গত ১৬ বছরে ঘুষ-দুর্নীতি একটা ট্র্যাডিশন হয়ে গিয়েছিল: হাসনাত আবদুল্লাহ
Published: 8th, April 2025 GMT
গত ১৬ বছর দেশের এমন কোনো খাত নেই, যেখানে দুর্নীতি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লার দেবীদ্বার সরকারি রেয়াজ উদ্দিন পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘গত ১৬ বছর দেশের এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে দুর্নীতি হয়নি। অফিস-আদালতে ঘুষ-দুর্নীতি একটা ট্র্যাডিশন হয়ে গিয়েছিল। মন্ত্রী-এমপিরা দুর্নীতি করে করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। যাঁরা এসব কাজ করেছেন, তাঁরাও একসময় শিক্ষার্থী ছিলেন। আজকে তোমরা (শিক্ষার্থী) যেখানে বসেছ, সেখানে তাঁরাও বসেছিলেন; কিন্তু তাঁরা সঠিক শিক্ষা পাননি।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘কোনো শিক্ষকই তাঁর শিক্ষার্থীদের দুর্নীতিতে জড়ানোর অন্যায় শিক্ষা দেন না। তোমরা যারা এখানে আছ, তোমাদের নিজেদের আগে দুর্নীতিমুক্ত হয়ে সৎ মানুষ হতে হবে। যোগ্যতা থাকুক বা না থাকুক, সেটা বিষয় না। কিন্তু আগে নিজেদের ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করতে হবে। তোমরা যারা এসএসসি পরীক্ষা দেবে, এটি তোমাদের প্রস্তুতি পর্ব। এই প্রস্তুতি যার যত ভালো, তার সামনের পথচলা তত ভালো হবে। তোমরা যখন কোনো সমাজে যাবে, তখন কেউ তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেবে—ঢাবির ছাত্র, বুয়েটের ছাত্র, চুয়েটের ছাত্র; তখন তোমার প্রতি অন্যদের আলাদা একটি নজর থাকবে। তোমাদের নিজেদের সেভাবে গড়ে তুলবে হবে, যোগ্য করে তুলতে হবে।’
দেশে যাঁরা দুর্নীতিবাজ আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই শিক্ষিত উল্লেখ করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘একটু লক্ষ করতেই দেখা যায়, আমাদের দেশে যাঁরা দুর্নীতিবাজ আছেন, তাঁরা কিন্তু শিক্ষিত। তাঁরাই একসময় বেস্ট রেজাল্ট করে ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করেছেন। কিন্তু সঠিক শিক্ষা না পাওয়ায় তাঁরা দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। আজকে যারা এখানে আছ, তোমাদের অবশ্যই সৎ মানুষ হতে হবে। একজন রিকশাওয়ালা চাইলেও পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি করতে পারবে না। কারণ, তাঁর কাছে সেই সুযোগ নেই। কিন্তু সুযোগ না থাকার কারণে দুর্নীতি না করা আর সুযোগ পেয়ে দুর্নীতি না করার মধ্যে কিন্তু পার্থক্য রয়েছে। যিনি সুযোগ পেয়েও দুর্নীতি করেন না, তিনিই এই সমাজের সবচেয়ে ভালো মানুষ।’
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফুডপ্যান্ডার ডেলিভারি বয় থেকে সফল ফ্রিল্যান্সার আবু সালেহ, মাসে আয় কত জানেন
পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। অভাবের সংসারে নিজেকে একরকমের বোঝাই মনে করতেন। কিছু একটা করা দরকার। পরিস্থিতি যেন আবু সালেহ আহমেদকে দিন দিন আরও বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অনেক স্বপ্ন দেখেছেন, সেই স্বপ্নে নিজেকে অটুট রেখেছেন। আর পাড়ি দিতে হয়েছে অনেকটা পথ। ধৈর্য নিয়ে নিজের স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে আজ সালেহ নিজেকে বলতেই পারেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। কেননা এখন তিনি মাসে আয় করেন তিন লাখ টাকা।
আবু সালেহ আহমেদ। ডাকনাম আফনান। বাবা মো. কুতুব উদ্দিন শেখ মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। মা সাজেদা খাতুন গৃহিণী। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার তারাপুর গ্রামের আবু সালেহ আহমেদ এখন অবশ্য এলাকায় থাকেন না। থাকেন ঢাকার কাঁঠালবাগানে। এখান থেকেই আফনান গড়ে মাসিক তিন লাখ টাকা আয় করেন। ছোট্ট একটা অফিসও নিয়েছেন, যেখানে চারজন ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান করেছেন।
২০১৬ সালে সেনগ্রাম ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাসের পর ২০২০ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন আবু সালেহ আহমেদ। এখন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে স্থাপত্য বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। ছাত্রাবস্থাতেও তাঁর মাসিক আয় কোনো কোনো মাসে পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ২৭ বছর বয়সী আবু সালেহ আহমেদ বিয়ে করেছেন গত বছর। স্ত্রীর নাম ফাতেমা জোহরা।
পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াই ছিল কঠিন
আফনান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আসলে মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাস করে বের হয়েছি। তখন ইচ্ছা থাকলেও আমাদের সামর্থ্য ছিল না ভালো জায়গায় পড়ার। আমার চার বছর যে সময়টা কেটেছে, আসলে খুব কষ্টে কেটেছে। কলেজে আমি এক্সট্রা কারিকুলামে ভালো ছিলাম, ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ছিলাম, বেশ কিছু জায়গায় বিতর্ক করে চাম্পিয়নও হয়েছি। স্যারদের চোখে পড়েছি। একসময় আর পেরে উঠছিলাম না, তাই দুই বছর পড়তে পড়তেই টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) নিতে গিয়েছিলাম। লক্ষ্মীপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষকেরা আমার কথা শুনে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। যার ফলে আমি পড়াশোনাটা শেষ করেছি।’
আবু সালেহ আহমেদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘দিনগুলো কঠিন ছিল। টিউশনি করাতাম। ১ হাজার ৫০০ টাকা পেতাম। ১ হাজার টাকা মেসভাড়া ও ৫০০ টাকায় খাওয়া। সকালে ও রাতে খেতাম। মাসে তা–ও খাওয়ার বিল আসত ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। মেসের বাকিরা সেটা দিয়ে দিত। তারপর একদিন ২ হাজার ৫০০ টাকার একটা টিউশনি পেয়ে একটু যেন শক্তি পেলাম। এভাবেই আমার ডিপ্লোমার চার বছর কেটেছে।’
একবুক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায়
২০২০ সালে ডিপ্লোমা পড়া শেষ করেই একবুক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন আবু সালেহ আহমেদ। এসেই শুরু করেন আবার জীবনসংগ্রাম। কোথাও কাজ পাচ্ছিলেন না। শেষমেশ ফুডপ্যান্ডায় রাইডার (ডেলিভারি বয়) হিসেবে কাজ নেন তিনি। কিন্তু শুধু ফুডপ্যান্ডায় কাজের আয় দিয়ে তাঁর চলছিল না। তখন থেকেই কাজের পাশাপাশি কিছু একটা করার চেষ্টা করছিলেন। কিছু জায়গায় খোঁজ নিয়ে ভর্তি হয়ে যান তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ আইটিতে। খাবার ডেলিভারির পাশাপাশি কাজও শিখতেন।
আবু সালেহ আহমেদ