দেশে এক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে ইলিশ আহরণ বাড়ার পর গত বছর কমেছে। সম্প্রতি মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইলিশ আহরণ ৪২ হাজার টন কমেছে।

মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ইলিশ আহরণ হয় ৫ লাখ ৭১ হাজার টন। গত অর্থবছরে ইলিশ আহরণের পরিমাণ ৫ লাখ ২৯ হাজার টন। সে হিসাবে ইলিশ আহরণ ৪২ হাজার টন কম হয়েছে।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র বলছে, ২০১৪ সালে ইলিশ আহরণ হয়েছিল ৩ লাখ ৮৫ হাজার টন। ২০১৬ সালে সেই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৮৭ হাজার টন। পরের তিন বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টনে। ২০১৭-১৮ সালে ইলিশ আহরণ ৫ লাখ ১৭ হাজার থেকে ক্রমশ বেড়ে ২০২১-২২ সালে এসে ৫ লাখ ৬৬ হাজার টনে উন্নীত হয়েছিল।

ইলিশ আহরণ কমার কারণ সম্পর্কে চাঁদপুরে অবস্থিত মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু কাওসার দিদার বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত বছর জেলেরা অন্য সময়ের মতো নদী ও সাগরে যেতে পারেননি। ইলিশের প্রধান তিনটি মাইগ্রেশন পয়েন্ট মেঘনা-তেঁতুলিয়া, পায়রা-বিষখালী ও সুন্দরবন অঞ্চলে নাব্যতার সংকট প্রকট। ফলে ইলিশের চলাচলে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ইলিশ আহরণের একটি সীমা আছে, কিন্তু বাংলাদেশ সেই সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। সেই ফলাফলও স্পষ্ট হয়েছে, ইলিশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

তবে আশার কথা শুনিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। তিনি বলেন, জুন-জুলাই মাসে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। কিছু সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জাটকা সংরক্ষণে অভিযান চালানো হলেও জেলেরা নানা পদ্ধতিতে নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ শিকার করেন। জনবল কম থাকায় শত শত কিলোমিটার নদী ও মোহনা পাহারা দেওয়া সম্ভব হয় না।

ইলিশের জীবনচক্র বিষয়ে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য নদীতে আসে। এসব ডিম পোনায় পরিণত হয়। তারপর জাটকায় (২৫ সেন্টিমিটারের ছোট ইলিশ) পরিণত হয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নদীতেই বিচরণ করে। এই সময়টায় যদি জাটকা রক্ষা না করা যায়, তাহলে ইলিশ উৎপাদন কমে যাবে। এটা কেউ ঠেকাতে পারবে না। একটি জাটকার বড় ইলিশে (কমপক্ষে ৫০০ গ্রাম) পরিণত হতে এক বছরের বেশি সময় লাগে। এ জন্য জেলেকে কমপক্ষে দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে বড় ইলিশের জন্য। আর বড় ইলিশ পেতে হলে অবশ্যই অবৈধ জাল ধ্বংস করতে হবে, অভয়াশ্রমকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিতে হবে।

ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, নদ–নদীর গভীরতা হ্রাস, দূষণসহ নানা কারণে ইলিশের উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে। ইলিশ সংবেদনশীল মাছ। বাসস্থান পরিবর্তন হলে ঘন ঘন গতিপথও পরিবর্তন করে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রাবনাবাদ নদ ও বরগুনার পায়রা-বিষখালী-বলেশ্বর মোহনায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ইলিশের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রগুলো ঘিরে শিল্পায়ন হয়েছে। এসব বিষয় ইলিশকে পথ পরিবর্তনে বাধ্য করছে, যার প্রভাব পড়েছে ইলিশ উৎপাদনে। এ ছাড়া জাটকা সুরক্ষায় কয়েক বছর ধরে উদাসীনতা ছিল বলে মনে করেন তিনি।

ইলিশ আহরণ ও প্রজননের বিষয়গুলো বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, নদীর স্রোত, গভীরতা, জলস্ফীতি, খাদ্য ও পানির গুণগত মানের সঙ্গে সম্পর্কিত। ২০০১ সাল থেকে দেশে ইলিশ আহরণের পরিমাণ কমতে শুরু করেছিল। ওই বছর ২ লাখ ২০ হাজার ৫৯৩ টন ইলিশ আহরণ করা হয়েছিল। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তা সোয়া ৩ লাখ টনের ওপরে ওঠেনি।

ইলিশ আহরণ আবার বাড়াতে হলে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সাগরমোহনায় ছোট ফাঁসজালের অবাধ ব্যবহার ও বাণিজ্যিক ট্রলারের ব্যবহার কমাতে হবে। ইলিশ রক্ষায় ব্যবস্থাপনা কাঠামোকে ঢেলে সাজানো ও নিবিড় গবেষণা দরকার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ জ র টন

এছাড়াও পড়ুন:

সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে

সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।

পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।

অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ  ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।

একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের  প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে,  মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে  ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির
  • বেসরকারি খাত পিপিপিতে আকৃষ্ট নয়, বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা
  • কমপ্লায়েন্সের অভাবে ধুঁকছে চামড়া খাতের রপ্তানি
  • সাগরে ইলিশ মিলছে কম, চড়া দাম আড়তে
  • ৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ
  • নিষেধাজ্ঞা চলাকালে নৌবাহিনীর অভিযানে ৯৯ কোটি টাকার মাছ ও জাল জব্দ