চট্টগ্রাম নগরের ডিসি হিলে বাংলা বর্ষবিদায় ও বরণের অনুষ্ঠান প্রায় অর্ধশত বছরের ঐতিহ্য। সামরিক সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেও এখানে উৎসবে মেতেছিল নগরবাসী। এবার বর্ষবরণের অনুষ্ঠানটি ৪৮ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। তবে ঐতিহ্যের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অনুষ্ঠানের পাঁচ দিন বাকি থাকলেও এখনো জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেলেনি অনুমতি।

গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিবেদন ‘পজিটিভ’ নয় বলে এখনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। আজ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় বিষয়টি বর্ষবিদায় ও বরণ উৎসবের আয়োজকদের জানানো হয়।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন পরিষদ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের অনুমতি চেয়ে আবেদন জানায় জেলা প্রশাসক বরাবর। আজ বেলা সাড়ে তিনটায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল কর্মকর্তা সৈয়দ আয়াজ মাবুদ, উদ্‌যাপন পরিষদের আহ্বায়ক অলক ঘোষ, সমন্বয়ক সুচরিত দাশ, সদস্যসচিব মো.

আলী প্রমুখ।

সভায় শিল্পকলা একাডেমিতে সরকারিভাবে প্রতিবারের মতো এবারও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। আয়াজ মাবুদ এ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

ডিসি হিলের পয়লা বৈশাখ আয়োজনের পটভূমি তুলে ধরেন আয়োজক পরিষদের নেতারা। আলোচনার শুরু থেকে ডিসি হিলের অনুষ্ঠান নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব দেখা যায় বলে আয়োজক সংগঠকদের অভিযোগ।

সভা সূত্র জানায়, এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংস্থার প্রতিবেদনের বিষয় উল্লেখ করে ডিসি হিলে অনুষ্ঠান না করার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি সিআরবিতে বড় অনুষ্ঠানের বিষয়টিও উল্লেখ করেন।

জানতে চাইলে উদ্‌যাপন পরিষদের সদস্যসচিব মো. আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ডিসি হিলের অনুষ্ঠানের ঐতিহ্যের দিকটি তুলে ধরি। এরপর আমরা অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতিচর্চার ইতিহাসও স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। ডিসি হিলের উৎসবের অনেক পর থেকে সিআরবিতে বর্ষবরণ হচ্ছে বলে জানাই। যদি ডিসি হিলে অনুমতি না দেওয়া হয়, তাহলে তা ডিসির ওপর দায় আসতে পারে বলেও আমরা জানিয়েছি।’

আয়োজকেরা জানান, জেলা প্রশাসনের এমন মনোভাবের পর পরে তাঁরা দুই দিনের অনুষ্ঠানের স্থলে এক দিন করার বিষয়টি জানান। এ ছাড়া সকাল থেকে বিকেল চারটার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করারও অঙ্গীকার করেন। এরপর জেলা প্রশাসক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংস্থার প্রতিবেদন যাচাই করে দু-এক দিনের মধ্যে অনুমতির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে জানান।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমকে কল করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ডিসি হিলের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন পজিটিভ নয়। ঝামেলার আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। তাই আয়োজকদের পজিটিভ কিছু বলা হয়নি। সবকিছু বিবেচনা করে দু-এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীরা জানান, ডিসি হিলের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান দুই দিনব্যাপী হয়ে আসছে। বর্ষবিদায়ের দিন বিকেলে অনুষ্ঠান শুরু হয়। বরণের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠান হয়। করোনার সময়ের দুই বছর ছাড়া শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এখানে অনুষ্ঠান হয়েছে।

এ বিষয়ে সমন্বয়ক সুচরিত দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এরশাদ সরকারের আমলে রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আমরা বর্ষবিদায় ও বরণের অনুষ্ঠান করেছি। এখন আমাদের অনুমতি দিতে গড়িমসি করা হচ্ছে। এটা কোনোভাবে কাম্য নয়। এ ধরনের নেতিবাচক সিদ্ধান্ত চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীরা মেনে নেবে না।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র অন ষ ঠ ন অন ষ ঠ ন র বরণ র

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে এনসিপির অনেকের জীবননাশের হুমকি ছিল, আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগ করা হয়েছে

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অনেকের জীবননাশের হুমকি ছিল বলে জানিয়েছে সেনা সদর। তারা বলেছে, সেই ব্যক্তিদের জীবন বাঁচানোর জন্যই সেনাবাহিনী সহায়তা করেছে। আত্মরক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়েছে। এখানে জীবন বাঁচানোই মূল লক্ষ্য ছিল, অন্য কিছু নয়।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সেনা সদরের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলা হয়েছে। ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস-এ-তে অনুষ্ঠিত এই ব্রিফিংয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা এবং সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, ‘প্রত্যেকটি জীবন মূল্যবান। যেকোনো কারণেই হোক, কোনো জীবনহানি ঘটবে এটা আমরা আশা করি না। গোপালগঞ্জে যে ঘটনাটি ঘটেছে, এটা অবশ্যই দুঃখজনক। কিন্তু কোন প্রেক্ষাপটে ঘটেছে, কেন সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলপ্রয়োগ করতে হয়েছে, সে ব্যাপারেও সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর তৎপরতাসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, ‘কোনো দলকে নয়, কোনো ব্যক্তিকে নয়, বরং যাদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে, সেটি বিবেচনা করেই তাদেরকে উদ্ধার করেছি। ইতিপূর্বেও একই কাজ করেছি। কোনো দল নয়, জীবন রক্ষার্থেই এই কাজটি করতে হয়েছিল।’

নাজিম-উদ-দৌলা আরও বলেন, সেনাবাহিনীর আয়ত্তের ভেতরে আছে, কাছাকাছি বা দায়িত্বের ভেতরে আছে এমন সময় কারও জীবন বিপন্ন হবে, এ সময় সেনাবাহিনী চুপ থাকতে পারে না। এ ক্ষেত্রে যে কারও বিষয়ে আমাদের অবস্থান একই। ‘সিনিয়র লিডারশিপের’ (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের) নির্দেশনা একইভাবে দেওয়া। কোনো একটা জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে, এ সময় তাকে মৃত্যুর মুখে রেখে বা তার প্রতি নজর না দিয়ে সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। অবশ্যই সেনাবাহিনীর জন্য জীবন রক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই কাজটিই করেছি এবং করব।

সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক বলেন, ‘একটা বিপৎসংকুল সময় আমরা পার করছি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সবার সহযোগিতা দরকার। আমরা যেন সম্মিলিতভাবে কাজ করে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারি।’

গোপালগঞ্জের ঘটনার বিষয়ে আগাম কোনো তথ্য ছিল কি না, থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া গেল না কেন—এসব বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। জবাবে সেনা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যেকোনো রাজনৈতিক দল কোথায় তাদের সভা, সমাবেশ বা বৈঠক করবে এটা মূলত স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়। এ বিষয়ে তারা জানত, আমাদের কাছে আগাম কোনো তথ্য ছিল না।’

গোপালগঞ্জে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল স্টাফ কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ছিল। যেখানে শুধু ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়নি, ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। সেখানে জীবননাশের হুমকি ছিল। তখন আত্মরক্ষার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলপ্রয়োগ করতে বাধ্য হয়েছে। এখানে প্রাণঘাতী কোনো অস্ত্রের ব্যবহার করা হয়নি।’

এনসিপির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এক সাংবাদিক জানতে চান একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর বিশেষ কোনো দুর্বলতা আছে কি না—জবাবে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশেষ কোনো দলের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর আলাদা কোনো নজর নেই। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সবাই সমান। তবে যেখানে জনদুর্ভোগ ও জীবননাশের হুমকি থাকে সেখানে সেনাবাহিনী কঠোর হয়। জনসাধারণকে সহায়তা করে থাকে। সেখানে (গোপালগঞ্জ) সেনাবাহিনী যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করত, তাহলে আরও হতাহত বা জীবননাশের শঙ্কা থাকত। সেই হিসেবে সেনাবাহিনী সেটা করেছে।’

সেনা সদরের ব্রিফিংয়ে কথা বলেন সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেস-এ-তে এই ব্রিফিং হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউনিয়ন পরিষদে তালা দেয়ায় বিএনপি নেতা আটক
  • গোপালগঞ্জে এনসিপির অনেকের জীবননাশের হুমকি ছিল, আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগ করা হয়েছে
  • জুলাইয়ের ১১ নাটক নিয়ে শিল্পকলায় উৎসব
  • ১৬ কোটি টাকায় সারা দেশে ফুটবলের তিন টুর্নামেন্ট
  • দুদিনের সফরে কলকাতায় ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু
  • ভৌতিক গল্প নিয়ে কানাডায় নুহাশ
  • তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন
  • সিডনিতে ড্র অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কেউ না থাকায় হতাশ প্রবাসীরা
  • ‘মুক্তির উৎসব’ করতে সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাবেক সমন্বয়কের আবেদন
  • এবার পরিবার নিয়ে ঘরে বসেই ‘উৎসব’