ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ৬০ জন গ্রেপ্তার
Published: 9th, April 2025 GMT
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে গত সোমবার বিক্ষোভ চলাকালে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ কয়েকটি শহরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে অন্তত ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এসব ঘটনায় পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে জানানো হয়, এসব ঘটনায় গতকাল রাত পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে চারটি মামলা হয়েছে। তদন্ত চলমান। এসব নিন্দনীয় ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আরও মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে পুলিশ সোমবার রাতে অভিযান চালিয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে বিক্ষোভের সময় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এ সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য দায়ী সবাইকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে সোমবার সারা দেশে বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, রাজশাহী, বগুড়া, গাজীপুর, খুলনা ও কুমিল্লায় বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং দোকানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
সিলেটে গ্রেপ্তার ১৮সিলেট নগরের একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজছে পুলিশ। ফুটেজ দেখে পুলিশ এরই মধ্যে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
এর আগে গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে সিলেটে বের করা বিক্ষোভ মিছিল থেকে নগরের ১৩টি দোকান-রেস্তোরাঁ, সুপারশপ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে লুটপাটও চালানো হয়। সোমবার বিকেল চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এসব হামলা-লুটপাট চলে।
সিলেটের পুলিশ কমিশনার মো.
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে অংশ নেওয়া বিভিন্ন ব্যক্তিকে উত্তেজিত করে কিছু ব্যক্তি উদ্দেশ্যমূলকভাবে হামলার ঘটনা সাজায়। ওই ব্যক্তিরা পৃথক কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে শাবল, হাতুড়িসহ দোকানপাট ভাঙচুরের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে হামলায় যোগ দেয়। তাদের অনেকের মুখে মাস্ক বা কাপড় পরা ছিল। কারও কারও মাথায় ছিল হেলমেট। তাদের সঙ্গে যোগ দেন উত্তেজিত সাধারণ মানুষও।
পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল সকালে রয়াল মার্ক হোটেলের ব্যবস্থাপক আবদুল মতিন সরকার বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করে গতকাল বিকেলে আদালতে পাঠিয়েছে।
আরও পড়ুনইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর–লুটের ঘটনায় ৪৯ জন গ্রেপ্তার১৬ ঘণ্টা আগেকক্সবাজার ও কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৪কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের কেএফসি-পিৎজা হাট, পানসি রেস্তোরাঁসহ পাঁচটি রেস্তোরাঁয় ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি করেন পানসি রেস্তোরাঁ মালিকদের একজন নুরুল আলম চৌধুরী। দুপুরে গ্রেপ্তার তরুণ মো. হাশিমকে (২৫) এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। হাশিম কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বানিয়াপাড়ার বাসিন্দা।
কুমিল্লা নগরের রানীর বাজার নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকায় কেএফসিতে ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার ও একজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য, কেএফসিতে ভাঙচুরের সময় সেখানে দায়িত্ব পালন করা পুলিশের সদস্যদের ধাক্কা দেওয়াসহ দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার মাটিয়ারা গ্রামের শাফায়েত হোসেন (২৭), নগরের কাপ্তানবাজার এলাকার মো. জিহাদ (২১) ও শহরতলির শাসনগাছা এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিক (২১)। এ ছাড়া আটক তরুণের নাম আবিদ হাসান। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
রাজশাহী, বগুড়া ও খুলনায় মামলা হয়নিসোমবার রাতে রাজশাহীতে কেএফসির আউটলেটে ভাঙচুর করা হয়। ঘটনার পর থেকে সে স্থানে পুলিশি পাহারা রয়েছে। কিন্তু গতকাল বিকেল পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। রাজশাহী নগরের আলুপট্টির মোড়ে কয়েক মাস আগে কেএফসির আউটলেটটি চালু হয়েছে।
বগুড়া শহরের বাটা বাজারের প্রধান শাখায় হামলার ২৪ ঘণ্টা পরও থানায় মামলা হয়নি। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। হামলার পর থেকে শহরে বাটার চারটি শোরুম বন্ধ রয়েছে।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতরা এস এম মঈনুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার ইসরায়েলবিরোধী মিছিল থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় বাটা বাজারের প্রধান শাখায় হামলার ঘটনা ঘটে। এর পর থেকেই এ শাখা বন্ধ রয়েছে।
খুলনায় কেএফসি ও ডমিনোজ পিৎজার আউটলেট এবং বাটার শোরুম ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি। মামলা না হওয়ায় সোমবার রাতে আটক ৩০ জনকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করে আটক রাখার অনুরোধ করেছে সোনাডাঙ্গা থানা-পুলিশ।
সোমবার নগরের ময়লাপোতা এলাকায় অবস্থিত কেএফসি ও ডমিনোজ পিৎজা এবং শিববাড়ী এলাকায় অবস্থিত বাটা শোরুমে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ঘটন য় ইসর য় ল ট র ঘটন স মব র ক এফস নগর র গতক ল শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।