চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৩ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়বে, যা দক্ষিণ এশিয়ার গড় আনুমানিক প্রবৃদ্ধির তুলনায় কম। এর আগে এডিবির পূর্বাভাস ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ কমে যাওয়ার পেছনে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শ্রম অসন্তোষ ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রভাব রাখতে পারে।

গতকাল বুধবার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন ঢাকায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিংগ। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবির বাংলাদেশ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সংস্থার কান্ট্রি ইকোনমিস্ট চন্দন সাপকতা।
প্রতিবেদনে এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতির চলতি প্রবণতা এবং আগামীর ঝুঁকি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর আলাদা উপস্থাপনা ছিল। এতে বলা হয়, সরকারের প্রাক্কলন হলো, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৬ শতাংশ। গত অর্থবছরে প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। এদিকে আগামী অর্থবছরে (২০২৫-২৬) জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৫ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে এডিবি।

প্রসঙ্গত, এশিয়ার প্রবৃদ্ধি নিয়ে এডিবির পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক শুল্ক বৃদ্ধিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধি এশিয়ার ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তার ওপর আলাদা পর্যালোচনা রয়েছে প্রতিবেদনে। সংবাদ সম্মেলনে এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণার আগে। যদিও গতকাল রাতে পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আগামী দুই অর্থবছরে প্রকৃত জিডিপি কত হতে পারে সে ব্যাপারে হো ইউন জিংগ বলেন, এখনই তা বলা ‘অতি আগাম’ হয়ে যাবে। এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন, আগামী প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলবেন তারা। শুল্কহার শেষ পর্যন্ত কেমন থাকে এবং কীভাবে তা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে– এমন বিষয়ের প্রতি নজর রাখছেন তারা।

এডিবির প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার ২০২৫ সালে গড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। সংস্থাটির মতে, ভারতের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে মালদ্বীপে ৬ শতাংশ, ভুটানে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়।

মূল্যস্ফীতি কেমন থাকবে

এডিবি বলেছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছতে পারে। যদিও সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমান বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এডিবি বলেছে, নিয়ন্ত্রণ কাঠামোয় ঘাটতি, পাইকারি বাজারে প্রতিযোগিতা কম থাকা, বাজারের বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা এবং ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ার কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। অর্থবছরের বাকি কয়েক মাসে হয়তো কিছুটা কমতে পারে, তবে মূল্যস্ফীতির গড় হার দুই অঙ্কে থাকবে। অবশ্য আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কমে ৮ শতাংশে নামতে পারে। 

ঝুঁকি কোথায় 

বাংলাদেশ নিয়ে এডিবির প্রাক্কলনের সঙ্গে কিছু নিম্নমুখী ঝুঁকির কথা বলা হয়েছে। এসব ঝুঁকি যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তাহলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক উচ্চ ব্যয় এবং সরকারের ভর্তুকি মূল্যস্ফীতি এবং বাজেট ঘাটতি বাড়িয়ে দিতে পারে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি, দীর্ঘ সময়ের জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি এবং টাকার মান পতন হলে তা অর্থনীতিকে আঘাত করবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক এবং অন্যান্য রপ্তানি গন্তব্যে অর্থনৈতিক ধীরগতি অর্থনীতির জন্য অন্যতম ঝুঁকি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এড ব প রব দ ধ দশম ক র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে আরও যাঁরা পেয়েছেন ‘দ্য কিংস ফাউন্ডেশন পুরস্কার ২০২৫’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত বৃহস্পতিবার ‘রাজা তৃতীয় চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করেছেন। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে যুক্তরাজ্যে রাজা তৃতীয় চার্লস এবং আমন্ত্রিত ব্যক্তি, রাষ্ট্রদূত ও সমর্থকদের উপস্থিতিতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

কিংস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ফাউন্ডেশনের চেয়ার অব ট্রাস্টিজ ডেম অ্যান লিম্ব অধ্যাপক ইউনূসের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। বিভিন্ন বিভাগে আরও কয়েকজন ‘কিংস ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫’-এ ভূষিত হয়েছেন।

কিংস ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে ‘রাজা তৃতীয় চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ সম্পর্কে বলা হয়েছে, বিশেষ এই পুরস্কার এমন এক ব্যক্তিকে দেওয়া হয়, যিনি ‘দ্য কিংস হারমনি’ দর্শনের প্রতি দীর্ঘ মেয়াদে অসামান্য নিষ্ঠা দেখিয়েছেন এবং এটিকে সমর্থন দিয়েছেন। এ দর্শন সব ক্ষেত্রে টেকসই ব্যবস্থা ও প্রকৃতিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেয়।

অধ্যাপক ইউনূস সম্পর্কে ওয়েবসাইটে বলা হয়, তিনি সামাজিক ব্যবসার নীতি প্রচারে এবং টেকসই, সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল প্রকল্পগুলো উৎসাহিত করতে তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন। এটি বাংলাদেশ ও এর বাইরেও দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।

২০২৪ সালের জুন মাসে রাজা চার্লস প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপনের উদ্‌যাপন হিসেবে নতুন এ পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এ পুরস্কারের প্রথম বিজয়ী ছিলেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন।

১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘দ্য কিংস ফাউন্ডেশন’। এ দাতব্য প্রতিষ্ঠান তৎকালীন প্রিন্স অব ওয়েলসের উদ্যোগে গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর টেকসই উন্নয়ন ও মানবিক কর্মকাণ্ডে অসামান্য অবদানের জন্য এ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার দিয়ে থাকে।

আরও যাঁরা ‘কিংস ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫’ পেলেন

‘ইমার্জিং ট্যালেন্ট’ (উদীয়মান প্রতিভা) পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এমিলি হার্স্ট। এ পুরস্কার সম্পর্কে বলা হয়, এটি এমন একজনকে দেওয়া হয়, যিনি কিংস ফাউন্ডেশন প্রোগ্রামে থাকাকালীন ব্যতিক্রমী প্রতিভা ও অঙ্গীকার দেখিয়েছেন। এমিলির হাতে পুরস্কার তুলে দেন ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহাম।

এমিলি হার্স্ট সম্প্রতি হাইগ্রোভ গার্ডেন্স (বিখ্যাত বাগান ও এস্টেট, যা রাজা তৃতীয় চার্লসের ব্যক্তিগত বাসভবনের অংশ) থেকে পরিচালিত ‘শ্যানেল অ্যান্ড কিংস ফাউন্ডেশন মেটিয়ার্স ডি’আর্ট ফেলোশিপ ইন মিলিনারি’ সম্পন্ন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে এমিলি নিজ থেকে ঐতিহ্যবাহী খড় বুননের কারুশিল্প শিখেছিলেন, যা তাঁকে ইতিহাসভিত্তিক নির্ভুল হ্যাট (একধরনের টুপি) তৈরি করতে সাহায্য করেছে। এ দক্ষতা তাঁর বর্তমান কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূসের হাতে পুরস্কার তুলে দেন কিংস ফাউন্ডেশনের চেয়ার অব ট্রাস্টিজ ডেম অ্যান লিম্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৬ জুন ২০২৫)
  • পাঁচ বছরে বাড়বে ৬৫ শতাংশ
  • ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সেরা
  • ডিজিটাল খাতে বাজেটের প্রভাব কেমন
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির
  • আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৫ জুন ২০২৫)
  • অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে আরও যাঁরা পেয়েছেন ‘দ্য কিংস ফাউন্ডেশন পুরস্কার ২০২৫’
  • বেসরকারি খাত পিপিপিতে আকৃষ্ট নয়, বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা
  • কমপ্লায়েন্সের অভাবে ধুঁকছে চামড়া খাতের রপ্তানি