বর্তমানে দেশের ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ বা দুই–তৃতীয়াংশের বেশি পরিবার অন্তত একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করে। বিভিন্ন সুবিধার কারণে দেশে স্মার্টফোনের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী পরিবার ছিল ৭০ শতাংশ। সেটি গত অক্টোবর–ডিসেম্বর প্রান্তিকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ শতাংশে।

গত সপ্তাহে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের আইসিটির প্রয়োগ ও ব্যবহার–বিষয়ক ত্রৈমাসিক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

জরিপের তথ্য বলছে, স্মার্টফোন ব্যবহারের তুলনায় ইন্টারনেট ব্যবহার খুব বেশি বাড়েনি। গত ডিসেম্বর শেষে দেশের ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার সরাসরি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল। গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শহর–গ্রামনির্বিশেষে পরিবার (খানা) পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার ছিল ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে দেশের প্রায় অর্ধেক পরিবার এখনো সরাসরি ইন্টারনেট–সেবার বাইরে রয়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।

তথ্যপ্রযুক্তি খাত বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমানে ১০–১৫ হাজার টাকার মধ্যে বা তারও কমে সাধারণ মানের স্মার্টফোন পাওয়া যায়। এ ধরনের ফোন দিয়ে ভিডিও কল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্ত থাকা কিংবা অনলাইনে পড়াশোনার মতো বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। এ কারণে পরিবারনির্বিশেষে অন্তত একটি হলেও স্মার্টফোন রাখার চিন্তা থাকে। তবে নানা কারণে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে বাড়েনি।

দেশে জেলাভিত্তিক ব্যক্তি ও খানাপর্যায়ে আইসিটির ব্যবহার ও প্রয়োগ নিয়ে জরিপ পরিচালনা করছে বিবিএস। তারই অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক জরিপ করা হয়। এবারের জরিপে দেশের ২ হাজার ৫৬৮টি এলাকার ৬১ হাজার ৬৩২টি পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

 ই–টিকিট, অনলাইনে জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট নিবন্ধন, মোবাইল ব্যাংকিংসহ নানা ধরনের সরকারি–বেসরকারি সেবা ডিজিটালনির্ভর হওয়ায় স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবণতা অনেকটাই বেড়েছেবি এম মইনুল হোসেন, পরিচালক, তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বিবিএস জানিয়েছে, জরিপে শহর ও গ্রাম এলাকায় খানাপর্যায়ে পাঁচ বছর ও তার বেশি বয়সীদের থেকে তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা ও এ–সংক্রান্ত উপকরণ ব্যবহারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে একদিকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে খানার জনতাত্ত্বিক ও আর্থসামাজিক অবস্থা জানা যাবে, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) ও এসডিজি ট্র্যাকারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে। জরিপে যেসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে—এলাকাভেদে খানাপর্যায়ে রেডিও, টেলিভিশন, কম্পিউটার, মুঠোফোন, স্মার্টফোন, ইন্টারনেট ব্যবহার এবং ব্যক্তিপর্যায়ে মুঠোফোন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ব্যবহার, মুঠোফোনের মালিকানা প্রভৃতি বিষয়।

এখনো ইন্টারনেট–সেবার বাইরে অর্ধেক মানুষ

বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, শহর–গ্রামনির্বিশেষে পরিবারপ্রতি ইন্টারনেট ব্যবহারের হার এখন ৫২ দশমিক ৪ শতাংশ। এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে আবার শহরের তুলনায় গ্রামের পরিবারগুলো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। শহরের ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবার ইন্টারনেট ব্যবহার করে। গ্রামে এই হার ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে ব্যক্তিপর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার আরও কম। শহর-গ্রাম মিলিয়ে সার্বিকভাবে এই হার প্রায় ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ।

দেশে প্রতিবছর ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বাড়ছে। ২০২২ সালে দেশে যেখানে পরিবারপ্রতি ইন্টারনেট ব্যবহারের হার ছিল ৩৮ শতাংশ, সেটি গত বছর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ দশমিক ৪ শতাংশে। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে পরিবারপ্রতি ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। একইভাবে দুই বছরের ব্যবধানে ব্যক্তিপর্যায়েও ইন্টারনেট ব্যবহার সাড়ে ৬ শতাংশ বেড়েছে। তা সত্ত্বেও দেশে অর্ধেকের বেশি পরিবার এখনো ইন্টারনেট–সেবার বাইরে রয়েছে।

স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ছে

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৯৮ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবারের কাছে কমপক্ষে একটি মুঠোফোন রয়েছে। গত বছর এই হার ছিল ৯৭ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ পরিবারপ্রতি মুঠোফোন ব্যবহারের হার প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। জরিপে উঠে এসেছে, অনেক পরিবারে একটি মুঠোফোন একাধিক সদস্য ব্যবহার করেন। আবার পরিবারে মুঠোফোন থাকলেও কেউ কেউ তা ব্যবহারের সুযোগ পান না। এ কারণে ব্যক্তিপর্যায়ে মুঠোফোনের মালিকানা ও ব্যবহারের হার কিছুটা কম।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দুই বছরের ব্যবধানে পরিবারপ্রতি স্মার্টফোনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। গত অক্টোবর–ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশের ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ পরিবারের কাছে স্মার্টফোন রয়েছে বলে তথ্য উঠে এসেছে। ২০২২ সালে এই হার ছিল ৫২ শতাংশ। সেই হিসাবে দুই বছরের ব্যবধানে পরিবারপ্রতি স্মার্টফোনের ব্যবহার প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। শহরের পাশাপাশি গ্রামেও স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়লেও এখনো শহরেই স্মার্টফোনের ব্যবহার বেশি।

তবে স্মার্টফোন ব্যবহারের এই পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, বিশ্বব্যাংকের ‘ডিজিটাল অগ্রগতি ও প্রবণতা প্রতিবেদন ২০২৩’ অনুযায়ী, দেশে মুঠোফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের হার প্রায় ৫২ শতাংশ। গত অক্টোবরে প্রকাশিত গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশনের (জিএসএমএ) জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শহরের ৪১ শতাংশ এবং গ্রামের ২৬ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন বলেন, পরিবারপ্রতি স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে, এটি খুবই ইতিবাচক দিক। ই–টিকিট, অনলাইনে জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট নিবন্ধন, মোবাইল ব্যাংকিংসহ নানা ধরনের সরকারি–বেসরকারি সেবা ডিজিটালনির্ভর হওয়ায় স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবণতা অনেকটাই বেড়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ ই বছর র ব যবধ ন ম বর প র ন ত ক ফ ন ব যবহ র র ব যবহ র কর ব যবহ র ব শ পর ব র ড স ম বর অন য য় এই হ র ব ব এস সরক র শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

সিমন্সের চোখে মিরাজের অসুস্থতা ‘মধুর সমস্যা’

গলের মেঘলা আকাশ আর টানা বৃষ্টির মাঝে বাংলাদেশ টেস্ট দলের প্রস্তুতি শুরু হলো রোববার। শুরুর দিনেই একটি দুশ্চিন্তা—অসুস্থতার কারণে অনুশীলনে ছিলেন না ওয়ানডে অধিনায়ক ও অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের চোখে এটি আবার ‘মধুর সমস্যা’।

বাংলাদেশ কোচের মতে, মিরাজের সমস্যা সুযোগ করে দেবে অন্য কারও। তবে মিরাজও যে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন, সেটিও জানিয়েছেন সিমন্স। অনুশীলন শেষে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন মিরাজের সর্বশেষ অবস্থা, ‘গত দুই দিনে সে অনেকটাই ভালো আছে। আমরা দেখব সন্ধ্যায় ওষুধের পর সে কেমন থাকে। আশা করি, কাল অনুশীলন করতে পারবে এবং খেলার জন্য প্রস্তুত থাকবে।’

সিমন্স যোগ করেছেন, ‘এটা (মিরাজের অসুস্থতা) নিশ্চয়ই চিন্তার। তবে একজনের সমস্যা অন্যজনের জন্য সুযোগ এনে দেয়। দলের সবাই চায় মিরাজ সুস্থ হয়ে উঠুক, কিন্তু তারা এ–ও জানে, যদি মিরাজ না-ও খেলতে পারে, তাহলে অন্য কাউকে দায়িত্ব নিতে হবে। এটা সমস্যা, তবে সমস্যাটা মধুর।’

মুশফিকের কাছে আলাদা কোনো প্রত্যাশা নেই—সব খেলোয়াড়ের কাছেই আমার চাওয়া একই থাকবেমেহেদী হাসান মিরাজ

এদিন অনুশীলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমকে নিয়েও কথা বলেন সিমন্স। ২০১৩ সালে গলে ডাবল সেঞ্চুরি করা মুশফিকের কাছে বড় কিছু প্রত্যাশা করছেন না কোচ। তাহলে কী চাওয়া সিমন্সের? বাংলাদেশ কোচ বললেন, ‘আমি চাই সে যেন খেলাটা উপভোগ করে। ওই ইনিংস যেমন সে আনন্দ নিয়ে খেলেছিল, এবারও যেন সেটাই করে, তা-ই চাই। মুশফিকের কাছে আলাদা কোনো প্রত্যাশা নেই—সব খেলোয়াড়ের কাছেই আমার চাওয়া একই থাকবে।’

সম্প্রতি ওয়ানডে অধিনায়কত্বে হঠাৎ পরিবর্তন এনে নাজমুল হোসেনের বদলে মিরাজকে দায়িত্ব দিয়েছে বিসিবি। সিমন্স মনে করেন, টেস্টে এই সিদ্ধান্তের প্রভাব নাজমুলের ওপর পড়বে না, ‘আমি একেবারেই মনে করি না যে এটি ওকে প্রভাবিত করবে। মাঠে নামলে নাজমুল শুধু ক্রিকেট নিয়েই ভাবে, বাইরের বিষয় আমরা দেখি। তাই এটা ওর পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলবে না।’

বাংলাদেশ দলের কোচ ফিল সিমন্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ