খাদ্য মন্ত্রণালয় এবারের বোরো মৌসুমে সাড়ে তিন লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা গত বছর ছিল ছয় লাখ টন। এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৪৩ বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁরা বলছেন, কৃষককে বঞ্চিত করে মিলারদের সুবিধা দিতে সরকার ধান সংগ্রহের পরিমাণ কমিয়েছে।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সাবেক কৃষিসচিব আনোয়ার ফারুক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ, লেখক ও গবেষক কল্লোল মোস্তফা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক মাহা মীর্জা, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন প্রমুখ।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শুধু ধান ও চাল ছাড়া অন্য কোনো শস্য সরকারিভাবে কেনা হয় না। আবার কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহের সময় দাম নির্ধারণে অস্বচ্ছ ও অদক্ষ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। ফলে কৃষক বছরের পর বছর প্রতারণার শিকার হন।

ধান-চাল কেনায় সরকারি উদ্যোগ অতি সামান্য হওয়ায় ধানের বাজারে তা খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারে না উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এ প্রবণতার কারণে প্রতিবছর চালকলমালিকদের (মিলার) একচ্ছত্রভাবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে।

এই সিন্ডিকেট ভাঙার একমাত্র উপায় হিসেবে কৃষকের কাছ থেকে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে অধিক পরিমাণে ধান কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।

সরকার চালকলমালিকদের কাছ থেকে চাল কিনলে কৃষকের লাভ হয় না উল্লেখ করে বিবৃতি অভিযোগ করা হয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় লাভের একটা বড় অংশ মিলারদের পকেটে চলে যায়। কিন্তু কৃষকের থেকে সরাসরি ধান কেনা হলে বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

এবার ধানের দাম প্রতি কেজিতে চার টাকা বাড়ানো হয়েছে, যা সাধুবাদযোগ্য বলে অভিমত দিয়েছেন বিবৃতিদাতারা।

খাদ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এবার তাঁরা প্রতি কেজি ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৩৬ টাকায়, যা গত বছরের তুলনায় চার টাকা বেশি। ফলে কৃষকেরা লাভবান হবেন। অন্যদিকে চাল কেনা হবে প্রতি কেজি ৪৯ টাকায়।

৩ লাখ টন ধানের পাশাপাশি এবার সাড়ে ১৪ লাখ টন চাল (সেদ্ধ) সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।

ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কমেছে কেন জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দেশে চাল আমদানি হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ধান কিনলে সেটা ভাঙানো ও মজুদের সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে খাদ্য অধিদপ্তরের। সে জন্য চাইলেও তাঁরা এই মুহূর্তে বেশি ধান সংগ্রহ করতে পারছেন না।

বিবৃতিতে ৪৩ নাগরিকের পক্ষ থেকে চারটি দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো হলো ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা এখনই পরিবর্তন করে ১৭ লাখ টনে উন্নীত করা, চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ টনে নামিয়ে আনা, চলতি বোরো মৌসুমেই কৃষকের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে ধান কেনার পরিমাণ ৫০ লাখ টনে উন্নীত করা এবং আগামী অর্থবছরের মধ্যেই সরকারি গুদামের সক্ষমতা ২১ লাখ টন থেকে ৫০ লাখ টনে উন্নীত করা।

কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য প্রাথমিকভাবে গুদামসক্ষমতা খুব বেশি বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না বলে দাবি করা হয়েছে বিবৃতিতে। বলা হয়েছে, খাদ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে দেশের অধিকাংশ চালকলের একটি বার্ষিক চুক্তি হয়ে থাকে। সেই চুক্তিতে শুধু চাল সরবরাহের শর্ত থাকে।

চুক্তিতে আরেকটি শর্ত যুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে বিবৃতিদাতারা বলেছেন, সরকার কৃষকের কাছ থেকে যে ধান কিনবে তা মাড়াই করবে বেসরকারি চালকলগুলো। চালকল থেকে মাড়াই করা চাল সরাসরি সরকারের গুদামে চলে যাবে। এর ফলে বর্তমান গুদামসক্ষমতা দিয়েই অধিক পরিমাণে ধান কেনা সম্ভব হবে।

সরকারের সংগ্রহ কার্যক্রমে আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে গ্রামভিত্তিক ও ইউনিয়নভিত্তিক শস্য সংরক্ষণাগার করারও দাবি জানিয়েছেন বিবৃতিদাতারা। তাঁরা বলেছেন, শুধু সমতলের কৃষি নয়, পাহাড়ি এলাকার জুমে উৎপাদিত ধান ও ফসল ন্যায্যমূল্য দিয়ে কিনতে হবে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের স্থানীয় মূল্য নির্ধারণ কমিটিতে নারী-পুরুষ কৃষক ও জুমিয়া প্রতিনিধি রাখার দাবি জানান তাঁরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পর ম পর ম ণ ল খ টন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এবারের বাজেট ট্রাম্প ও আইএমএফএ’র দুই পায়ে দাঁড়ানো: আনু মুহাম্মদ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, এবারের বাজেট ট্রাম্প ও আইএমএফএ’র দুই পায়ে দাঁড়ানো। আইএমএফের প্রভাবে বাজেটে স্থানীয় শিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি হ্রাস পেয়েছে। ট্রাম্প সাহেবকে খুশি করার চেষ্টা ছিলো এই বাজেটে। 

আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি আয়োজিত ‘বাজেট: দেড় দশকের অভিজ্ঞতা ও অর্থনীতির গতিপথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

আনু মুহাম্মদ বলেন, বাজেটে আয়ের জন্য ভ্যাট ট্যাক্স বাড়ানোর কথা বলা হয়। কিন্তু মার্কিন কোম্পানির কাছে আমাদের যে ক্ষতিপূরণ তা আদায় করতে হবে। মাগুরছড়া ও টেংরাটিলায় গ্যাস বিস্ফোরণে সম্পদ ও প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংসে যে ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ আদায়ের কোন সরকারই চেষ্টা করেনি। এই ক্ষতিপূরণ আদায় অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর ডিপি ওয়ার্লডের কাছে ছেড়ে দেওয়া তো শেখ হাসিনার প্রকল্প ছিল। ড. ইউনুস কেন তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাইছেন? 

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ বলেন, গণঅভ্যুত্থানে পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে, বর্তমান সরকারের বাজেটে সেই পরিবর্তনের সূচনা ঘটানোর কথা নেই। সম্পদ সংখ্যাগরিষ্ট জনগণের কাছ থেকে গিয়ে কিছু মানুষের কাছে পুঞ্জীভূত হয়। এবারের বাজেটেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে।

তিনি আরও বলেন, এবারের বাজেটে প্রতারণা ও অস্বচ্ছতার যে চিত্র ফুটে উঠেছে, সেটা অব্যাহত থাকুক আমরা চাই না। আগামী ২২ জুন বাজেট অনুমোদনের আগে এর ত্রুটিগুলো দূর করতে হবে। বাজেটে জাতীয় সক্ষমতা সৃষ্টির ন্যূনতম উদ্যোগ নিতে হবে।

সভায় আইইউবিএটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ার ড. গোলাম রসুল বলেন, সত্যিকার অর্থে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এই বাজেটে তেমন কিছু নেই। কৃষিক্ষেত্রে বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। কৃষিকে আমরা নানাভাবে আন্ডার ভ্যালু করে দিচ্ছি। স্বাস্থ্যখাতে এবার জনপ্রতি বাজেট বেড়েছে ২২ টাকা।

ট্রাম্পের পালটা শুল্ক বিষয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার বুঝেও না বুঝার ভান করছে। এটা আমাদের বিশাল বিপদে ফেলবে। 
সভায় আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহা মির্জা,  চিকিৎসক ডা. হারুণ অর রশীদ, লেখক-গবেষক প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা ও মাহতাব উদ্দীন আহমেদ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫ আসামিকে বাদ দিতে হলফনামা, বাদী কৃষক দল নেতাকে শোকজ
  • এবারের বাজেট ট্রাম্প ও আইএমএফএ’র দুই পায়ে দাঁড়ানো: আনু মুহাম্মদ