ঢাকাই সিনেমার অভিনেত্র্রী নাসরিন আক্তার নার্গিস। নাসরিন নামেই অধিক পরিচিত। তিন দশকের বেশি সময়ে অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। কৌতুক অভিনেতা হিসেবেও তার দর্শকপ্রিয়তা রয়েছে। অনেক আইটেম গানেও পারফর্ম করেছেন এই অভিনেত্রী।  

চলচ্চিত্রের অনেক গানে ছোট পোশাকে দেখা গিয়েছে নাসরিনকে। টানা দুই দশক আইটেম গানে নেচেছেন। ছোট পোশাকে নাচের কারণে ‘অশ্লীলতার’ তকমা জুড়ে দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু চলচ্চিত্রের আইটেম গানে কীভাবে যুক্ত হলেন নাসরিন।

একটি সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে কথা বলেছেন নাসরিন। এ অভিনেত্রী বলেন, “কীভাবে যুক্ত হয়েছি, তা বলতে পারি না। আসলে দিলদার ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করার পর। সালমান ভাইয়ের একটা সিনেমা ছিল। সিনেমার নামটা মনে করতে পারছি না। স্বপ্না আপা নামে একজন ছিলেন, তার সঙ্গে গান করছিলাম। ওই গানের নাচের সময়ে অনেক ডিরেক্টর আমাকে দেখেন, তারপর পছন্দ করেন। তৎক্ষণাৎ আমাকে পারিশ্রমিক দেন। পোশাকের মাপ নেওয়ার লোক পাঠান। এভাবেই শুরুটা হয়।”

আরো পড়ুন:

আমরা সবাই খানিকটা লোভী: জয়া

সুপার পাওয়ার পেলে পরকীয়া বন্ধ করব: অপু

এরপর টানা আইটেম গানে পারফর্ম করেছেন। আপনার আইটেম গানের বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে নাসরিন বলেন, “আমি মেকআপ রুমে গিয়ে কান্না করতাম। কান্নার আওয়াজ যাতে বাইরে না যায়, এজন্য বেসিনের কল ছেড়ে রাখতাম। যখন ভালো কোনো দৃশ্য থাকত, তখন বলা হতো নিজে পোশাক নিয়ে আসবে। আর যখন আইটেম গানের শুটিং থাকত, তখন নির্মাতারা পোশাক বানাতেন।”

পোশাক নিয়ে আপত্তির কথা পরিচালক-প্রযোজককে জানাননি? এ প্রশ্নের জবাবে নাসরিন বলেন, “হাজার বললেও লাভ হতো না। কারণ তারা তো তাদের ব্যবসার কথা চিন্তা করতেন। এটা আপনি বাদ দেন। বর্তমানে যে পোশাক দেখছি, তাতে নিজেরই লজ্জা লাগে। আমরা শিল্পী কাজের জন্য ছোট পোশাক পরতাম। অভিনয় করতাম। এখন যে পোশাকে ক্যামেরার সামনে আসে, তারা কি অভিনয়ের জন্য আসে, কাজের জন্য আসে? এসব দেখে আমি নিজেও অনেক সময় লজ্জা পাই। আমার এসব কথা শুনে এখন অনেকে বলবেন, ‘ঢং করছে’। আসলে তা না। আপনাদের কাছেই প্রশ্ন রাখলাম। আমরা অভিনয়ের জন্য ছোট পোশাক পরেছি, সে নিয়ে সারা জীবনের জন্য সিল মেরে দেওয়া হলো।”   

ছোট পোশাক পরার কারণে মানুষ ‘অশ্লীলতার’ সিল সেঁটে দেন। কিন্তু কষ্টের কান্না কেউ দেখেন না। এ তথ্য উল্লেখ করে নাসরিন বলেন, “কেউ আমার চোখের জল দেখেনি। আমার চিৎকার-কান্না কেউ শুনেনি। আমার পোশাকটাই দেখেছে। ক্যামেরার সামনে আমি যে অভিনয় করেছি, সেটা দেখেছে। এমনো হয়েছে একটি গানে যে পোশাক পরে নাচ করেছি, সেই পোশাক আমার ভালো লাগেনি। এ জন্য মানসিক যে যন্ত্রণা হয়েছে, তাতে দু-চার রাত আমি ঘুমাতে পারিনি। ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠেছি। শট নেওয়ার সময়ে অন্যভাবে নিতে বলতাম। কিন্তু নিতো না। কারণ আমি জানি, এত বড় স্ক্রিনে যখন দেখাবে তখন কেমন লাগবে!”

২০২২ সালে এক সাক্ষাৎকারে আইটেম গানে পারফর্ম করার কারণ ব্যাখ্যা করেছিলেন নাসরিন। এ অভিনেত্রী বলেছিলেন, “আইটেম গানগুলো করতে চাইনি। আইটেম গান করতাম শুধু একটাই কারণে, আমি বসুন্ধরায় ফ্লাট কিনেছিলাম। সেই টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করতাম। একটানা ২০ বছর আইটেম গানে কাজ করে কখনো ১৫-২০ হাজারের বেশি সম্মানি পাইনি। অশ্লীলতার সময় প্রযোজকরা কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে। বাধ্য হয়ে কাজ করেছি।”

১৯৯২ সালে ‘অগ্নিপথ’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন নাসরিন। অনেকে ‘লাভ’ সিনেমাকে তার অভিষেক চলচ্চিত্র বলে থাকেন। তারপর কৌতুক অভিনেতা টেলিসামাদের সঙ্গে জুটি বেঁধে আলোচনায় আসেন। তবে দিলদারের সঙ্গে জুটি বেঁধে নাসরিনের জনপ্রিয়তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন ৪৬ বছরের নাসরিন।   

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র আইট ম গ ন চলচ চ ত র প শ ক পর কর ছ ন র জন য করত ম

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ