মানুষের জীবন বাঁচাতে যাওয়া মানুষদেরই হত্যা করেছে ইসরায়েল। এমন মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে খুনের কাজটি তাদের জন্য এবারই প্রথম নয়। কয়েক মাস আগেও হাসপাতালে হামলা চালিয়ে অর্ধ সহস্র মানুষ খুন করে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে পড়েছিল তারা। সর্বশেষ ১৫ জন চিকিৎসাকর্মীকে খুন করে আবারও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ দিল নেতানিয়াহু বাহিনী। এবারও বিশ্বব্যাপী মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, যার ছোঁয়া বাংলাদেশেও পড়েছে।

বাংলাদেশ বরাবরই ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করে আসছে। সাধারণত জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের বিক্ষোভ মিছিল এবং মসজিদে মসজিদে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দোয়া হয়ে থাকে। সর্বশেষ নৃশংসতায় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীরা সোমবার বৈশ্বিক হরতালের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। মজলুম গাজাবাসীর প্রতি সহানুভূতি জানাতে বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোও মাঠে নেমেছে। এই সহানুভূতি শুধু ধর্মীয় নয়; মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতার কারণেও।

বাংলাদেশ জন্মলগ্ন থেকেই ফিলিস্তিনি মজলুম জনগণের পক্ষে ভূমিকা রেখে এসেছে। ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ। বন্ধুরাষ্ট্রের প্রতি আন্তরিক সমর্থনের কারণে আজও ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে সমর্থন জানায়নি বাংলাদেশ। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর করার প্রয়োজনে ঢাকায় ফিলিস্তিনি দূতাবাসও প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের শিক্ষা উন্নয়নে বাংলাদেশ শুরু থেকেই সহযোগিতা করছে। সত্তরের দশক থেকে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের 
মেডিকেল টিম সেখানকার যুদ্ধাহতদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছে। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা সংগ্রামে মানবিক সেবায় এখনও বাংলাদেশ সহযোগিতা করে থাকে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক গাজায় যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের চিকিৎসাসেবায় বেসরকারি পর্যায়েও বিভিন্ন সহযোগিতার সংবাদ পাওয়া যায়। ১৯৮০-৮২ সালে লেবাননে অবস্থান নিয়ে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা যুদ্ধে শত শত বাংলাদেশি তরুণ অংশ নিয়েছিল বলেও সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়। অনেকে শহীদও হয়েছেন।  

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের করণীয় কী? স্বাধীনতার লড়াই কেমন– বাঙালি জানে। কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, সেই অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে বাংলার নবীন-প্রবীণ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। সেই যুদ্ধ ছিল সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে। যে যুদ্ধে দুনিয়ার স্বাধীনতাকামী মানুষের সমর্থন ছিল। ফিলিস্তিনের প্রশ্নেও বিশ্ব জনমত গঠনে আমরা ভূমিকা রাখতে পারি। 
সোমবার যে বিশ্ব হরতালের প্রতি বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ সংহতি প্রকাশ করেছে, সেটিও বিশ্ববিবেককে নাড়া দেওয়ার প্রয়াস। এই মুহূর্তে আরও অগ্রসর চিন্তা করা উচিত বলে মনে করি। আমাদের জানা আছে, ইসরায়েলের এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে মুসলিমবিশ্ব ঐক্যবদ্ধ নয়। কয়েক মাস আগে ইরান যখন ইসরায়েলে ড্রোন হামলা করেছিল, তখন একটি মুসলিম দেশ সেই হামলা প্রতিহত করার কাজে ইসরায়েলের হয়ে কাজ করেছিল। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ ইসরায়েলের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে খ্যাত। অথচ এই মুহূর্তে মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য।

ইসরায়েল নির্দিষ্ট কোনো জাতি কিংবা দেশের শত্রু নয়, তারা মানবতার শত্রু– এই বোধটুকু মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে 
প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভূমিকা রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে ওআইসির ভূমিকা প্রশ্নাতীত নয়। বাংলাদেশ মুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি ওআইসিকে কার্যকর ভূমিকা পালনে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। বাংলাদেশ দূতিয়ালির ভূমিকা অবলম্বন করে মুসলিম দেশগুলোর ঐক্যসূত্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করতে পারে। সার্ক প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বাংলাদেশেরই উদ্যোগে। এই মুহূর্তে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতায় বাংলাদেশ কিছু ইতিবাচক অবদান রাখতে পারলে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে সমাদৃত হবে; বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আত্মবল বাড়বে এবং জাতি হিসেবে আমরা আরও মর্যাদাশীল 
হতে পারব।

যে ধর্মপ্রাণ মুসলমান জনগণ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে সোমবার রাস্তায় নেমেছিল, তাদের একাংশ বাংলাদেশের কিছু স্থাপনা ভাঙচুর করেছে। এটা আবেগের বহিঃপ্রকাশ, সন্দেহ নেই। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ আবেগের বশে অনেক কিছুই করে। ভাবতে হবে– এই ভাঙচুরে ইহুদিদের কতটা ক্ষতি হবে; ফিলিস্তিনিদের কতটা উপকার করবে, আর বাংলাদেশেরও ক্ষতি কিংবা লাভ হবে কিনা। 
আবেগকে আমাদের ইতিবাচক দিকে প্রবাহিত করতে হবে। এমন উদ্যোগ নেওয়া দরকার, যা ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ত্বরান্বিত এবং ইসরায়েলের পরাজয় নিশ্চিত করে। প্রশ্নবিদ্ধ আবেগ নয়, বাস্তবতাকে ধারণ করে এগিয়ে যাওয়াই সবার জন্য উত্তম।

মোস্তফা হোসেইন: সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক 
ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হত য ফ ল স ত ন দ র স ব ধ নত এই ম হ র ত ইসর য় ল র সহয গ ত আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে:

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।  

সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএনসিসির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত পশ্চিম শেওড়াপাড়া, পশ্চিম কাজীপাড়া ও সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা, ৫ কিলোমিটার নর্দমা ও দেড় কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণকাজের উদ্বোধন ও গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।

ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, ডিএনসিসির সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। প্রকল্পটি কবে শুরু হবে, কবে শেষ হবে, কতা টাকা বরাদ্দ আছে—এসব তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এছাড়া, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ হলে নির্মাণ সামগ্রী কী, সেটা জনগণের জানা দরকার। যখন জনগণ জানবে, তখন তারা জবাবদিহি করতে পারবে।

তিনি বলেন, “আমি গত সপ্তাহে কাউকে না জানিয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে চলমান কাজ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, রাস্তাকে ধরে রাখার জন্য যে ওয়াল (বিশেষ দেয়াল) দেওয়া হয়েছে, সেটার পিলার বানানোর কথা ছিল স্টোন দিয়ে; কিন্তু বানিয়ে রেখেছে ব্রিক দিয়ে। এটা বড় দুর্নীতি। স্থানীয় মানুষ যদি না জানে, কী নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হবে, তাহলে দুর্নীতি করাটা সহজ। তথ্যের যত বেশি আদান-প্রদান হবে, তথ্য যত বেশি পাবলিক করা হবে, জনগণ তত বেশি জবাবদিহি করতে পারবে। আমি ঠিকাদারকে জানিয়ে দিয়েছি, সঠিক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার না করলে বিল দেব না। তারা বলেছে, এটা ঠিক করে দেবে।” 

মোহাম্মদ এজাজ বলেন, যার যার এলাকার কাজ তারা বুঝে নেবেন। বুঝে নেওয়ার জন্য যত তথ্য ও সহযোগিতা লাগবে, সেটা আমরা দেব। ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে প্রকল্পের সব তথ্য ও ঠিকাদারের ফোন নম্বরসহ দেওয়া থাকবে। স্থানীয় জনগণ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ বুঝে নেবেন। আমরা চাই, সকলের অংশগ্রহণে উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হবে। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।”

তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় সোসাইটি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতা পাচ্ছি। সবার অংশগ্রহণ বাড়াতে আমি বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে গণশুনানি করছি। প্রতি মাসে ফেসবুক লাইভে দেশে-বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সাথে যুক্ত হচ্ছি। ডিএনসিসির সবার ঢাকা অ্যাপ আছে, সেটির পাসওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের দিচ্ছে না। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা ৪ কোটি টাকা খরচ করে এই অ্যাপ বানিয়েছে। পাসওয়ার্ড না দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।”

ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় হকারদের জন্য হাটা যায় না। মানুষের অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। ঢাকা শহরে মানুষের চলাচলের অধিকার সবার আগে, সেই অধিকার আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। মিরপুর-১০ এর প্রধান সড়কের যত হকার ও অটোরিকশা আছে, সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেব। যারা এ ধরনের ইনফরমাল পেশায় যুক্ত আছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্যও আমরা প্ল্যাটফর্ম করব। তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা আমরা তৈরি করব। এই শহরটা সবার, সবাই একসাথে বসবাস করব; কিন্তু অন্যদের কষ্ট না দিয়ে, অন্যের অধিকার নষ্ট না করে। 

বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

ঢাকা/এএএম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সাথে পুলিশের মতবিনিময়
  • ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সিপিবি নেতার সৌজন্য সাক্ষাৎ
  • রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত স্থগিতের দাবি রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের
  • ট্রাম্প কানাডাকে ‘ভেঙে ফেলতে’ চেয়েছিলেন
  • পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
  • হামদর্দের গাজার জনগণের প্রতি মানবিক সহায়তা
  • প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে রিট, ইউনিয়ন পরিষদটিতে চার মাস ধরে সব সেবা বন্ধ
  • সংসদে সংরক্ষিত আসন, না তৃণমূল রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ?
  • স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে: