ইন্টারনেট বা অন্তর্জাল ছাড়া এখন আমাদের জীবন চলে না। এর মাধ্যমে আমরা তারবিহীন উপায়ে হাজারো মাইল দূরে বার্তা পাঠাতে পারি। ই-মেইল, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ফোনকল– সবই আমাদের যোগাযোগকে করেছে সহজতর। আর তা সম্ভব হয়েছে অদৃশ্য অন্তর্জালের কারণেই। কিন্তু মানুষ ছাড়া অন্যরা কি এ তারবিহীন যোগাযোগে সক্ষম?
নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে যুগান্তকারী তথ্য। প্রকৃতির নিজস্ব ‘ইন্টারনেট’ রয়েছে, যা সম্পর্কে এতদিন আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃতিতে জন্তু-জানোয়ার, গাছগাছালি থেকে শুরু করে জীবাণু ক্রমাগতভাবে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছে। তারা সংকেত দিচ্ছে, ঘ্রাণ শনাক্ত করছে, তাপমাত্রার পরিবর্তনে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। সেই সঙ্গে অন্যদের আচরণ বিশ্লেষণ করছে। এ ধরনের বিনিময় প্রায়ই তাদের কাজকর্মে দৃশ্যমান।
নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ ছাড়া প্রকৃতির অন্য বাসিন্দাদের যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে অদৃশ্য সুতার জাল। জার্মান সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটিভ বায়োডাইভারসিটি রিসার্চ (আইডিআইভি) এবং ফ্রিডরিখ শিলার ইউনিভার্সিটি জেনার ডক্টর উলরিখ ব্রোসের নেতৃত্বে এ গবেষণা প্রকৃতিতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধারণাকে প্রসারিত করে।
বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব, বাস্তুতন্ত্রগুলো একটি বিশাল তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থার মাধ্যমে কাজ করে। যাকে গবেষকরা ‘প্রকৃতির ইন্টারনেট’ বলে থাকেন। এ ব্যবস্থা দৃশ্যমানতার বাইরেও যায়। কীভাবে তথ্য (কেবল পদার্থ ও শক্তি নয়) বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে প্রবাহিত হয়, এটি তা ট্র্যাক করে। এ তথ্য বিভিন্ন প্রজাতির আচরণ, গতিশীলতা ও পরিবেশগত ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে।
গবেষণায় পাওয়া এ ধারণা বাস্তুতন্ত্রীয় তত্ত্বে বিপ্লব আনতে পারে। ‘প্রকৃতির ইন্টারনেট’ প্রজাতিগুলোকে কেবল ভক্ষক, পরাগায়নকারীই নয়, সংকেত ব্যবহারকারী ও প্রক্রিয়াকরণকারী হিসেবে বিবেচনা করে। এর মাধ্যমে এটি প্রকৃতি আসলে কী, তা সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উন্মুক্ত করে।
গত কয়েক দশক ধরে বাস্তুবিদরা খাদ্য-জালের মানচিত্র তৈরি করেছেন। তারা শক্তি স্থানান্তরও ট্র্যাক করেছেন। কে কাকে খায়, কে বীজ বহন করে, কে ফুলের পরাগায়ন করে, তারা তা পর্যবেক্ষণ করেছেন। এ নিদর্শনগুলো এমন মডেল তৈরি করেছে, যা প্রজাতির ভূমিকা ও শক্তির ভারসাম্য ব্যাখ্যা করে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কিছু অনুপস্থিত ছিল।
নতুন গবেষণাপত্রটি দেখায়, শুধু ভৌত সংযোগের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর বাদ দেয়। সতর্কতা, ইঙ্গিত, সংকেতসহ তথ্যসংযোগ প্রকৃতিতে থাকা প্রজাতিগুলো কখন ও কোথায় চলাচল করে, তা প্রভাবিত করে। প্রাণীরা কী করে ও বিভিন্ন সম্প্রদায় কীভাবে স্থিতিশীল থাকে বা ভেঙে পড়ে, এগুলো তা প্রভাবিত করে।
গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক উলি ব্রোস মনে করেন, প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের প্রক্রিয়াগুলো বুঝতে প্রকৃতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্যপ্রবাহের বোঝা প্রয়োজন। বিষয়টি জটিল, কিন্তু বাস্তবিক। বাস্তুতন্ত্র কেবল ধ্বংসের শিকল নয়। এটা দর্শণার্থী, শ্রোতা ও সাড়াদানকারীর একটা নেটওয়ার্ক, যার ভিত্তি তথ্যের অংশীদারিত্ব। সূত্র : আর্থ ডটকম।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক ভারতে থেকে থাকলে, তাঁদের উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে।
ভারত থেকে কিছু মানুষকে বিভিন্ন জেলার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছি। আমাদের দেশের নাগরিক যদি ভারতে থাকেন, তাহলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠালে আমরা নেব। কিন্তু তাঁদের জঙ্গলের ভেতর ও নদীতে ফেলে যাওয়া কোনো সভ্য দেশের আচরণ হওয়া উচিত নয়।’
আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ঈদ–পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় ও আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে মারধর করলে পুলিশকে খুব সচল বলে ভাবা হতো। কিন্তু বর্তমান সরকার এমন পুলিশ চাইছে না। আমরা মানবিক পুলিশ চাচ্ছি, যারা সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করবে। এখনকার পুলিশ হচ্ছে মানবিক পুলিশ। তারা এখন ভালো ব্যবহার করে দেখেই সাধারণ জনগণ ভাবছে, পুলিশ সচল হয়নি। বর্তমান পুলিশ কিন্তু আগের চেয়ে আরও বেশি সক্রিয়।’
আরও পড়ুন২৪ দিনে ১১৪৩ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ০১ জুন ২০২৫আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা প্রস্তুত এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন যখন নির্বাচনের সময় ঘোষণা করবে, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সে অনুযায়ী প্রস্তুত রয়েছে।’
আরও পড়ুনভারত থেকে ‘পুশ ইন’ ঠেকানো সম্ভব নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা০৩ জুন ২০২৫