাদের কন্যা একজন দরিদ্র কবির সঙ্গে জীবন কাটাক। পরিবারের বাধার কারণে, তাদের সম্পর্ক গোপন ও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। পারিবারিক চাপে রোজাকে একজন ধনী ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, যা ছিল ভ্যালেজোর জন্য এক হৃদয়বিদারক নির্মম মানসিক আঘাত।

এই হৃদয়বিদারক ঘটনার পর ভ্যালেজো ভীষণ একাকিত্ব ও হতাশায় ডুবে যান। প্রেমের এই পরিণতি তাঁকে অস্তিত্ববাদী সংকট ও অন্তর্জ্বালার দিকে ঠেলে দেয়। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘Los Heraldos Negros’ (দ্য ব্ল্যাক হেরাল্ডস, ১৯১৯)-এর অন্যতম প্রধান অনুপ্রেরণা ছিল এই প্রেম ব্যর্থতার। এ বইয়ের প্রথম কবিতাতে পাওয়া যায় তাঁর গভীরতম যন্ত্রণার প্রকাশ–‘Hay golpes en la vida, tan fuertes... Yo no sé.’ (‘জীবনে এমন সব আঘাত আসে, যা সহ্য করা কঠিন... আমি জানি না কেন।’)

মারিয়া রোজার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর, ভ্যালেজোর জীবনে প্রেমের অনুভূতি বদলে যায়। তিনি আর কখনও বিশুদ্ধ প্রেমে বিশ্বাস করতে পারেননি। তাঁর পরবর্তী প্রেমগুলো (হেনরিয়েট মাইস, জিয়াভেলিটা, জর্জেট ফিলিপার্ট) ছিল জটিল ও বহুমাত্রিক, কিন্তু প্রথম প্রেমের মতো আবেগপূর্ণ ছিল না আর কখনও। তাঁর কবিতায় সে স্বরূপ আরও তীব্রভাবে দেখা যায়। রোজার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক টিকে যদি যেত, তবে ভ্যালেজোর কবিতা হয়তো এতো গভীর হতো না। প্রেমের হারানোর মধ্যে তিনি পেয়েছিলেন এক অসীম সৃজনশীল শক্তি, যা তাঁকে বিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতে পরিণত করে।

ভ্যালেজোর সবচেয়ে রহস্যময় প্রেম ছিল আরেক তরুণীর সাথে, যাঁকে তিনি কবিতায় ‘জিয়াভেলিটা’ নামে ডাকতেন। গবেষকদের মতে, তাঁর প্রকৃত নাম ছিল ওতিলিয়া ভিলানুয়েভা (Otilia Villanueva, aka Geavelita)। ভ্যালেজো যখন পেরুর এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষকতা করছিলেন, তখন জিয়াভেলিটার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জিয়াভেলিটা ছিলেন এক উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে, যার কারণে তাঁদের সম্পর্ক সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল না। তাছাড়া ভ্যালেজোর বিরুদ্ধে ছিল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এবং তিনি তখন পুলিশের নজরদারিতে ছিলেন। কিন্তু জিয়াভেলিটা খুবই আবেগপ্রবণ এক তরুণী। ভালোবাসার জন্য, তিনি সমাজের সব নিয়ম ভাঙতে প্রস্তুত ছিলেন।

কিন্তু ১৯২০ সালে, ভ্যালেজো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পেরুর ট্রুজিলোতে গ্রেপ্তার হন এবং দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলেন। এই সময়েই তাঁর প্রেমিকা জিয়াভেলিটা তাঁর জন্য একের পর এক চিঠি লিখতেন, যা ভ্যালেজোর মানসিক স্থিরতা রক্ষা করত। তবে, ভ্যালেজো যখন কারাগার থেকে মুক্তি পান, তখন তাঁর জীবন অন্য এক দিকে মোড় নেয়। তিনি ইউরোপের উদ্দেশে যাত্রা করেন এবং পরে ফ্রান্সে স্থায়ী হন, যেখানে তাঁর নতুন প্রেম ও বামপন্থি রাজনৈতিক মতাদর্শ গড়ে ওঠে। ফলে, জিয়াভেলিটা ও ভ্যালেজোর প্রেমের সমাপ্তি ঘটে, কিন্তু ভ্যালেজোর মনে ও কবিতায় তাঁর স্মৃতি অমলিন হয়ে রয়ে যায়। তাঁর কবিতায় জিয়াভেলিটার স্মৃতি আজও অমর হয়ে আছে। ‘Te amo con el alma y a veces, con el cuerpo.’ (‘আমি তোমাকে ভালোবাসি আত্মা দিয়ে, আর কখনও কখনও শরীর দিয়ে।’)

ভ্যালেজোর কবিতায় জিয়াভেলিটার উপস্থিতি স্পষ্ট, বিশেষ করে ‘Los Heraldos Negros’ (দ্য ব্ল্যাক হেরাল্ডস, ১৯১৯) এবং ‘Trilce’ (১৯২২)-এ। ‘Trilce’ ভ্যালেজোর অন্যতম বিখ্যাত এবং জটিল কাব্যগ্রন্থ, যেখানে ভাষার চমৎকার খেলায় প্রেম ও বিচ্ছেদের অনুভূতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এখানে এক অনুচ্চারিত যন্ত্রণা রয়েছে, যা প্রেমিকাকে হারানোর বেদনা প্রকাশ করে। একটি বিখ্যাত কবিতায় তিনি লিখেছেন: ‘Dulce amiga, que parte de dolor toca en tu voz y en tu andar?’ (‘প্রিয়তমা বন্ধু, তোমার কণ্ঠ আর চলার মধ্যে কোন বেদনার সুর বাজে?’)

সেজার ভ্যালেজোর ফ্রান্সে আসার পর, তাঁর জীবনে ১৯২৬ সালে হেনরিয়েট মাইস প্রবেশ করেন। এই সম্পর্ক শুধু ব্যক্তিগত সুখের বিষয় ছিল না; বরং এটি সেজার ভ্যালেজোর জন্য ছিল এক নতুন কাব্যিক ও সাংস্কৃতিক জগতের দরজা, যেখানে তিনি ফরাসি বুদ্ধিজীবী চক্রের সঙ্গে অনায়াসেই

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক র কখনও র জন য পর ব র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে দুই স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ১

রাজবাড়ীর পাংশায় প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে দুই স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল রোববার রাতে পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

ভুক্তভোগী দুই ছাত্রীর মা ও বাবা গতকাল পৃথকভাবে বাদী হয়ে ধর্ষণের অভিযোগে পাংশা থানায় দুটি মামলা করেন। এতে হাসমত আলী (২২) ও শিহাব মণ্ডল (২০) নামের দুই তরুণকে আসামি করা হয়। তাঁদের বাড়ি উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নে। মামলা করার পর পুলিশ রাতে অভিযান চালিয়ে শিহাবকে গ্রেপ্তার করে।

ভুক্তভোগী দুই স্কুলছাত্রী স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের একজনের বয়স ১৪ বছর এবং অপরজনের বয়স ১৫ বছর।

মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল বেলা ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া শেষে দুই বান্ধবী একসঙ্গে বাড়ি ফিরছিল। পথে উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নের বনগ্রাম এলাকায় পৌঁছালে তাদের পথ রোধ করে হাসমত ও শিহাব। ধারালো ব্লেড বের করে স্কুলছাত্রী দুজনকে জিম্মি করে রাস্তার অদূরে একটি পানের বরজে জোর করে নিয়ে যান তাঁরা। সেখানে পৃথক স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করেন ওই দুই তরুণ। বিষয়টি কাউকে না জানাতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলে যান তাঁরা।

গতকাল রাতে পাংশা মডেল থানায় মামলা করতে আসা ভুক্তভোগী দুই স্কুলছাত্রীর পরিবার জানায়, হাসমত ও শিহাব ওই দুই স্কুলছাত্রীকে মাঝেমধ্যে উত্ত্যক্ত করতেন। এ ঘটনায় দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন।

পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে একজনের মা এবং অপরজনের বাবা বাদী হয়ে রোববার রাতে হাসমত আলী ও শিহাব মণ্ডলকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা করেন। রাতেই আসামি শিহাব মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামি হাসমতকে গ্রেপ্তারে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।

ওসি সালাহ উদ্দিন আরও বলেন, গ্রেপ্তার শিহাব পুলিশের কাছে ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তাঁর পোশাকেও ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তাঁকে সোমবার রাজবাড়ীর আদালতে পাঠানো হবে। দুই স্কুলছাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কালিয়াকৈরে বিএনপির দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় আটক ২ নেতা, পরে ছাড়া পেলেন একজন
  • আমি গর্বিত আমি একজন মুসলিম: আমির খান
  • প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে দুই স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ১
  • ‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে
  • আসামে বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্র মামলায় পরেশ বড়ুয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
  • ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক ষড়যন্ত্রকারীদের কফিনে শেষ পেরেক: প্রেস সচিব
  • অর্ধশত বছরের চামড়ার মোকাম রাজারহাট
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সোর্স ইকবালের ডাকাতি