পঞ্চগড়ে বিএনপি–জামায়াতসহ সবার তৎপরতা নির্বাচনমুখী
Published: 12th, April 2025 GMT
পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন আছে দুটি। এর মধ্যে পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলা নিয়ে পঞ্চগড়-১ আসন।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই জেলায় আওয়ামী লীগের কোনো তৎপরতা নেই। নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে নানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এ ছাড়া নতুন গঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কর্মসূচি।
চলমান পরিস্থিতিতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে গত রমজান মাসে ইফতার মাহফিলসহ ঈদের আগে-পরে বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদের বেশ সরব দেখা গেছে।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি। এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের বাড়ি পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায়। নতুন দলের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি গত ২৪ মার্চ প্রথমবারের মতো এসেছিলেন নিজ জেলায়। ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে করে সৈয়দপুরে আসার পর তিনি সড়কপথে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় আসেন। সেখান থেকে শতাধিক গাড়িবহর (কার-মাইক্রোবাস) নিয়ে পঞ্চগড় পাঁচ উপজেলায় ‘শোডাউন’ করেছিলেন তিনি। তাঁর এই গাড়িবহর নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা। সারজিস আলম ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে জেলাজুড়ে পোস্টার ও ফেস্টুন সাঁটিয়েছেন। ইফতার মাহফিল করার পাশাপাশি ঈদের আগে ও পরে গ্রামে এবং বিভিন্ন হাটবাজারে গিয়ে করেছেন জনসংযোগ।
গত ৩০ মার্চ এনসিপি পঞ্চগড় জেলা শাখার ব্যানারে পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সম্মেলনকক্ষে সারজিস আলম আয়োজন করেছিলেন ইফতার মাহফিলের। বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এতে অংশ নেন। সেখানে সাংবাদিকদের উদ্দেশে নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘কোন জেলার কোন আসনে কে নির্বাচন করবে, এটা নির্বাচনের পূর্বে আমাদের দলীয় যে ফোরাম, সেই ফোরাম নির্ধারণ করবে। সেই ফোরাম যদি আমাকে পঞ্চগড়-১–এর (পঞ্চগড়-১ আসন) জন্য নির্ধারণ করে, তাহলে সেটা; যদি অন্য কোথাও নির্ধারণ করে, তাহলে সেটা।’
এদিকে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে পঞ্চগড়-১ আসনে দল গোছানোর পাশাপাশি জনসংযোগসহ সাধারণ মানুষকে নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। পৌরসভার ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠনসহ উপজেলা ও জেলা সম্মেলনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। গত রমজানে দলটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় কর্মিসভাসহ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক–বিষয়ক সম্পাদক নওশাদ জমির ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে এসে পঞ্চগড়-১ আসনের তিনটি উপজেলায় (সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী) নানা আয়োজনে অংশ নিয়েছেন।
তবে পঞ্চগড় পৌর বিএনপির ব্যানারে দুটি ইফতার মাহফিল ঘিরে বিএনপির দুটি পক্ষের মধ্যে ‘বিরোধ’ দেখা গেছে। গত ২১ মার্চ পঞ্চগড় জেলা শহরের ধাক্কামারা এলাকায় পঞ্চগড় পৌর বিএনপি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক–বিষয়ক সম্পাদক নওশাদ জমির। তবে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ও পঞ্চগড় পৌরসভার সাবেক মেয়র তৌহিদুল ইসলামসহ তাঁর অনুসারীরা ওই ইফতার মাহফিলে যাননি।
এরপর গত ২৯ মার্চ পঞ্চগড় পৌর বিএনপির ব্যানারে পঞ্চগড় সরকারি অডিটরিয়াম চত্বরে আরেকটি ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পৌর বিএনপির আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ওই ইফতার মাহফিলে বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। তবে সেখানে নওশাদ জমিরের অনুসারী নেতাদের দেখা যায়নি।
নির্বাচনকে সামনে রেখে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও। ইতিমধ্যে দলটির পক্ষ থেকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়-১ আসনের জন্য জেলা জামায়াতের আমির ইকবাল হোসাইনকে আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পঞ্চগড় জেলা শাখা আয়োজিত এক জনসভায় বক্তব্য দিয়েছেন দলের আমির শফিকুর রহমান।
এ ছাড়া গত রমজানে পঞ্চগড়ের মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ মাঠে সাত দিনব্যাপী গণ ইফতারের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। গত ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ইফতার মাহফিল ও ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়েছিল। নিয়মিত বিভিন্ন এলাকায় কর্মিসভা ও জনসংযোগ করছেন দলটির নেতারা।
সম্প্রতি পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য লেখাসংবলিত পোস্টার সাঁটিয়েছেন বাংলাদেশ জাসদের (আম্বিয়া-নাজমুল) সাধারণ সম্পাদক ও পঞ্চগড়-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান। ঈদের আগে ও পরে তিনিও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়েছেন এবং জনসংযোগ করেছেন।
এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টিকেও (জাগপা) দেশের ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে জেলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ভ ন ন র জন ত ক ব ভ ন ন এল ক য় প র ব এনপ র জনস য গ উপজ ল য় ইসল ম এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে জুলাই সনদের খসড়ায় সংশোধনী আনা হচ্ছে: আলী রীয়াজ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, কমিশনের বৈঠকে একমত হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কমিশন ‘অনুঘটক’ হিসেবে ভূমিকা রাখবে। প্রয়োজন হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য কমিশন আবার বসবে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের শেষ দিনের আলোচনার শুরুতে এসব কথা বলেন আলী রীয়াজ।
রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদের খসড়ায় সংশোধনী আনা হচ্ছে বলে জানান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘সনদের দুটি অংশ। একটি অংশে ঐকমত্যের বিষয়সমূহ এবং অন্য অংশে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’
শিগগিরই সনদ চূড়ান্ত করা যাবে বলে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব দ্রুত চূড়ান্ত সনদ প্রস্তুত করে আপনাদের হাতে তুলে দিতে। এর ভিত্তিতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাও করা হবে।’
আজকের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে—সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগ সম্পর্কিত বিধান, সংসদের উচ্চকক্ষের গঠন, সংসদ সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি ও এখতিয়ার, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, ইলেকটোরাল কলেজ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ সম্পর্কিত প্রস্তাব এবং রাষ্ট্রের মূলনীতি।
রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে আপনারা যে সব বিষয়ে একমত হয়েছেন, সেগুলো বাস্তবায়নের পথ আপনারা নিজেরাই তৈরি করতে পারবেন। সেখানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিকভাবে অনুঘটকের কাজ করবে।’
আলোচনার শুরুতে আলী রীয়াজ বলেন, কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার আজ শেষ দিন। আজ যেসব বিষয় আলোচিত হবে, তার অধিকাংশই সিদ্ধান্তের বিষয়। বিশেষ করে যেসব দায়িত্ব আপনাদের পক্ষ থেকে আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আপনাদের জানানো হবে।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘কিছু অনালোচিত বিষয়ের আলোচনা হবে। আর সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহা হিসাবরক্ষক এবং ন্যায়পালসহ কিছু বিষয়ে আলোচনার ফ্লোর থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে আগেই ছয়টি কমিশনের সুপারিশের সার-সংক্ষেপ রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় কিছু কিছু বিষয়ে একমত হওয়া গেছে। যার একটি তালিকা দলগুলোর হাতে আছে। এ ছাড়া যেসব বিষয়ে মতভেদ রয়েছে, সেগুলো নিয়েও আলোচনা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনমৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি ৬ ঘণ্টা আগেআলী রীয়াজ জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমতের সুযোগ ছিল এবং আছে। আজকের আলোচনায় যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে, সেগুলোর ক্ষেত্রে দলগুলো ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিতে পারবে।
আলী রীয়াজ আশা প্রকাশ করেন, আজকের মধ্যে আলোচনা পর্বের সমাপ্তি টানা সম্ভব হবে। আলোচনা শেষে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং যেসব বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুত দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি দল।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।
আরও পড়ুন১২ মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ২৯ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনপ্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্যের খসড়া আজকালের মধ্যে পাবে রাজনৈতিক দলগুলো: আলী রীয়াজ২৯ জুলাই ২০২৫