ভয়ংকর ‘চিকিৎসা’ দেওয়া সেই ‘ভণ্ড পীর’ এখন শয্যাশায়ী, হাসপাতালমুখী খাসনগরের মানুষ
Published: 12th, April 2025 GMT
সর্দি–জ্বর থেকে শুরু করে প্যারালাইজড (পক্ষাঘাতগ্রস্ত) পর্যন্ত যেকোনো অসুখ হলেই মানুষ যেতেন কথিত ভণ্ড পীরের কাছে। সেখানে ভূত-প্রেত ধরার কথা বলে কখনো খুঁটির সঙ্গে উল্টো ঝুলিয়ে রাখা, কখনো দুই পা ধরে চরকার মতো ঘোরানো, কখনো ঝাড়ু-লাঠি পেটা, কখনোবা শিশুদের পেটের ওপর দাঁড়িয়ে চিকিৎসার নামে চলত নির্যাতন।
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের খাসনগর এলাকার এই চিত্র নিয়ে ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম হয়েছিল ‘ভণ্ড পীর ভয়ংকর চিকিৎসা’। কথিত পীর আমজাদ হোসেন ব্যাপারীর নিষ্ঠুরতার বিবরণ পড়ে সেদিন বহু পাঠক প্রথম আলো কার্যালয়ে ফোন করেন। নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ওই দিনই গ্রেপ্তার হন আমজাদ হোসেন, যিনি এলাকায় পরিচিতি পেয়েছিলেন আমজাদ ফকির নামে।
সেই ঘটনার ১৫ বছর পর গতকাল শুক্রবার খাসনগর এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ভয়ংকর সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের মধ্য থেকে কুসংস্কার কেটে গেছে। গ্রামের মানুষ অসুস্থ হলে এখন আর কবিরাজ-তথাকথিত পীরদের কাছে যান না। তাঁদের ভরসা এখন হাসপাতাল ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক। কারাগার থেকে বের হয়ে আর ‘কবিরাজি’তে জড়াননি আমজাদ হোসেনও। বর্তমানে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, একসময় খাসনগর গ্রামটি কুসংস্কারে পূর্ণ ছিল। মানুষজন অসুস্থ হলে হাসপাতালে না গিয়ে আমজাদ হোসেনের ডেরায় চিকিৎসা নিতে যেতেন। আমজাদের মতো আরও অনেক কবিরাজও ছিল। কারও কাছ থেকে তেল পড়া, কারও কাছ থেকে পানি পড়া নিয়ে সব রোগ থেকে মুক্তি খুঁজতেন মানুষজন। আমজাদ হোসেনরা তাঁর দলবল নিয়ে চিকিৎসার নামে মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে অপচিকিৎসা চালাতেন।
যেমন ছিল সেই ভয়ংকর চিকিৎসা
২০১০ সালের ১২ এপ্রিল প্রকাশিত প্রথম আলোর প্রতিবেদনের একাংশে বলা হয়—
রাতে ভূতের চিকিৎসার জন্য বাড়ির উঠানে আসর সাজিয়েছেন ধূর্ত আমজাদ। ঢোল, খোল, হারমোনিয়ামসহ আছে বাদক দল। বাদ্যযন্ত্রের উচ্চ শব্দের মধ্যে সব বয়সের নারী রোগীদের এনে মেঝেতে আছড়ে ফেলা হয়। এরপর চলে উপর্যুপরি লাথি, লাঠিপেটা ও চড়থাপ্পড়। মারধর শেষে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে আমজাদ নিজে নাচেন এবং রোগীদেরও নাচতে বাধ্য করেন।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টা। এক নারী এই আসরে আসতে চাইছিলেন না। তাঁকে আমজাদের সহযোগীরা টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসেন। পাঁচটি ঢোল, দু–তিনটি খোল, তিনটি হারমোনিয়ামসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের উচ্চ শব্দের মাঝে নারীর চিৎকারের শব্দ হারিয়ে যায়। তাঁকে ফকিরের সামনে এনে আছড়ে ফেলা হয়। এরপর লাথি আর মোটা বেত দিয়ে পেটানো হয়।
এভাবে চিকিৎসার নামে নির্যাতন করতেন কথিত সেই পীর.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আমজ দ হ স ন
এছাড়াও পড়ুন:
১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।
আরো পড়ুন:
নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা
সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।
বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।
অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ