নববর্ষের ঐতিহ্য রক্ষায় জাতীয় কবিতা পরিষদের পাঁচ দাবি
Published: 10th, April 2025 GMT
হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি রক্ষা করতে ‘সংস্কৃতি রক্ষা অভিযান’ গড়ে তোলাসহ পাঁচটি দাবি জানিয়েছে জাতীয় কবিতা পরিষদ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদ্যাপন নস্যাতের ষড়যন্ত্রে বিরুদ্ধে’ ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কবি মোহন রায়হান বলেন, ‘নববর্ষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মানেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এই দেশবিরোধী, স্বাধীনতা-সার্বভৌমবিরোধী গভীর চক্রান্ত, যড়যন্ত্র এখনই প্রতিরোধ এবং প্রতিহত করতে না করতে পারলে আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ধ্বংস ও ধুয়েমুছে যাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো দাবিগুলো হলো: নববর্ষ উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে যেকোনো ষড়যন্ত্র বা সহিংসতার আশঙ্কা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও গণমাধ্যমে বাংলা নববর্ষের ইতিহাস ও তাৎপর্য তুলে ধরা, ধর্মীয় অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া, সংস্কৃতিকর্মীদের অংশগ্রহণে দেশব্যাপী ‘সংস্কৃতি রক্ষা অভিযান’ গড়ে তোলা। এ ছাড়া নববর্ষ নিয়ে যেকোনো অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সাহস ও সচেতনতায় জবাব দিতে সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান জাতীয় কবিতা পরিষদের নেতারা।
কবি মোহন রায় বাংলা নববর্ষের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের হওয়া ‘শোভাযাত্রা’ আজ ইউনেসকো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্য। কিন্তু কিছু গোষ্ঠী এটিকে মূর্তিপূজা আখ্যা দিয়ে কটূক্তি করছে। বিভিন্ন ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল ও গোপন গ্রুপে নববর্ষ উদ্যাপনকে ঘিরে উসকানিমূলক কনটেন্ট ছড়ানো হচ্ছে। এটি শুধু মতপ্রকাশ নয়, সাংস্কৃতিক জঙ্গিবাদের সূক্ষ্ম রূপ। এ সময় অতীতে বিভিন্ন সময়ে নববর্ষ উৎসবে হওয়া হামলার বিষয়টি উল্লেখ করে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
এবারের নববর্ষের শোভাযাত্রায় ফিলিস্তিনের নির্যাতনের শিকার মানুষের পক্ষে জাতীয় কবিতা পরিষদ ফিলিস্তিনের পতাকা বহন করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেহান স্টালিন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যারাই কাজ করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াব।’
এ সময় বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, জাতীয় কবিতা পরিষদের সহসভাপতি শহীদুল্লাহ ফরায়জী, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য কবি মতিন বৈরাগী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক কবি শাহীন রেজা প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের
কেবল বাংলা নববর্ষই নয়, যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে "বাংলা নববর্ষ: ইতিহাস, সংস্কৃতি ও উত্তরাধিকার" শীর্ষক এক সেমিনারে বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সাংস্কৃতিক তাৎপর্য ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অনুরোধ করেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, কেবল বাংলা নববর্ষই নয়, যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখা জরুরি। রাজনীতির সঙ্গে রাষ্ট্র ও সমাজের সম্পর্ক সঠিকভাবে গড়ে উঠলে কোনো উৎসবই নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয় না। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সাংস্কৃতিক চিন্তা-চেতনার যে স্বকীয়তা রয়েছে, তা অক্ষুণ্ন রাখাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। বুদ্ধিভিত্তিক ও সচেতন উদ্যোগের মাধ্যমে ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। বাংলা নববর্ষের প্রতি জনগণের গভীর অনুরাগ রয়েছে, তাই এটিকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে।
সেমিনারে আইআরডিসি’র সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হকের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন
আইআরডিসি-এর সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন।
সেমিনারে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. নাছির আহমেদ তার মূল প্রবন্ধে বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক বিবর্তন এবং নববর্ষ উদযাপনের ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার নিয়ে দুই পর্বে বিশদ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বাংলা নববর্ষ কেবল বাঙালিদের উৎসব নয়, বরং এটি ধর্ম, গোত্র ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশির একটি সমন্বিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া, বাংলা সনের উৎপত্তি, এর অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মাত্রা নিয়েও তিনি গভীরভাবে আলোকপাত করেন।
এছাড়াও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফজলে এলাহি চৌধুরী প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন। তাঁরা বাংলা নববর্ষের আন্তর্জাতিক ও সামাজিক সংহতি এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে এর ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন। একইসাথে বাংলা নববর্ষের বহুমাত্রিক তাৎপর্য ও এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করেন।
এসময় সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষক উপস্থিত ছিলেন।