সামনের জুনে আটত্রিশে পা রাখবেন, কিন্তু ফুটবল পায়ে এখনও যেন আঠারোর সেই কিশোর। এখনও গোল করলে একই উন্মাদনায় জড়িয়ে ধরেন সতীর্থদের। আকাশের দিকে তাকিয়ে এক হাত উঁচিয়ে ধন্যবাদ জানান তাঁর ফুটবল ঈশ্বরকে। যে মানুষটি দুই দশকের বেশি ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবল দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতেছেন বিশ্বকাপে, দু-দুবার কোপা আমেরিকা ছুঁয়েছেন– তিনি কীভাবে একই উন্মাদনায় উপভোগ করছেন আমেরিকার মেজর সকার লিগের মতো হালকা টুর্নামেন্ট? 

এই বয়সে যেখানে অনেকেই গা বাঁচিয়ে মাঠে নামেন, সেখানে একই আবেগে গোল করলে ছুটে যাচ্ছেন গ্যালারিতে? এর কারণ কি শুধুই ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা, নাকি এর থেকেও বেশি কিছু? এমনিতেই কম কথা বলেন, তার ওপর আবার ‘আবেগ’ নিয়ে কৌতূহল। উত্তর হয়তো জানা যাবে না মেসির মুখ দিয়ে। তবে মায়ামির প্রতি ম্যাচে যেভাবে তাঁর সন্তানরা বাবার খেলা দেখতে আসে, গোল করার পর তাদের দিকে যেভাবে মেসি ছুটে যান; তা দেখে এটা অন্তত বলা যায় একজন বাবার কাছে সন্তানের সামনে ‘নায়ক’ হওয়ার এই আনন্দটা পুরোপুরি উপভোগ করছেন মেসি। গর্বিত বাবার মতো সন্তানের সামনে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের প্রবল তাগিদ তাঁর এই বয়সেও।

হয়তো এ কারণে মায়ামিতে আরও এক বছর থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী ডিসেম্বরে ইন্টার মায়ামির সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি শেষ হচ্ছে তাঁর। তবে এর আগেই ক্লাব কর্তৃপক্ষ মেসির সঙ্গে পাকা কথা সেরে ফেলেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের খেলাভিত্তিক নিউজ অ্যাপ ‘দ্যা অ্যাথলেটিক’-এর খবর, ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেসির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে যাচ্ছে ইন্টার মায়ামি। 

এ শুধু মেসির প্রতি মায়ামির মায়ার জন্যই নয়, মায়ামির প্রতিও মেসির মায়ার কারণ আছে তাতে। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের পরপরই মেসির সামনে ছিল সৌদি ক্লাবের লোভনীয় অফার। সঙ্গে ছিল ডেভিড বেকহ্যামের ডাকা মায়ামির হাতছানি। বছরে মায়ামিতে থেকে মেসির আয় ১৩৫ মিলিয়ন ডলার, যেখানে সৌদি ক্লাব আল নাসরে থেকে রোনালদোর বছরে আয় প্রায় ২৮৫ মিলিয়ন ডলার! বার্সা থেকে প্যারিস– দল বদলের ছোটাছুটিতে তিন ছেলেকে নিয়ে কম দৌড়াতে হয়নি মেসিকে। তাই মায়ামি আসার পর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন ছেলেদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে থিতু করতেই একেবারে যুক্তরাষ্ট্রে চলে এসেছেন। তা ছাড়া ইউরোপিয়ান ফুটবলে সপ্তাহে তিন ম্যাচের দম বন্ধ করা প্রতিদ্বন্দ্বিতার চাপও আর নিতে চাইছিলেন না। সব ভেবে চিন্তেই মায়ামিতে বাড়ি কিনেছেন। এখানে আর্জেন্টাইন মানুষের চলাফেরাও বেশি।

এখন পর্যন্ত ৪৮ ম্যাচে ৪১টি গোল আর ২১টি অ্যাসিস্ট করে সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। তাই তাঁকে অন্তত ছাড়তে চায় না মায়ামি। তা ছাড়া ২০২৬ সালে মায়ামি ফ্রিডম পার্কে ১ বিলিয়ন ডলারের নতুন স্টেডিয়াম উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। সেখানে মেসি থাকবেন না, এটা যেন ভাবতেই পারছেন না কেউ। ‘আমরা আমাদের অধিনায়ক লিওনেল মেসিকে নিয়েই তাঁর ১০ নম্বর জার্সিতেই নতুন স্টেডিয়াম উদ্বোধন করব। এটাই আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।’ 

ইন্টার মায়ামির অন্যতম মালিক জর্জ মাসের এ জোরালো বক্তব্যে পরিষ্কার আগামী বছরও এই ক্লাবেই থাকবেন মেসি। তা ছাড়া তাঁর বড় আর মেজ ছেলে বছর বারোর থিয়াগো আর আট বছরের মাতেও এখন সেখানকার ইয়ুথ ডিভিশন লিগে খেলছে। তারাও নাকি বাবার মতো ভীষণভাবে উপভোগ করছে ফুটবল।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইন ট র ম য ম ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচন সামনে রেখে ৭ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বাদে অন্য কোনো নির্বাচনে নিউইয়র্কে এটাই সর্বোচ্চ আগাম ভোট পড়ার ঘটনা। আগামীকাল ৪ নভেম্বর নিউইয়র্ক নগরে মেয়র পদে ভোট গ্রহণ হতে যাচ্ছে।

গতকাল রোববার ছিল আগাম ভোট দেওয়ার শেষ দিন। এদিন প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। নগরের নির্বাচন কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, আগাম ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ ভোট পড়ার ঘটনা। তা ছাড়া এদিন ৩৫ বছরের কম বয়সী ভোটারদের উপস্থিতিও বেশি ছিল। এর মধ্য দিয়ে আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের গড় বয়সও কমে এসেছে। গড় বয়স ৫০ বছরে নেমে এসেছে।

আগের সপ্তাহের প্রথম দিকে কম বয়সী ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল। ওই সপ্তাহের রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৮০ হাজার নিউইয়র্কবাসী ভোট দিয়েছিলেন। তবে গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত এই সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ৩৫ বছরের কম বয়সী ১ লাখের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন, যার মধ্যে শুধু গতকাল রোববারই এ বয়সী ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজারের বেশি।

আরও পড়ুনমামদানিকে বারাক ওবামার ফোন, করলেন নির্বাচনী প্রচারের প্রশংসা০২ নভেম্বর ২০২৫

নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।

নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।

নিউইয়র্কে সর্বপ্রথম মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয় ২০২১ সালে। ওই নির্বাচনে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যায়নি। ওই নির্বাচনে এরিক অ্যাডামস তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্লিওয়াকে দ্বিগুণের বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন।

অবশ্য চলতি বছর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের সংখ্যা গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগাম ভোটকে ছাড়াতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১০ লাখ মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের বয়স তুলনামূলক কম। এটা অবাক করা বিষয়। কারণ, সাধারণত যারা আগাম ভোট দেন তাঁদের গড় বয়স মোট নিবন্ধিতদের গড় বয়সের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প১ ঘণ্টা আগে

চলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি।

চলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি।

গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের গড় বয়স ছিল ৫১ বছর। তবে এবার মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটারদের গড় বয়স আরও কমে ৫০ বছরে নেমেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ