গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে গত সোমবার বিক্ষোভ চলাকালে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ কয়েকটি শহরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে অন্তত ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এসব ঘটনায় পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে জানানো হয়, এসব ঘটনায় গতকাল রাত পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে চারটি মামলা হয়েছে। তদন্ত চলমান। এসব নিন্দনীয় ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আরও মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে পুলিশ সোমবার রাতে অভিযান চালিয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে বিক্ষোভের সময় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এ সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য দায়ী সবাইকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে সোমবার সারা দেশে বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, রাজশাহী, বগুড়া, গাজীপুর, খুলনা ও কুমিল্লায় বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং দোকানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

সিলেটে গ্রেপ্তার ১৮

সিলেট নগরের একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজছে পুলিশ। ফুটেজ দেখে পুলিশ এরই মধ্যে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

এর আগে গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে সিলেটে বের করা বিক্ষোভ মিছিল থেকে নগরের ১৩টি দোকান-রেস্তোরাঁ, সুপারশপ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে লুটপাটও চালানো হয়। সোমবার বিকেল চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এসব হামলা-লুটপাট চলে।

সিলেটের পুলিশ কমিশনার মো.

রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, হামলাকারীরা সুযোগসন্ধানী বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে। ঘটনায় রাজনৈতিক কোনো দল বা ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ফুটেজ সংগ্রহ করে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে অংশ নেওয়া বিভিন্ন ব্যক্তিকে উত্তেজিত করে কিছু ব্যক্তি উদ্দেশ্যমূলকভাবে হামলার ঘটনা সাজায়। ওই ব্যক্তিরা পৃথক কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে শাবল, হাতুড়িসহ দোকানপাট ভাঙচুরের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে হামলায় যোগ দেয়। তাদের অনেকের মুখে মাস্ক বা কাপড় পরা ছিল। কারও কারও মাথায় ছিল হেলমেট। তাদের সঙ্গে যোগ দেন উত্তেজিত সাধারণ মানুষও।

পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল সকালে রয়াল মার্ক হোটেলের ব্যবস্থাপক আবদুল মতিন সরকার বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করে গতকাল বিকেলে আদালতে পাঠিয়েছে।

আরও পড়ুনইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর–লুটের ঘটনায় ৪৯ জন গ্রেপ্তার১৬ ঘণ্টা আগেকক্সবাজার ও কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৪

কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের কেএফসি-পিৎজা হাট, পানসি রেস্তোরাঁসহ পাঁচটি রেস্তোরাঁয় ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি করেন পানসি রেস্তোরাঁ মালিকদের একজন নুরুল আলম চৌধুরী। দুপুরে গ্রেপ্তার তরুণ মো. হাশিমকে (২৫) এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। হাশিম কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বানিয়াপাড়ার বাসিন্দা।

কুমিল্লা নগরের রানীর বাজার নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকায় কেএফসিতে ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার ও একজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য, কেএফসিতে ভাঙচুরের সময় সেখানে দায়িত্ব পালন করা পুলিশের সদস্যদের ধাক্কা দেওয়াসহ দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার মাটিয়ারা গ্রামের শাফায়েত হোসেন (২৭), নগরের কাপ্তানবাজার এলাকার মো. জিহাদ (২১) ও শহরতলির শাসনগাছা এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিক (২১)। এ ছাড়া আটক তরুণের নাম আবিদ হাসান। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

রাজশাহী, বগুড়া ও খুলনায় মামলা হয়নি

সোমবার রাতে রাজশাহীতে কেএফসির আউটলেটে ভাঙচুর করা হয়। ঘটনার পর থেকে সে স্থানে পুলিশি পাহারা রয়েছে। কিন্তু গতকাল বিকেল পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। রাজশাহী নগরের আলুপট্টির মোড়ে কয়েক মাস আগে কেএফসির আউটলেটটি চালু হয়েছে।

বগুড়া শহরের বাটা বাজারের প্রধান শাখায় হামলার ২৪ ঘণ্টা পরও থানায় মামলা হয়নি। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। হামলার পর থেকে শহরে বাটার চারটি শোরুম বন্ধ রয়েছে।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতরা এস এম মঈনুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার ইসরায়েলবিরোধী মিছিল থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় বাটা বাজারের প্রধান শাখায় হামলার ঘটনা ঘটে। এর পর থেকেই এ শাখা বন্ধ রয়েছে।

খুলনায় কেএফসি ও ডমিনোজ পিৎজার আউটলেট এবং বাটার শোরুম ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি। মামলা না হওয়ায় সোমবার রাতে আটক ৩০ জনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে আটক রাখার অনুরোধ করেছে সোনাডাঙ্গা থানা-পুলিশ।

সোমবার নগরের ময়লাপোতা এলাকায় অবস্থিত কেএফসি ও ডমিনোজ পিৎজা এবং শিববাড়ী এলাকায় অবস্থিত বাটা শোরুমে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ঘটন য় ইসর য় ল ট র ঘটন স মব র ক এফস নগর র গতক ল শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩

ক্যারিবীয় সাগরে একটি জাহাজে আবারো হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। এতে জাহাজটিতে থাকা অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। 

রবিবার (২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

আরো পড়ুন:

নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের

কানাডার সঙ্গে আলোচনায় না বসার ঘোষণা ট্রাম্পের

শনিবার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে হেগসেথ বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই জাহাজটিকে অবৈধ মাদক চোরাচালানে জড়িত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল।”

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক জলসীমায় পরিচালিত এই হামলার সময় জাহাজটিতে ‘তিনজন পুরুষ মাদক-সন্ত্রাসী’ ছিলেন। তিনজনই নিহত হয়েছেন।” 

শনিবারের এই হামলার আগে গত বুধবার ক্যারিবীয় সাগরে আরো একটি জাহাজে মার্কিন বাহিনীর হামলায় চারজন নিহত হন। গত সোমবার মার্কিন হামলায় নিহত হন ১৪ জন।

মাদক পাচারের অভিযোগ তুলে সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার নাগরিকসহ ৬২ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এছাড়া ১৪টি নৌযান এবং একটি সাবমেরিন ধ্বংস হয়েছে।

তবে নৌযানগুলো মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্র এখনও দেয়নি।  ফলে হামলার বৈধতা নিয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। কিছু আইনজীবী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। কলম্বিয়া এবং ভেনেজুয়েলার মতো প্রতিবেশী দেশগুলো এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

ভেনেজুয়েলা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করেছে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দেশটি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সাতটি যুদ্ধজাহাজ, একটি সাবমেরিন, ড্রোন এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে এবং মেক্সিকো উপসাগরে মোতায়েন করেছে আরেকটি যুদ্ধজাহাজ।

ট্রাম্প প্রশাসন মাদক চোরাচালানকারী নৌযানের ওপর তাদের হামলাকে ‘আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের নৌযান সাধারণত আটক করা হয় ও ক্রুদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক মার্কিন অভিযানগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো নৌকা ধ্বংস করা হচ্ছে। জাতিসংঘ-নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এই অভিযানগুলোকে ‘বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ