চিন্তায় ফেলা আলুই এনেছে স্বস্তির হাসি
Published: 13th, April 2025 GMT
সারাবছরের সংসার খরচ। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা। আছে ঋণের বোঝা। সবকিছুর জন্য আলুর ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল উত্তরের কৃষক। কিন্তু কিছু মুনাফালোভীর কারসাজির কারণে হিমাগারে আলু রাখতে পারেননি তারা। এতে অনেক চাষিই মুষড়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তাদের জন্য সুখবর নিয়ে এসেছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি আলু কিনে বিদেশে পাঠাচ্ছে। ফলে যে আলু নিয়ে দু’দিন আগেও কৃষকের কপালে ছিল চিন্তার ভাঁজ, তাদের মুখেই এখন চওড়া হাসি।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার জুয়ানসেতরা চরের কৃষক লুৎফর রহমান হাজি। তিনি ছয় একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। ফলন ভালো পেয়েছেন। কিন্তু দাম পাচ্ছিলেন না। আবার হিমাগারেরও ব্যবস্থা করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আলু নিয়া কী যে বিপদে পড়ছিলাম, তা কয়য়া সারন যাইত না। শ্যাষে কোম্পানি আইসা আমাগোর আলুর বিহিত হইছে। দামও ভালা পাইছি।’
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি রাজধানী ঢাকাভিত্তিক। বারুন ক্রোপ কেয়ার লিমিটেড ও বারুন এগ্রো লিমিটেড। তারা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে আলু কিনে প্যাকেটজাত করে বিদেশে পাঠাচ্ছে। শুধু উলিপুর নয়; গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, নীলফামারী, রংপুরের কাউনিয়া থেকেও আলু কিনছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব আলুর গন্তব্য মালয়েশিয়া, দুবাই, ব্রুনাই, সিঙ্গাপুর, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা।
প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্য, উলিপুর চরের আলুর মান খুব ভালো। অল্প পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় এখানকার আলু দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। ফলে পুষ্টিমান ভালো। খেতেও সুস্বাদু। একই ভাষ্য উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.
উলিপুর থেকে ১৮-১৯ টাকা কেজি দরে আলু কিনছে রপ্তনিকারক প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ছে আরও ২ টাকা ৫০ পয়সা। বিদেশে রপ্তানি করে কেজিতে কী পরিমাণ লাভ হবে, তা জানা সম্ভব হয়নি।
এই উপজেলার আরেকটি চর গোড়াই পিয়ার। সেখানকার কৃষক রানা মিয়া। তিনিও আলুর বাম্পার ফলন পেয়েছেন। ১৬ একর জমিতে চাষ করেছিলেন। কিন্তু আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে বারবার ধরনা দিয়েও একটা স্লিপ জোগাড় করতে পারেননি। দালালের শরণাপন্ন হলেও কাজ হয়নি।
কৃষক রানা মিয়াও বারুন গ্রুপের কাছে আলু বিক্রি করেছেন। যে কষ্টের ফসল সত্যিই কষ্টের বোঝা হয়ে উঠেছিল, সেই আলু নিয়ে তিনিই এখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। তিনি ১৭ একরে চাষ করে পেয়েছেন ২৫ টন। কোম্পানির কাছে বিক্রি করেছেন ১৯ টন। তাদের মতো নুর ইসলাম ও মিন্টু মিয়াও আলু বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। মিন্টুর ৬ একরে উৎপাদন হয়েছে ১০ টন। কোম্পানি নিয়েছে ৬ টন।
বারুন গ্রুপের স্থানীয় সরবরাহকারী আবু ইমরান। তিনি বলেন, বিদেশিরা ভালো মানের আলু ছাড়া নেয় না। তাই সান সাহিন জাতসহ উন্নত জাতের আলু কিনে বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছেন তারা। উলিপুর থেকে চার হাজার টন আলু নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ২ হাজার টনের বেশি কেনা হয়েছে।
১০০ কনটেইনারে ২ হাজার ৮০০ টন আলু বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বারুন ক্রোপ কেয়ার লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ছাদেকুল ইসলাম।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, এ বছর উপজেলায় আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৮ হাজার ৬শ টন। উৎপাদন হয়েছে ৩৫ হাজার ১০০ টন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আল উল প র কর ছ ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’