চট্টগ্রামে ডিসি হিলের বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ঘিরে অনিশ্চয়তা
Published: 8th, April 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের ডিসি হিলে বাংলা বর্ষবিদায় ও বরণের অনুষ্ঠান প্রায় অর্ধশত বছরের ঐতিহ্য। সামরিক সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেও এখানে উৎসবে মেতেছিল নগরবাসী। এবার বর্ষবরণের অনুষ্ঠানটি ৪৮ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। তবে ঐতিহ্যের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অনুষ্ঠানের পাঁচ দিন বাকি থাকলেও এখনো জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেলেনি অনুমতি।
গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিবেদন ‘পজিটিভ’ নয় বলে এখনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। আজ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় বিষয়টি বর্ষবিদায় ও বরণ উৎসবের আয়োজকদের জানানো হয়।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন পরিষদ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের অনুমতি চেয়ে আবেদন জানায় জেলা প্রশাসক বরাবর। আজ বেলা সাড়ে তিনটায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল কর্মকর্তা সৈয়দ আয়াজ মাবুদ, উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক অলক ঘোষ, সমন্বয়ক সুচরিত দাশ, সদস্যসচিব মো.
সভায় শিল্পকলা একাডেমিতে সরকারিভাবে প্রতিবারের মতো এবারও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। আয়াজ মাবুদ এ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
ডিসি হিলের পয়লা বৈশাখ আয়োজনের পটভূমি তুলে ধরেন আয়োজক পরিষদের নেতারা। আলোচনার শুরু থেকে ডিসি হিলের অনুষ্ঠান নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব দেখা যায় বলে আয়োজক সংগঠকদের অভিযোগ।
সভা সূত্র জানায়, এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংস্থার প্রতিবেদনের বিষয় উল্লেখ করে ডিসি হিলে অনুষ্ঠান না করার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি সিআরবিতে বড় অনুষ্ঠানের বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
জানতে চাইলে উদ্যাপন পরিষদের সদস্যসচিব মো. আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ডিসি হিলের অনুষ্ঠানের ঐতিহ্যের দিকটি তুলে ধরি। এরপর আমরা অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতিচর্চার ইতিহাসও স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। ডিসি হিলের উৎসবের অনেক পর থেকে সিআরবিতে বর্ষবরণ হচ্ছে বলে জানাই। যদি ডিসি হিলে অনুমতি না দেওয়া হয়, তাহলে তা ডিসির ওপর দায় আসতে পারে বলেও আমরা জানিয়েছি।’
আয়োজকেরা জানান, জেলা প্রশাসনের এমন মনোভাবের পর পরে তাঁরা দুই দিনের অনুষ্ঠানের স্থলে এক দিন করার বিষয়টি জানান। এ ছাড়া সকাল থেকে বিকেল চারটার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করারও অঙ্গীকার করেন। এরপর জেলা প্রশাসক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংস্থার প্রতিবেদন যাচাই করে দু-এক দিনের মধ্যে অনুমতির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে জানান।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমকে কল করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ডিসি হিলের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন পজিটিভ নয়। ঝামেলার আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। তাই আয়োজকদের পজিটিভ কিছু বলা হয়নি। সবকিছু বিবেচনা করে দু-এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীরা জানান, ডিসি হিলের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান দুই দিনব্যাপী হয়ে আসছে। বর্ষবিদায়ের দিন বিকেলে অনুষ্ঠান শুরু হয়। বরণের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠান হয়। করোনার সময়ের দুই বছর ছাড়া শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এখানে অনুষ্ঠান হয়েছে।
এ বিষয়ে সমন্বয়ক সুচরিত দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এরশাদ সরকারের আমলে রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আমরা বর্ষবিদায় ও বরণের অনুষ্ঠান করেছি। এখন আমাদের অনুমতি দিতে গড়িমসি করা হচ্ছে। এটা কোনোভাবে কাম্য নয়। এ ধরনের নেতিবাচক সিদ্ধান্ত চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীরা মেনে নেবে না।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র অন ষ ঠ ন অন ষ ঠ ন র বরণ র
এছাড়াও পড়ুন:
সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের ৪৫% রাজনৈতিক
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত ভুল তথ্য ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এ সময়ে যাচাই করা ভুল তথ্যের ৪৫ শতাংশই ছিল রাজনৈতিক। গতকাল বুধবার তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত ভুল তথ্য ছিল ১ শতাংশ। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে তা বেড়ে ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সংখ্যার হিসাবে গত প্রান্তিকে এ ধরনের ভুল তথ্য ছিল মাত্র ১১টি। সেটি এ বছরের প্রথম তিন মাসে সাত গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭টিতে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশ-সংশ্লিষ্ট আটটি ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পেয়েছে ডিসমিসল্যাব।
সংস্থাটির গবেষণায় দেখা গেছে, জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠানগুলো ১ হাজার ২৩৬টি তথ্য যাচাইয়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র ভুল তথ্য পাওয়া গেছে ৮৬৭টি, যা আগের প্রান্তিকে রেকর্ড করা ৮১৬টির তুলনায় কিছুটা বেশি। ভুল তথ্যের প্রায় অর্ধেকই (৪৫ শতাংশ) রাজনীতি সম্পর্কিত ছিল। এর পর ছিল ধর্ম-সংক্রান্ত ভুল তথ্য (১৩ শতাংশ), যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় সামান্য কম।
অপরাধ-সম্পর্কিত ভুল তথ্য বেড়েছে
বছরের প্রথম তিন মাসে প্রচারিত খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই ও ডাকাতি-সংক্রান্ত খবর ছিল ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনা ছিল ভারতের, যা বাংলাদেশের বলে ভুলভাবে প্রচার করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে একটি ইউটিউব চ্যানেলে হোটেল থেকে লাফিয়ে পড়া এক ভিডিও প্রচার করে বাংলাদেশের বলে দাবি করা হয়, কিন্তু সেটি ছিল মূলত ইন্দোনেশিয়ার।
রাজনৈতিক ভুল তথ্য
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে যাচাই করা ভুল তথ্যের ৪৫ শতাংশই রাজনৈতিক। আগের বছরও রাজনীতি-সংক্রান্ত ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ (৩৪.৮ শতাংশ) ও অন্তর্বর্তী সরকারকে (২১.৮ শতাংশ) নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। তবে আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে প্রচারিত ভুল তথ্যগুলোর অধিকাংশই (৬৮ শতাংশ) ছিল ইতিবাচক। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপি, জামায়াত-শিবির ও সমন্বয়কদের নিয়ে ছড়ানো অধিকাংশ ভুল তথ্য ছিল নেতিবাচক।
ধর্ম-সংক্রান্ত ভুল তথ্য
ধর্ম-সম্পর্কিত ভুল তথ্যের সংখ্যা সর্বশেষ প্রান্তিকে কিছুটা কমেছে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে ধর্ম-সংক্রান্ত ভুল তথ্যের পরিমাণ ছিল মোট যাচাইকৃত ভুল তথ্যের ১৮ শতাংশ, যা চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশে। তবে এর ধরন ছিল একই রকমের। যেমন, পুরোনো বা সম্পাদিত ছবি-ভিডিও সাম্প্রতিক বলে প্রচার করা।
বেড়েছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভুল তথ্য
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভুল তথ্যের পরিমাণ বাড়তে দেখা গেছে। ২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভুল তথ্য নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল ২৭টি ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন। সেখানে এ বছরের প্রথম তিন মাসে এই সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪টিতে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব ভুল তথ্যের ২৪ শতাংশ ছিল রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট।