গুলশানে অনুষ্ঠিত হবে দুই দিনব্যাপী ‘অলিগলি হালখাতা’
Published: 12th, April 2025 GMT
পহেলা বৈশাখ নিয়ে উচ্ছ্বাসের যেন শেষ নেই বাঙালির। মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণসহ দিনভর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানো, বাঙালিয়ানায় তৈরি খাবার খাওয়া, মেলায় গিয়ে দেশীয় পণ্য কেনা, গান-বাজনাতেই মেতে থাকেন বেশিরভাগ মানুষ। তবে রাজধানীর দক্ষিণে বাংলা নববর্ষবরণের বড় আয়োজন থাকলেও উত্তরে তেমন থাকে না। সেই তাগিদ থেকে গত বছর বর্ষবরণের প্রথম উদ্যোগ নেয় ‘অলিগলি বর্ষবরণ বন্ধুগণ’। আয়োজনে সাড়া পাওয়ায় এবারও রাজধানীর উত্তরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী ‘অলিগলি হালখাতা’।
আগামী ১৩ এবং ১৪ এপ্রিল রাজধানীর গুলশানের বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ পার্কে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এই উদ্যোগে সহযোগিতা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
শুক্রবার বিকেলে গুলশানের বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ পার্কে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান 'গুলশান সোসাইটি'র মহাসচিব সৈয়দ আহসান হাবীব।
সৈয়দ আহসান হাবীব বলেন, ভালোবাসায়, সম্প্রীতিতে, সৌহার্দ্যে, সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে অসাধারণ ভরপুর প্রাণের সম্মিলনে গতবার এই পার্কে বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়েছে। সেই প্রাণের সাড়া নাড়া দিয়ে গেছে বলেই এবার আবারও বাংলা নববর্ষ উদযাপনে মিলিত হয়েছি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ (ডিএমপি) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় নববর্ষ উদযাপন হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলার উদারনৈতিক বহুত্ববাদী, অসাম্প্রদায়িক, মানবতাবাদী সংস্কৃতি আমাদের শক্তি। কর্তৃত্ববাদ নয়, সমাজে জাগুক, বিরাজিত হোক মানবিক মর্যাদা, চিন্তা-সংস্কৃতির সমন্বয়ের শক্তি। যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধেরও আদর্শ। আর মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ঘটা বাংলাদেশের অভ্যুত্থান কেবল রাজনৈতিক নয়, এক সাংস্কৃতিক অভ্যুত্থানও বটে। তাই সংস্কৃতি হোক আমাদের কারেন্সি। দূর হয়ে যাক আবর্জনা- সে বছরের হোক কিংবা মন-মগজের।
বর্ষবরণ উৎসব মালা
প্রথমদিন (চৈত্র সংক্রান্তি) বিকেল ৪টা থেকে চারুকারু প্রদর্শনী হবে। রাত ৮টায় ইসলাম উদ্দিন পালাকারের পালাগান অনুষ্ঠিত হবে। এরপর রাত ৯টায় আলপনা আলাপ। এরপর ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ ও নাগরিকদের অংশগ্রহণে রাত ১০টায় পার্কের সামনে থেকে গুলশান দুই মোড় পর্যন্ত রাস্তা জুড়ে আলপনা আঁকা হবে।
দ্বিতীয় দিন (পয়লা বৈশাখ) সকাল সাড়ে আটটায় রেচেল প্রিয়াঙ্কা ও তার দল বর্ষবরণ নৃত্য প্রদর্শন করবেন। নৃত্যের পরেই শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, গুলশান সোসাইটি ও অলিগলি-বর্ষবরণ বন্ধুগণ প্রমুখ।
পরবর্তীতে সকাল ১০টায় গান পরিবেশন করবে গানের দল ও জলের গান। এরপর চিত্রশিল্পীদের অংশগ্রহণে আর্টক্যাম্প থাকবেন ফরিদা জামান, কনক চাঁপা চাকমা, শিশির ভট্টাচার্য, জামাল আহমেদ, মোহাম্মদ ইউনুস, আহম্মেদ শামসুদ্দোহা, শেখ আফজাল, মোহাম্মদ ইকবাল, বীরেন সোম, আনিসুজ্জামান, বিশ্বজিৎ গোস্বামী।
সকাল এগারোটায় সাঈদ ফিরদৌসের সঞ্চালনায় ভাবালাপ পর্ব ১ "সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ" আলাপ করবেন- সাংবাদিক নুরুল কবির, সারা যাকের (সংস্কৃতিজন), আফজাল হোসেন (নাট্যব্যক্তিত্ব), অধ্যাপক প্রশান্ত ত্রিপুরা। ভাবালাপ-এর ২য় পর্ব ভরদুপুরের গল্পসল্প "জনপরিসরে নারীর উপস্থিতি" আলাপ করবেন- ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার শুক্লা সিরাজ, শিক্ষক মিথিলা মাহফুজ, আদিবাসী অ্যাক্টিভিস্ট ডালিয়া চাকমা। বিকাল ৪টায় পাড়ার বাচ্চাদের সমবেত নৃত্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
বিকেল সোয়া ৪টায় গানালাপ- সমবেত গান: "সব সখি মিলি গাই মঙ্গলগান" গাইবেন: সভ্যতা, সুমেল, আনান, জয়িতা, নাভিন, লাবিক। এলকেজি স্টুডিও’র পরিচালনায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সমগীত গানের দল, বাপ্পা মজুমদার ও দলছুট গান পরিবেশন করবেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ নববর ষ করব ন
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ভিপিএনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেটের পাশাপাশি ওয়েবসাইটে প্রবেশের বিকল্প মাধ্যম ভিপিএন বা ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কও বন্ধ করে দিয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। গণ-অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায়ে থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেটের গতি দুর্বল করে দেওয়া হয়েছিল।
তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘দ্য লংগেস্ট সাইলেন্স: ইন্টারনেট শাটডাউনস ডিউরিং বাংলাদেশ’স ২০২৪ আপরাইজিং’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে।
ডিজিটালি রাইটের গবেষণায় গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে ২২ দিন ইন্টারনেট বন্ধের (শাটডাউনের) ঘটনাকে পাঁচ ধাপে ভাগ করা হয়েছে। এরপর প্রতি ধাপে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের মাত্রা ও ধরন কেমন ছিল, তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে যুক্ত ডিজিটালি রাইটের গবেষক তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই ধাপে ইন্টারনেট সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউট হয়েছিল। প্রথমবার ১৮ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই এবং দ্বিতীয়বার ৫ আগস্ট। এ দুই ধাপে মোবাইল ডেটা ও ব্রডব্যান্ড সংযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। ফোর-জিকে টু-জিতে নিয়ে আসা হয়েছিল। পাশাপাশি ফিল্টারিং প্রযুক্তি ও ক্যাশ সার্ভার বন্ধ করে দিয়ে ইন্টারনেটের গতি ধীর করে দেওয়া হয়েছিল।
সারা বিশ্বে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক বৈশ্বিক সংস্থা ‘ওপেন অবজারভেটরি অব নেটওয়ার্ক ইন্টারফেয়ারেন্স’র সহযোগিতায় প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
সময় ও অন্তর্ভুক্ত এলাকার আওতার বিবেচনায় ২২ দিন ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনাকে বাংলাদেশে অন্যতম ব্যাপক ‘ইন্টারনেট শাটডাউন’ বলে অভিহিত করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
প্রতিবেদনে ইন্টারনেট শাটডাউন ও নানা মাত্রায় নিয়ন্ত্রণকে সময়ভিত্তিক পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন প্রথম ধাপ জুলাই ১৫-১৭, দ্বিতীয় ধাপ জুলাই ১৮-২৩, তৃতীয় ধাপ জুলাই ২৪-৩১, চতুর্থ ধাপ আগস্ট ১-৩ ও পঞ্চম ধাপ আগস্ট ৪-৫।
ভিপিএনের ওপর নিয়ন্ত্রণ শুরু হয় ২৪ জুলাই। এ সময় প্রোটন ভিপিএন, নর্ড ভিপিএন ও টানেলবিয়ারের মতো অ্যাপগুলো নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছিল। প্রসঙ্গত, ভিপিএন হলো নিরাপদ ও গোপন পথে ওয়েবসাইটে প্রবেশের উপায়, যা ব্যবহারকারীর অবস্থান ও ডেটা গোপন রাখে। বিশেষ করে ব্লকড করে দেওয়া ওয়েবসাইটে প্রবেশে এগুলো ব্যবহার করা হয়।
প্রতিবেদনটি জানাচ্ছে, সারা দেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে ব্রডব্যান্ড সংযোগের গতি নিয়ন্ত্রণ ও সুনির্দিষ্ট কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কোনো ধরনের সরকারি নির্দেশ ও ঘোষণা ছাড়াই তা করা হয়েছিল। একই সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেবা বন্ধেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর থেকে এসব নির্দেশনা এসেছিল।
ডিজিটালি রাইটের গবেষণা থেকে জানা গেছে, ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন করতে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান (আইএসপি), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) এবং মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোকে সরকার থেকে মৌখিক ও অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ শুরু হওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৪ জুলাই রাতে কোটাবিরোধী আন্দোলন বেগবান হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মোবাইল ডেটার প্রবাহকে ধীরগতির করে দেওয়া হয়। ১৫ জুলাই সকাল থেকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেটের গতি দুর্বল করে দেওয়া হয়। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ১৫ জুলাই মধ্যরাত থেকে ১৬ জুলাই থেকে দ্রুতগতির ইন্টারনেটকে বাধাগ্রস্ত করা হয়।
সহিংসতার তীব্রতা বাড়তে থাকলে ১৮ জুলাই থেকে দেশব্যাপী ইন্টারনেট শাটডাউন শুরু করে সরকার। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে ব্রডব্যান্ড সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর ওই দিন দিবাগত রাত ১টা ২৯ মিনিটের দিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, যা ২৩ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
২৪ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ভিপিএন, মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ডের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১ থেকে ৩ আগস্টের মধ্যে নিয়মিত বিরতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া, ভিপিএন বাধাগ্রস্ত করা ও মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। ৪ থেকে ৫ আগস্ট সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ও ক্যাশ সার্ভার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করা হয়েছে ডিজিটালি রাইটের প্রতিবেদনে।