পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা নতুন মোড় নিচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই আবারও ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ‘বিশ্বের জন্য হুমকি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। অন্যদিকে ইরান বলছে, তারা পরমাণু কর্মসূচির বিষয়ে চুক্তিতে আগ্রহী, তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে। খবর বিবিসি ও এএফপির।

২০১৮ সালে ট্রাম্প এককভাবে ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে পুনরায় ইরানের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এর জবাবে ইরানও চুক্তির কিছু শর্ত লঙ্ঘন করে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখে।

মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম সম্প্রতি ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, ইরানের কাছে অন্তত ছয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরির মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাও সমর্থন করেছে তাঁর দাবি। যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে, ইরান যদি এ কর্মসূচি চালিয়ে যায়, তবে তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আঞ্চলিক যুদ্ধের সূত্রপাত করতে পারে। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের প্রতি আবারও তাঁর পুরোনো সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি বেছে নিয়েছেন। নতুন নিষেধাজ্ঞায় অন্যান্য দেশকেও ইরানের সঙ্গে তেল বাণিজ্য বন্ধে চাপ দিচ্ছে তাঁর প্রশাসন। একই সঙ্গে কূটনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনির কাছে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে চিঠি পাঠান ট্রাম্প। তবে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তেহরান যদি পরমাণু চুক্তি না করে, তবে দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর সামরিক ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির জবাবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানিয়েছেন, তারা আলোচনা করতে প্রস্তুত। তবে তিনি শর্ত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক হুমকি থেকে সরে এসে সম্মানের ভিত্তিতে চুক্তির পথে এগোতে হবে। আরাগচি বলেন, ‘আমরা সম্মান পেলে, সম্মান ফিরিয়ে দেব।’ ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, খুব শিগগির ওমানে মার্কিন ও ইরানি প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা শুরু হতে পারে। ইরান জানিয়েছে, এ বৈঠক হবে পরোক্ষ আলোচনা।

তবে ট্রাম্প তা সরাসরি আলোচনায় রূপ দিতে চাচ্ছেন। ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেবেন বলে জানা গেছে। বৈঠকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সম্পূর্ণ বিলুপ্তি, হিজবুল্লাহ ও হুতিদের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধ করার দাবি জানানো হতে পারে। তবে সম্পূর্ণ বিষয়টিকে ঘিরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পরম ণ

এছাড়াও পড়ুন:

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের

সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’

আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ