সৈকতে জেগে ওঠা কংক্রিট-জিও ব্যাগ পর্যটকদের গলার কাঁটা
Published: 5th, April 2025 GMT
কুয়াকাটায় সমুদ্র সৈকতের বুক চিরে জেগে উঠেছে পুরনো স্থাপনার অংশ বিশেষ। আর এ স্থাপনার বিম, কংক্রিট এবং শ্যাওলাযুক্ত জিও ব্যাগ এখন পর্যটকদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমুদ্রে গোসলে নেমে এসব জিও ব্যাগ এবং স্থাপনার অংশ বিশেষ পড়ে থাকার কারণে প্রতিনিয়ত আহত হচ্ছেন পর্যটকরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব কংক্রিট ও জিও ব্যাগ অপসারণের দাবি জানিয়েছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুয়াকাটা চৌরাস্তা থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল সৈকতের জিরো পয়েন্ট। কুয়াকাটাকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণার পর কিছু স্থাপনা নির্মাণ করে সরকার। পরে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে সৈকতে ভাঙন শুরু হয়। সেই সঙ্গে স্থাপনাগুলোও ভেঙে যায়।
এসব স্থাপনার অংশ বিশেষ অপসারণ করা হলেও মাটির নিচের স্থাপনার অংশ বিশেষ এখনও অপসারণ করা হয়নি। বর্তমানে বালুক্ষয়ে বেরিয়ে এসেছে এসব স্থাপনার বিম, কংক্রিট ও ঢালাই।
এদিকে ভাঙন রক্ষায় সৈকতের দুই কিলোমিটার এলাকায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এসব ব্যাগ ছিড়ে বালু বেরিয়ে এসেছে। অনেক জিও ব্যাগের উপর শ্যাওলা জমে পিছলা হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও জিও ব্যাগ সরে গিয়ে আবার ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিনিয়ত সৈকতে সাঁতার কাটতে নেমে জিও ব্যাগের শ্যাওলায় আছাড় খেয়ে পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছেন পর্যটকরা।
এছাড়া পুরনো স্থাপনার অংশ বিশেষ জোয়ারের পানিতে তলিয়ে থাকায় গোসলে নেমে মারাত্মক জখম হচ্ছেন। ঈদের ছুটিতে কুয়াকাটায় আসা অন্তত অর্ধশতাধিক পর্যটক গোসলে নেমে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পটুয়াখালীর কালিকাপুর থেকে আসা পর্যটক মো.
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক জাহিদ হোসেন বলেন, “পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমরা কুয়াকাটায় এসেছি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভালো লাগলেও সৈকতের অবস্থা খুবই খারাপ। যত্রযত্র বালু ভর্তি জিওব্যাগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পিছলা হয়ে রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে পুরনো স্থাপনার অংশবিশেষ জেগে উঠেছে। আপনার কংক্রিটে আমার ছেলে রইসুল (৮) মারাত্মক জখম হয়ছে। আর যে ব্যাগ থেকে পড়ে গিয়ে আমার বৃদ্ধ বাবা কোমরে ব্যাপক ব্যথা পেয়েছে।”
কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, “কুয়াকাটাকে পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণার পরে এলজিইডির বায়োগ্যাস প্লান্ট কাম রেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হয়েছিল। বর্তমানে যে স্থাপনার অংশবিশেষ বেরিয়ে এসেছে সেগুলো এ ভবনের। এর আগেও বেশ কিছু ভবনের অংশ বিশেষ বেরিয়ে এসেছিল। সেগুলো অপসারণ করা হয়েছে।”
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম বলেন, “পুরনো স্থাপনার অংশ বিশেষ এবং জিও ব্যাগ অপসারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। জিও ব্যাগগুলো যেহেতু পানি উন্নয়ন বোর্ড দিয়েছিল, এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”
ঢাকা/ইমরান/এস
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।
সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাটআজ সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, গতকাল সকালে তিনজন পর্যটক টিকিট কেটে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পরে জাহাজ না থাকায় ফিরে যান।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।
জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।
গত ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে কক্সবাজারের পথে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ