ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু আলোচনা এখনও বহু দূর
Published: 10th, April 2025 GMT
পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা নতুন মোড় নিচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই আবারও ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ‘বিশ্বের জন্য হুমকি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। অন্যদিকে ইরান বলছে, তারা পরমাণু কর্মসূচির বিষয়ে চুক্তিতে আগ্রহী, তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে। খবর বিবিসি ও এএফপির।
২০১৮ সালে ট্রাম্প এককভাবে ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে পুনরায় ইরানের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এর জবাবে ইরানও চুক্তির কিছু শর্ত লঙ্ঘন করে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখে।
মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম সম্প্রতি ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, ইরানের কাছে অন্তত ছয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরির মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাও সমর্থন করেছে তাঁর দাবি। যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে, ইরান যদি এ কর্মসূচি চালিয়ে যায়, তবে তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আঞ্চলিক যুদ্ধের সূত্রপাত করতে পারে। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের প্রতি আবারও তাঁর পুরোনো সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি বেছে নিয়েছেন। নতুন নিষেধাজ্ঞায় অন্যান্য দেশকেও ইরানের সঙ্গে তেল বাণিজ্য বন্ধে চাপ দিচ্ছে তাঁর প্রশাসন। একই সঙ্গে কূটনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনির কাছে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে চিঠি পাঠান ট্রাম্প। তবে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তেহরান যদি পরমাণু চুক্তি না করে, তবে দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর সামরিক ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারির জবাবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানিয়েছেন, তারা আলোচনা করতে প্রস্তুত। তবে তিনি শর্ত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক হুমকি থেকে সরে এসে সম্মানের ভিত্তিতে চুক্তির পথে এগোতে হবে। আরাগচি বলেন, ‘আমরা সম্মান পেলে, সম্মান ফিরিয়ে দেব।’ ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, খুব শিগগির ওমানে মার্কিন ও ইরানি প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা শুরু হতে পারে। ইরান জানিয়েছে, এ বৈঠক হবে পরোক্ষ আলোচনা।
তবে ট্রাম্প তা সরাসরি আলোচনায় রূপ দিতে চাচ্ছেন। ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেবেন বলে জানা গেছে। বৈঠকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সম্পূর্ণ বিলুপ্তি, হিজবুল্লাহ ও হুতিদের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধ করার দাবি জানানো হতে পারে। তবে সম্পূর্ণ বিষয়টিকে ঘিরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পরম ণ
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকারকে মানুষ এখনও ভালো সমাধান মনে করছে: আল জাজিরাকে
বাংলাদেশের মানুষ এখনও অন্তর্বর্তী সরকারকে ভালো সমাধান মনে করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রবিবার (২৭ এপ্রিল) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
আল জাজিরার ‘টক টু আল–জাজিরা’য় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে এখনও মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।”
সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, নির্বাচন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান, সাবেক সরকারের দুর্নীতি প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি।
আরো পড়ুন:
জাপান সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কার্ডিনাল প্রিফেক্ট কুভাকাডের সাক্ষাৎ
নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিগত দিনের অনিয়ম–দুর্নীতি দূর করে দেশে অর্থবহ সংস্কার এবং এযাবৎকালের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন জুনের পরে যাবে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘হানিমুন পিরিয়ডৎ’ শেষ হয়ে গেছে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনও তাদের জন্য একটি ভালো সমাধান।”
তিনি আরো বলেন, “তারা বলছে না যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যেতে দাও, আজই নির্বাচন করো... আমরা এমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি যেখানে লোকেরা বলছে যে ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষমতা হস্তান্তর করো’।”
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনও নিজেকে ‘ন্যায়সঙ্গত প্রধানমন্ত্রী’ দাবি করে বিবৃতি দিচ্ছে এবং সরকার ভারতে তার উপস্থিতি কীভাবে দেখছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনে মোদির সঙ্গে আমার আলোচনায় আমি স্পষ্ট করেছিলাম, শেখ হাসিনাকে ভারতে রাখতে চাইলে তা আপনার ইচ্ছা। কিন্তু তার উচিত নয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্য করা। তার বক্তব্য জনগণকে উত্তেজিত করছে এবং আমাদের জন্য সমস্যা তৈরি করছে।”
তখন মোদি কী বলেছিলেন জানতে চাইলে ইউনূস বলেন, “মোদি জানান, ভারতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উন্মুক্ত থাকায় শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।”
আল জাজিরা সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, অর্থাৎ আপনি বলছেন, মোদি বলেছেন ভারতে বাকস্বাধীনতা বন্ধ করতে পারবেন না। ফলে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর কোনো নিশ্চয়তাও পাননি। এ অবস্থায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের কী প্রভাব পড়বে?
প্রধান উপদেষ্টা এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, “এটা আমাদের দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান করতে হবে। আমরা আমাদের আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি। ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত চাওয়া হয়েছে, তবে এখনো কোনও সাড়া পাইনি। আইনি প্রক্রিয়া এগিয়ে গেলে বিষয়টি উচ্চপর্যায়ে উঠবে।”
সাক্ষাৎকারে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এটি দলের (আওয়ামী লীগ) উপর নির্ভর করবে— তারা অংশগ্রহণ করবে কি না। আমরা এখনও জানি না; তারা কিছু ঘোষণা করেনি। যখন তারা করবে, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে।”
এই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে কিনা প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “শুধু নির্বাচন কমিশন নয়। অন্যান্য দল বা আইনগত বিধানও এর মধ্যে আসতে পারে, যার অধীনে তাদের অংশগ্রহণের অনুমতি নাও হতে পারে।”
ভারতের আগে চীন সফর করার সিদ্ধান্ত কি ইচ্ছাকৃত কি না ও এর মাধ্যমে কোনো বার্তা দিতে চেয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমি আমার প্রতিবেশী দেশগুলোকেই সফর করছি। ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, সাড়া পাইনি। তাই প্রথমে চীন গেলাম। এরপর মালয়েশিয়া যাবো। এর আগে থাইল্যান্ডের ব্যাংককেও ছিলাম। আমি আশেপাশের অনেক দেশেই সফর করছি এবং চেষ্টা করছি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সংগঠন সার্ককে আবার সক্রিয় করতে।”
তিনি আরো বলেন, “সার্ক এখন অচল অবস্থায় রয়েছে। আমি সব সার্ক নেতাদের আহ্বান জানাচ্ছি—চলুন একসঙ্গে কাজ করি, আবার যোগাযোগ বাড়াই। একইসঙ্গে বিমসটেক নিয়েও কাজ করছি। বলছি, আসুন একত্র হই, সমস্যা মেটাই এবং এগিয়ে চলি। মূল লক্ষ্য হলো—দেশগুলোকে একত্র করে মানুষের জীবনমান উন্নত করা। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমসটেকের চেয়ারম্যান, তাই এই দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি আমরা আসিয়ান সদস্যপদ পাওয়ার চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।”
এ সময় সাংবাদিক জানতে চান, আপনি আঞ্চলিকভাবে যার সঙ্গে সম্ভব, তার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। তবে ভারত কিছুটা উদাসীনতা দেখিয়েছে। এখন কি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার দিকে ঝুঁকছেন?
এর জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমি ‘উদাসীনতা’ বলবো না। এটা সাময়িক একটা বিষয়। আমাদের একসঙ্গে সমাধান করতে হবে। আমি এটাকে চূড়ান্ত বা দীর্ঘস্থায়ী কিছু মনে করি না। বন্ধুত্বই টিকে থাকার চাবিকাঠি। আমি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার ওপর জোর দিচ্ছি। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিশ্বের সেরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলোর একটি হওয়া উচিত।”
আরেক প্রশ্নে সাংবাদিক জানতে চান, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে আপনার প্রতি অসন্তোষ দেখিয়েছেন। শোনা যায়, আপনি তাকে হারানোর জন্য তহবিল দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে আপনার অনুদানের কথা উল্লেখ করা হয়। এখন ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় ফিরছেন, এই প্রেক্ষিতে কি আপনি সে সিদ্ধান্তের জন্য অনুতপ্ত?
এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। কোনো সমস্যা নেই। আমরা একসঙ্গে কাজ করছি এবং শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছি।”
আল জাজিরার নিয়েভ বার্কার জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্রকে কি এখনও নির্ভরযোগ্য অংশীদার মনে করেন? আপনার কি বেইজিং আর ওয়াশিংটনের মধ্যে কোনো একটি পক্ষ বেছে নিতে হচ্ছে?
জবারে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “না। এটা কোনো পক্ষ নেওয়ার বিষয় নয়। সবাই আমাদের বন্ধু—যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু, চীন বন্ধু, ভারতও বন্ধু।”
অধ্যাপক ইউনূস জানান, বিদেশী সরকারগুলো বাংলাদেশকে সাহায্য করছে যাতে বাংলাদেশ বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত পেতে পারে।
ঢাকা/ফিরোজ