ছোট পোশাক দেখেছে, কেউ আমার চোখের জল দেখেনি: নাসরিন
Published: 4th, April 2025 GMT
ঢাকাই সিনেমার অভিনেত্র্রী নাসরিন আক্তার নার্গিস। নাসরিন নামেই অধিক পরিচিত। তিন দশকের বেশি সময়ে অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। কৌতুক অভিনেতা হিসেবেও তার দর্শকপ্রিয়তা রয়েছে। অনেক আইটেম গানেও পারফর্ম করেছেন এই অভিনেত্রী।
চলচ্চিত্রের অনেক গানে ছোট পোশাকে দেখা গিয়েছে নাসরিনকে। টানা দুই দশক আইটেম গানে নেচেছেন। ছোট পোশাকে নাচের কারণে ‘অশ্লীলতার’ তকমা জুড়ে দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু চলচ্চিত্রের আইটেম গানে কীভাবে যুক্ত হলেন নাসরিন।
একটি সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে কথা বলেছেন নাসরিন। এ অভিনেত্রী বলেন, “কীভাবে যুক্ত হয়েছি, তা বলতে পারি না। আসলে দিলদার ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করার পর। সালমান ভাইয়ের একটা সিনেমা ছিল। সিনেমার নামটা মনে করতে পারছি না। স্বপ্না আপা নামে একজন ছিলেন, তার সঙ্গে গান করছিলাম। ওই গানের নাচের সময়ে অনেক ডিরেক্টর আমাকে দেখেন, তারপর পছন্দ করেন। তৎক্ষণাৎ আমাকে পারিশ্রমিক দেন। পোশাকের মাপ নেওয়ার লোক পাঠান। এভাবেই শুরুটা হয়।”
আরো পড়ুন:
আমরা সবাই খানিকটা লোভী: জয়া
সুপার পাওয়ার পেলে পরকীয়া বন্ধ করব: অপু
এরপর টানা আইটেম গানে পারফর্ম করেছেন। আপনার আইটেম গানের বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে নাসরিন বলেন, “আমি মেকআপ রুমে গিয়ে কান্না করতাম। কান্নার আওয়াজ যাতে বাইরে না যায়, এজন্য বেসিনের কল ছেড়ে রাখতাম। যখন ভালো কোনো দৃশ্য থাকত, তখন বলা হতো নিজে পোশাক নিয়ে আসবে। আর যখন আইটেম গানের শুটিং থাকত, তখন নির্মাতারা পোশাক বানাতেন।”
পোশাক নিয়ে আপত্তির কথা পরিচালক-প্রযোজককে জানাননি? এ প্রশ্নের জবাবে নাসরিন বলেন, “হাজার বললেও লাভ হতো না। কারণ তারা তো তাদের ব্যবসার কথা চিন্তা করতেন। এটা আপনি বাদ দেন। বর্তমানে যে পোশাক দেখছি, তাতে নিজেরই লজ্জা লাগে। আমরা শিল্পী কাজের জন্য ছোট পোশাক পরতাম। অভিনয় করতাম। এখন যে পোশাকে ক্যামেরার সামনে আসে, তারা কি অভিনয়ের জন্য আসে, কাজের জন্য আসে? এসব দেখে আমি নিজেও অনেক সময় লজ্জা পাই। আমার এসব কথা শুনে এখন অনেকে বলবেন, ‘ঢং করছে’। আসলে তা না। আপনাদের কাছেই প্রশ্ন রাখলাম। আমরা অভিনয়ের জন্য ছোট পোশাক পরেছি, সে নিয়ে সারা জীবনের জন্য সিল মেরে দেওয়া হলো।”
ছোট পোশাক পরার কারণে মানুষ ‘অশ্লীলতার’ সিল সেঁটে দেন। কিন্তু কষ্টের কান্না কেউ দেখেন না। এ তথ্য উল্লেখ করে নাসরিন বলেন, “কেউ আমার চোখের জল দেখেনি। আমার চিৎকার-কান্না কেউ শুনেনি। আমার পোশাকটাই দেখেছে। ক্যামেরার সামনে আমি যে অভিনয় করেছি, সেটা দেখেছে। এমনো হয়েছে একটি গানে যে পোশাক পরে নাচ করেছি, সেই পোশাক আমার ভালো লাগেনি। এ জন্য মানসিক যে যন্ত্রণা হয়েছে, তাতে দু-চার রাত আমি ঘুমাতে পারিনি। ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠেছি। শট নেওয়ার সময়ে অন্যভাবে নিতে বলতাম। কিন্তু নিতো না। কারণ আমি জানি, এত বড় স্ক্রিনে যখন দেখাবে তখন কেমন লাগবে!”
২০২২ সালে এক সাক্ষাৎকারে আইটেম গানে পারফর্ম করার কারণ ব্যাখ্যা করেছিলেন নাসরিন। এ অভিনেত্রী বলেছিলেন, “আইটেম গানগুলো করতে চাইনি। আইটেম গান করতাম শুধু একটাই কারণে, আমি বসুন্ধরায় ফ্লাট কিনেছিলাম। সেই টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করতাম। একটানা ২০ বছর আইটেম গানে কাজ করে কখনো ১৫-২০ হাজারের বেশি সম্মানি পাইনি। অশ্লীলতার সময় প্রযোজকরা কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে। বাধ্য হয়ে কাজ করেছি।”
১৯৯২ সালে ‘অগ্নিপথ’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখেন নাসরিন। অনেকে ‘লাভ’ সিনেমাকে তার অভিষেক চলচ্চিত্র বলে থাকেন। তারপর কৌতুক অভিনেতা টেলিসামাদের সঙ্গে জুটি বেঁধে আলোচনায় আসেন। তবে দিলদারের সঙ্গে জুটি বেঁধে নাসরিনের জনপ্রিয়তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন ৪৬ বছরের নাসরিন।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র আইট ম গ ন চলচ চ ত র প শ ক পর কর ছ ন র জন য করত ম
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি জমিতে সস্তায় সচিবদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ তদন্তে কমিটি, কার্যক্রম স্থগিত
সরকারি জমিতে সচিবসহ সরকারি কর্মকর্তাদের ফ্ল্যাট বরাদ্দের বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এহসানুল হককে। অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব।
তদন্ত কমিটি গঠনসংক্রান্ত আদেশ আজ রোববার প্রকাশ করা হয়েছে। ১৪ জুন প্রথম আলোয় ‘সরকারি জমিতে সস্তায় ফ্ল্যাট নেন সচিবেরা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান উল্লিখিত ফ্ল্যাট প্রকল্পের নির্মাণ এবং হস্তান্তর কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য সেতু বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের জানিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেন উপদেষ্টা। এ ছাড়া সচিবসহ কর্মকর্তাদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে তিন কার্যদিবসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে সেতু বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, সেতু বিভাগের অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন ও তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তদন্ত কমিটি গঠনের আদেশে কমিটির কার্যপরিধি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, কী পদ্ধতিতে, কিসের ভিত্তিতে এবং কাদের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করা হয়েছে, তা তদন্ত কমিটি নির্ধারণ করবে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে কি না, তা নির্ধারণ এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করবে। এ ছাড়া যাঁদের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কিংবা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ থেকে কোনো জমি বা ফ্ল্যাট পেয়েছেন কি না, তা–ও যাচাই করবে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটিকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করবে।
সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্বে (পিপিপি) ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য আবাসন নির্মাণের জন্য কেনা ৪০ একর জমি থেকে ১ দশমিক ১৫ একর জমি নিয়ে ৪টি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে আমলা ও কর্মচারীদের জন্য। এর মধ্যে তিনটি ভবন সচিব ও বড় আমলাদের জন্য। তাতে ১৬৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ইতিমধ্যে ১৪০টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ হয়ে গেছে। বাকিগুলো ভবিষ্যতে সচিব ও কর্মকর্তাদের মধ্যে বরাদ্দের চিন্তা রয়েছে বলে সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে। চারটির মধ্যে একটি ভবন রাখা হয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মচারীদের জন্য, যেখানে ফ্ল্যাট রয়েছে ১১২টি।
ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে উত্তরা মডেল টাউনে (তৃতীয় ধাপ), যা দিয়াবাড়ি এলাকা নামে পরিচিত। সেখানে বিভিন্ন সময় সেতু কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদে থাকা সচিবেরা ফ্ল্যাট নিয়েছেন। ফ্ল্যাট পেয়েছেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের প্রভাবশালী আমলারা। ফ্ল্যাট পাওয়া সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার সংখ্যা ৩২। তাঁদের মধ্যে চারজন চাকরিতে রয়েছেন, দুজন অবসরের পর বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে (এডিবি) সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন, বাকিরা অবসরে গেছেন। সচিবদের বাইরে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপসচিবসহ বিভিন্ন পদের কর্মকর্তারা পেয়েছেন ফ্ল্যাট।
সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ ঘনিষ্ঠরাও পেয়েছেন পানির দামের ফ্ল্যাট। যেসব কর্মকর্তা সচিব পদে থেকে এসব ফ্ল্যাট নিয়েছেন, তাঁদের অনেকের আবার রাজউকের প্লট রয়েছে। সরকারি পদে থেকে তাঁরা ঢাকায় জমি ও ফ্ল্যাট—দুটোই নিয়েছেন।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১০ সালে। এর আওতায় বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী পর্যন্ত উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প এখনো শেষ হয়নি।
আরও পড়ুনসরকারি জমিতে সস্তায় ফ্ল্যাট নিয়েছেন সচিবেরা, তালিকায় কারা রয়েছেন১৪ জুন ২০২৫