ঈদের দীর্ঘ ৯ দিনের ছুটি শেষে আজ রোববার দেশের শেয়ারবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে। অবশ্য শুরুটা হয়েছে কিছুটা দরপতনে, যা ছিল অনেকটাই প্রত্যাশিত।

গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেভাবে বিশ্বের সব দেশের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছেন, তার প্রেক্ষিতে তাঁর নিজ দেশসহ বিশ্বের প্রায় সব শেয়ারবাজারে দরপতন চলছে।

এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারেও দরপতনের আশঙ্কা করছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আশঙ্কার তুলনায় দরপতনের মাত্রা অনেক কম।

সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর আড়াই ঘণ্টা পর দুপুর সাড়ে ১২টায় ৯৬ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২৬৪টি দর হারিয়ে কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। এ সময় দর অপরিবর্তিত অবস্থায় কেনাবেচা হচ্ছিল ৩০টি।

এতে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ২৫ পয়েন্ট হারিয়ে ৫১৯৩ পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা গেছে। সূচক পতনের হার ছিল শূন্য দশমিক ৪৮৭ শতাংশ।

এটা স্বাভাবিক সময়েও সূচকে এমন পতন হয়। ফলে আজকের পতনে অস্বাভাবিক কিছু দেখছেন না বলে জানান শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।

বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, দরপতন বেশি হচ্ছে বস্ত্র খাতের শেয়ারে। এটা প্রত্যাশিত ছিল। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য বস্ত্র।

তবে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে এমন তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা কম। ফলে শেয়ারবাজারে ট্রাম্পের শুল্কারোপের তেমন প্রভাব পড়ার কারণ দেখছেন না কেউ।

তাছাড়া অতীতের মত এমন সংকটে বাংলাদেশের সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ বাণিজ্যে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতে ট্রাম্প বাংলাদেশের তুলনায় অধিক হারে শুল্কারোপ করেছেন।

তাছাড়া শুল্কারোপে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য মূল্য বাড়বে। বিশেষত উচ্চ মূল্যের পণ্যের ক্রয় চাহিদা কমে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে।

এর ফলে বাংলাদেশের উল্টো ব্যবসা বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। কারণ বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যগুলো কম মূল্যের ‘ব্যাসিক প্রোডাক্ট’। ২০০৮ এর মহামন্দায় এমন সুবিধা পেয়েছিল বাংলাদেশ।

এমন ভাবনার প্রতিফলন ছিল আজকের শেয়ারবাজারের লেনদেনে।

দিনের শেয়ার লেনদেন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সকাল ১০টায় দিনের লেনদেনের প্রথম মুহূর্তে প্রি-মার্কেট লেনদেনে ভর করে সূচক নামে কমে উল্টো সামান্য (শূন্য দশমিক ৬৭ পয়েন্ট) বেড়েছিল।

তবে স্বাভাবিক লেনদেন শুরুর প্রথম মিনিটে ১২ পয়েন্ট এবং দ্বিতীয় মিনিটে আরও প্রায় ৮ পয়েন্ট হারায় সূচকটি। এর ১২ মিনিট পর অর্থাৎ সকাল ১০টা ১৪ মিনিটে সূচকটি ৪৪ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট হারিয়ে ৫১৭৪ দশমিক ২০ পয়েন্টে নেমেছিল। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত লেনদেনে এটাই ছিল সূচকের সর্বোচ্চ পতন। অবশ্য এর পর সূচক কিছুটা পতন কাটিয়ে উঠেছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, মিউচুয়াল ফান্ড খাত ছাড়া বাকি সব খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর হারিয়েছে। তবে তুলনামূলক বেশি দর হারিয়েছে বস্ত্র খাতের শেয়ার।

যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপ ইস্যুতে বস্ত্র খাতেই সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক।

দুপুর সাড়ে ১২টায় এ খাতে তালিকাভুক্ত ৫৮ কোম্পানির মধ্যে ৫৬টি দর হারিয়ে কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। গড়ে দরপতন হয়েছিল প্রায় ৪ শতাংশ, যা খাতওয়ারি দরপতনের সর্বোচ্চ।

বস্ত্র খাতের বাইরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের দরপতনের হার ছিল ১ দশমিক ৪০ শতাংশ, সিমেন্ট খাতের শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ, তথ্য-প্রযুক্তি খাতের ১ শতাংশ, চামড়া খাতে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ উল্লেখযোগ্য।

বিপরীতে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের গড় দর ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়েছিল। সিরামিক খাতের দরবৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।

একক কোম্পানি হিসেবে দরপতনের শীর্ষে ছিল বস্ত্র খাতের শেয়ার। 

সর্বোচ্চ পৌনে ৭ শতাংশ দর হারিয়ে প্রাইম টেক্সের শেয়ার ১৪ টাকায় কেনাবেচা হতে দেখা গেছে।

৬ শতাংশের বেশি দর হারিয়ে এর পরের অবস্থানে থাকা শেয়ারগুলো ছিল- ইভিন্স টেক্সটাইল, এসক্যোয়ার নিট, সাফকো স্পিনিং, জেনারেশন নেক্সট, নিউ লাইন, ড্রাগন সোয়েটার, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ।

ঈদের দীর্ঘ ছুটির পর আজ লেনদেনের গতিও কম। প্রথম দুই ঘণ্টায় ডিএসইতে ১৮৫ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। ঈদের ছুটির আগের শেষ কার্যদিবসে একই সময়ে ২০০ কোটি টাকার বেশি শেয়ার কেনাবেচা হতে দেখা গেছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র দরপতন ল নদ ন শ র শ য় রব জ র দরপতন র র ল নদ ন দর হ র য় পতন র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

মায়ামির স্বপ্নভঙ্গ, ইতিহাস গড়লো ভ্যানকুভার এফসি

কনকাকাফ চ্যাম্পিয়নস কাপের রোমাঞ্চকর সেমিফাইনালে লিওনেল মেসি ও তার দল ইন্টার মায়ামিকে উড়িয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে নাম লিখিয়েছে কানাডার ক্লাব ভ্যানকুভার এফসি। বৃহস্পতিবার (বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টা), মায়ামির চেইস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে দর্শকদের উপহার দেওয়া হয় গোল, নাটক এবং ৩২টি ফাউলের নাটকীয় এক সন্ধ্যা।

প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে ২-০ গোলে জয় পেয়ে আগেই সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল ভ্যানকুভার। তাই দ্বিতীয় লেগে ইন্টার মায়ামির জন্য লক্ষ্যটা ছিল বেশ কঠিন, কমপক্ষে তিন গোলের ব্যবধানে জয়। কিন্তু সেই লক্ষ্য অধরাই থেকে গেল। উল্টো ৩-১ গোলের হার সইতে হলো ডেভিড বেকহ্যামের মালিকানাধীন দলটিকে। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ ব্যবধানে উড়েই ফাইনালে উঠে যায় কানাডার ক্লাবটি।

ম্যাচের শুরুটা অবশ্য ইন্টার মায়ামির জন্য আশা জাগানিয়া ছিল। নবম মিনিটেই মেসি ও সুয়ারেজের দারুণ কম্বিনেশনের ফসল হিসেবে জর্ডি আলবা গোল করে এগিয়ে দেন দলকে। প্রথমার্ধ শেষে ১-০ গোলের লিডে এগিয়ে ছিল স্বাগতিকরা।

আরো পড়ুন:

দুয়োতে ম্যাচ হেরে কনফাকাফ থেকে বিদায়ের শঙ্কায় মেসিরা

২০২৬ বিশ্বকাপ খেলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানালেন মেসি

কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে শুরু থেকেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাঠে নামে ভ্যানকুভার। ম্যাচের ৫১ মিনিটে ব্রেইন হোয়াইট গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান। এরপর মাত্র দুই মিনিটের ব্যবধানে ইন্টার মায়ামির রক্ষণভাগের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যান পেদ্রো ভিতে। এরপর ম্যাচে ফিরে আসার অনেক চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি মেসির দল।

৭১ মিনিটে ভ্যানকুভারের হয়ে তৃতীয় ও শেষ গোলটি করেন সেবাস্তিয়ান বারহেল্টার। যা ম্যাচের নিয়তি নির্ধারণ করে দেয়। এরপর ইন্টার মায়ামি একাধিকবার আক্রমণ করলেও প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক ও শক্ত রক্ষণদেয়াল ভাঙতে ব্যর্থ হয়।

ম্যাচটিতে দুই দলই ১৬টি করে ফাউল করে। যা মিলিয়ে মোট ফাউলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩২। ইন্টার মায়ামি ১৭টি শট নেয়, যার মধ্যে ৬টি ছিল অন টার্গেটে এবং মাত্র একটিই জালে ঠাঁই পায়। অন্যদিকে, ভ্যানকুভারের ১০টি শটের ৬টিই লক্ষ্যে ছিল এবং এর মধ্যে তিনটি জালে জড়ায়।

এই হারের ফলে কনকাকাফ চ্যাম্পিয়নস কাপের ফাইনালে খেলার স্বপ্নভঙ্গ হলো মেসি-সুয়ারেজদের। আর ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালের টিকিট কাটলো ভ্যানকুভার এফসি।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ