ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্প্রিং স্কুল আয়োজন কুমিল্লার বার্ডে
Published: 8th, April 2025 GMT
তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের শিল্পকারখানায় শ্রমিকদের জন্য উন্নত পরিবেশ ও কর্মক্ষেত্র তৈরির গুরুত্ব অনেক। এ বিষয়ে সরকার ও উন্নয়ন সংস্থার পাশাপাশি তরুণ পেশাজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও শিল্পক্ষেত্রে যুক্ত পেশাজীবীদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসির (সিবিপি) আয়োজনে গতকাল সোমবার থেকে কুমিল্লার পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) মিলনায়তনে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
‘স্প্রিং স্কুল অন বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ শীর্ষক এই কর্মশালায় দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণকে পেশাজীবী, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। স্প্রিং স্কুলের সহযোগিতায় রয়েছে জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), বাংলাদেশের ডেনমার্ক দূতাবাস, সুইডিশ সরকার ও ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল সলিডারিটি (আইজেএস)।
প্রশিক্ষণের প্রথম দিনের উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি তাঁর বক্তব্যে ব্যবসা ও মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির গুরুত্ব এবং দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণ প্রতিষ্ঠায় শিক্ষা ও গবেষণার ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক পরিবেশ থাকা প্রয়োজন। এ বিষয়ে শিল্প খাত–সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ থাকা প্রয়োজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি সামগ্রিকভাবে দেশের কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ উন্নয়নের জন্য প্রথমবারের মতো এই স্প্রিং স্কুল আয়োজন করেছে। এ স্কুলের কার্যক্রমের সঙ্গে বিভিন্ন দাতা সহযোগীরা যুক্ত আছেন বলে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ পাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইএলও বিশেষজ্ঞ জোসি লাপোর্তে, টেকনিক্যাল কর্মকর্তা চয়নিচ থাম্পারিপাত্রা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক কৃষ্ণ কুমার সাহা। কৃষ্ণ কুমার সাহা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার বাইরে পেশাজীবীদের দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে এমন স্কুল আয়োজন করা হচ্ছে। পশ্চিমা দেশে এমন কার্যক্রম নিয়মিত হলেও বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এমন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ব্যবসা খাত–সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী, গবেষক ও আগামীর পেশাজীবীদের দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে এমন আয়োজন করছি আমরা।’
স্প্রিং স্কুলের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সেশনের দায়িত্বশীল ব্যবসা, টেকসই উন্নয়ন ও করপোরেট জবাবদিহি বিষয়ে কার্যকর আলোচনা করা হবে। প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি ১১ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।
সামগ্রিকভাবে এ ধরনের আয়োজন দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থী, গবেষক, নীতিনির্ধারক ও উন্নয়নকর্মীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করছে বলে আয়োজকেরা জানান। অংশগ্রহণকারীরা ব্যবসায়িক খাতে মানবাধিকারের বাস্তবায়ন ও ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণে সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ ও করণীয় বিষয়ে গভীরতর ধারণা দিতেই এমন স্কুল দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সব মাধ্যমে কাজ করতে চান জৌপারী
২০১০ সালে ঢাকায় এসেছেন বান্দরবানের মেয়ে জৌপারী লুসাই। পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন, ঘুণাক্ষরেও অভিনয়ে আসার কথা ভাবেননি। ২০১২ সালে এনটিভির টেলিফিল্ম শেষ বলে কিছু নেই দিয়ে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান জৌপারী। তখন বিএএফ শাহীন কলেজে পড়তেন। এক বন্ধুর কাছে শুনলেন টেলিফিল্মে এক কিশোরী চরিত্রের জন্য শিল্পী খুঁজছেন নির্মাতা মেজবাউর রহমান। পরে অডিশন দিয়ে টিকে যান।
নিজেকে প্রথমবার ছোট পর্দায় দেখে রীতিমতো আপ্লুত হয়েছিলেন। সেই সময়ের অনুভূতিকে অনেকটা ‘প্রথম প্রেমে পড়ার’ মতো বললেন এই তরুণ অভিনেত্রী। টেলিফিল্মটি প্রচারের পর পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছিলেন, যেটি তাঁকে অভিনয়ে অনুপ্রাণিত করেছে।
‘রেহানা মরিয়ম নূর’ থেকে ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের আলোচিত সিনেমা রেহানা মরিয়ম নূর-এ মিমি চরিত্রে অভিনয় করে নজর কেড়েছেন জৌপারী। এটি ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা হিসেবে কান চলচ্চিত্র উৎসবের ‘আঁ সার্তে রিগা’ বিভাগে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান খেলনাছবির বিজ্ঞাপন করেছিলাম, সেখানে নির্মাতা সাদ ভাইও ছিলেন।’ খেলনাছবির সূত্র ধরেই সিনেমাটিতে কাজের সুযোগ পান তিনি। ২০১৭ সালে সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হন, ২০১৮ সালে শুটিং করেন।
জৌপারী লুসাই বলেন, ‘সিনেমাটি করার আগে অভিনয় নিয়ে খুব একটা বুঝতাম না। সিনেমাটি করার পর অভিনয়কে সিরিয়াসলি নিই। তখন মনে হয়েছিল অভিনয় চালিয়ে যাব। সঙ্গে অভিনয় শিখবও।’
বঙ্গ অরিজিনাল সিরিজ বিএনজি-তে অভিনয় করে তরুণ দর্শকের কাছে পৌঁছেছেন জৌপারী। আরেক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র সারভাইভ-এও মূল চরিত্রে দেখা গেছে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘বিএনজি ও সারভাইভ দুটি কাজের জন্যই খুব ভালো রেসপন্স পেয়েছি। দুটি কাজ দেখে অনেকে আমাকে চিনেছেন।’
প্রায় এক যুগের ক্যারিয়ারে কোন কাজটিকে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলবেন? জৌপারী বলেন, ‘আসলে এটা আমার পক্ষে বলা কঠিন। প্রতিটা কাজই মন থেকেই করি। আমি কাজ করে যেতে চাই, কাজটাকে ভালোবাসি।’
এর মাঝে অভিনয়ে নিজেকে শাণিত করতে নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ জামিল আহমেদের কর্মশালায় অংশ নেন জৌপারী। জামিল আহমেদ নির্দেশিত আমি বীরাঙ্গনা বলছি-এ একজন নির্যাতিতা পাহাড়ি নারীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি।
‘পারফেক্ট ওয়াইফ’ ইরা
২২ অক্টোবর মুক্তি পাওয়া চরকির ফ্ল্যাশ ফিকশন পারফেক্ট ওয়াইফ-এ একজন জাপানি তরুণী ইরার চরিত্রে অভিনয় করেছেন জৌপারী। ফিকশনটি পরিচালনা করেছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। ফিকশনটি মুক্তির পর ভালো সাড়া পাচ্ছেন জানিয়ে জৌপারী বলেন, ‘আমার পরিচিতদের মধ্যে যাঁরা কাজটা দেখেছেন, তাঁরা সবাই চরিত্রটা পছন্দ করেছেন। অনেকে বলেছেন, তুমি রোবট না মানুষ।’
সেলিমের পরিচালনায় এবারই প্রথম কাজ করেছেন তিনি। কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক ভালো। কারণ, উনি আসলে অ্যাক্টিংটাকে দারুণভাবে ডিল করেন। খুবই আরাম করে আমি কাজ করেছি। অভিনয়ের ক্ষেত্রে পরিচালক অনেক ম্যাটার করে। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ যে রকম আমাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন, যেভাবে ইচ্ছা তুমি করো, ঠিক একইভাবে আমি বলব যে এই চরিত্রটা (ইরা) করতে গিয়ে আমি আমার মনে হয়েছে যে আমি আরও বেশি এনজয় করেছি।’
সব মাধ্যমে কাজ করতে চান
ওটিটি, প্রেক্ষাগৃহের সিনেমা থেকে টিভি নাটক—সব মাধ্যমেই কাজ করেছেন জৌপারী। তিনি বলেন, ‘টিভি হোক, ওটিটি হোক কিংবা সিনেমা—সব মাধ্যমেই অভিনয় করতে চাই।’
ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমা রেহানা মরিয়ম নূর-এর পর আর কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। মাঝে এনামুল করিম নির্ঝরের একটি সিনেমার কাজ শেষ করেছেন, তবে সিনেমাটি এখনো মুক্তি পায়নি।
অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিতে চান জানিয়ে জৌপারী বলেন, ‘আমি অভিনয়ের কোন স্টেজে আছি, জানি না। তবে অভিনয়টা আমার প্রফেশন। আমার প্যাশনের জায়গাও। আমি এটা সারা জীবন করে যেতে চাই।’
সামনে কী করছেন? তিনি বলেন, এখনো কোনো কাজ চূড়ান্ত হয়নি, তবে কিছু কাজের কথাবার্তা চলছে। যদি সবকিছু কনফার্ম হয়, তাহলে তো সামনের বছর দেখা যেতে পারে।
জৌপারী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিডিয়া স্টাডিজ ও জার্নালিজমে পড়াশোনা করেছেন।