মার্চে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ছিল এযাবৎকালের সর্বোচ্চের কাছে: ইউরোপের পর্যবেক্ষক সংস্থা
Published: 8th, April 2025 GMT
বৈশ্বিক তাপমাত্রা গত মার্চে আগের যেকোনো সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাছাকাছি ছিল। ইউরোপের জলবায়ু পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আজ মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে। ওই মাসে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কার চেয়ে বেশি সময় ধরে বিশ্বজুড়ে প্রচণ্ড তাপমাত্রা ছিল।
কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস জানিয়েছে, মার্চ ছিল ইউরোপে এযাবৎকালের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস। ওই সময় বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় ইউরোপজুড়ে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। আবার তাপমাত্রাও খুব দ্রুত উত্তপ্ত হতে দেখা গেছে।
কোপার্নিকাসের তথ্যমতে, ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উষ্ণতম মাস ছিল মার্চ। ২০২৩ সালের পর থেকে তাপমাত্রা প্রায় ধারাবাহিকভাবে একের পর এক রেকর্ড ভাঙছে। তখন থেকে কার্যত প্রতি মাসে শিল্পবিপ্লবের আগের তুলনায় কমপক্ষে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২ দশমিক ৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রা বেড়েছে।
শিল্পবিপ্লবের পরে মানবজাতি প্রচুর পরিমাণে কয়লা, তেল ও গ্যাস পোড়ানো শুরু করে। এ বিষয়টি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে।
মার্চের তাপমাত্রা প্রাক্–শিল্প যুগের চেয়ে ১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২ দশমিক ৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেশি ছিল। ওই মাসে লম্বা সময় ধরে অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় থাকার কারণ এখনো খুঁজে পাননি বিজ্ঞানীরা।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শুধু তাপমাত্রাই বাড়ে না; বরং কার্বন ডাই–অক্সাইড ও মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাসের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল ও সমুদ্রে অতিরিক্ত তাপ আটকা পড়ে।
আর উষ্ণ সমুদ্রের অর্থ হলো বাষ্পীভবন বৃদ্ধি ও বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতা বৃদ্ধি। এর ফলে ব্যাপক বন্যা হয়। ঝড় ও ঘূর্ণিঝড় আরও শক্তি সঞ্চয় করতে সক্ষম হয়। তবে এটি বিশ্বব্যাপী বৃষ্টির ধরনকেও প্রভাবিত করে।
কোপার্নিকাস জানিয়েছে, ইউরোপে মার্চের তাপমাত্রা ২০১৪ সালের রেকর্ড তাপমাত্রার চেয়ে দশমিক ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস (দশমিক ৪৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেশি ছিল।
কোপার্নিকাস জলবায়ু পর্যবেক্ষণকারী ইউরোপীয় সেন্টার ফর মিডিয়াম–রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্টের সামান্থা বার্গেস বলেন, মার্চে ইউরোপের কিছু অংশে প্রায় অর্ধশতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে শুষ্ক আবহাওয়া রেকর্ড করা হয়েছে। আবার অন্য অংশে সবচেয়ে আর্দ্র আবহাওয়া রেকর্ড করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমান সময় সম্ভবত গত ১ লাখ ২৫ হাজার বছরের মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ সময়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লাখপুরের রংবাহারি রাম্বুটান
১৯ জুলাই সকাল ১০টা। নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মরজাল বাজারে গাড়ি থেকে নামলাম। ততক্ষণে ব্যাপারীদের পাইকারি কেনাকাটা শেষ। মালপত্র বেঁধেছেঁদে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। কিন্তু ফুটপাতে তখনো ভিড়। খুচরা ক্রেতারা পছন্দের জিনিস কিনতে দরদাম করছেন। ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়লাম, দেখা যাক কী পাওয়া যায়।
কাঁঠালের দোকানে তেমন ভিড় নেই। লটকনের দোকান বেশি, বিক্রিও ভালো। আকার অনুযায়ী দাম। এখানে না এলে জানতামই না, এত বড় আকারের লটকন হতে পারে! এক গৃহস্থ টুকরিতে কলম্বো লেবু নিয়ে বসে আছেন। এই লেবু আকৃতি ও সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে থামতেই হলো। কয়েকটি দোকানে সাজানো হলুদ আর লাল রঙের রাম্বুটান!
দেখতে ফুলের মতো আকর্ষণীয় রঙের এই ফল সবার নজর কাড়ছে। ক্রেতারা দাম জানতে চাইছেন। কেউ কেউ কিনছেনও। জানতে চাইলাম, এই রাম্বুটান কোথা থেকে এল? দোকানির উত্তর শুনে চোখ ছানাবড়া। নরসিংদীর কয়েকটি গ্রামেই নাকি ইদানীং চাষ হচ্ছে রাম্বুটান। দারুণ ব্যাপার। এ খবর জানা ছিল না।
কাছাকাছি দূরত্বে কোনো গ্রামে গেলে কি রাম্বুটানের বাগান দেখতে পাওয়া যাবে? এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা মো. সুজন মিয়া। তিনি জানালেন,Ñকাছেই বেলাব উপজেলার লাখপুর গ্রামে চমৎকার একটি বাগান আছে।
আমরা দ্রুত বাগানের পথ ধরি। বাগানে যেতে যেতে মনে হলোÑ ঘন গাছপালার ছাউনির ভেতর দিয়ে ক্রমেই যেন হারিয়ে যাচ্ছি! এখানকার বেশির ভাগ গাছই লটকনের। বাগানগুলো এতই বড় যে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ভালোভাবে দেখা যায় না।
অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেলাম লাখপুর গ্রামে। উয়ারী ও বটেশ্বর–লাগোয়া এই গ্রামে রাম্বুটানের বাগানে গিয়ে চমকে উঠি। বেশ বড় বড় অনেক গাছ। গাছে গাছে দুই রঙের রাম্বুটান। চমৎকার দৃশ্য।
এ রংবাহারি ফল দেখার জন্য সারা দিন অনেক মানুষ ভিড় করেন সেখানে। কেউ কেউ দেখছেন, আবার কিনছেনও। একটু সময় নিয়ে বাগানটি ঘুরে দেখি। ছয়-সাত বছর বয়সী সব গাছই ফলভারে আনত। পাকা ফলগুলো দেখতে রঙের ঝরনাধারার মতো, বহুবর্ণিল। বাগান থেকে তরতাজা কিছু ফল কিনি। মন ভরে ছবি তুলি।
একসময় রাম্বুটান চিনতাম না। ২০০৫ সালে হংকংয়ে বেড়াতে গিয়ে বন্ধু মোস্তাফিজুর রহমান শাহিনের বাসায় প্রথম এ ফল খাই। পরে কুয়ালালামপুর শহরের আশপাশে রাম্বুটানের অনেক গাছ দেখেছি। দুই বছর পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে গাছভর্তি রাম্বুটান দেখে চমৎকৃত হয়েছিলাম। বীজ থেকে তৈরি চারাগুলো সেখানে প্রথম লাগানো হয় ১৯৯৮ সালে। প্রায় সাত বছর পর গাছগুলোতে ফল আসতে শুরু করে। আকৃতি ও স্বাদের দিক থেকেও ফলগুলো সমমানের।
বাগানে সুদর্শন হলুদ রঙের রাম্বুটান