দিনটি ছিল ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল। কাজাখস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়ন পরিচালিত মহাকাশ বন্দর বাইকোনুর কসমোড্রমে শীতের চাদর ভেদ করে ভোরের আলো ফুটতেই শুরু হয়েছে প্রকৌশলীদের দৌড়ঝাঁপ। প্রতিটি যন্ত্র, প্রতিটি সংযোগ—দ্বিগুণ সতর্কতায় পরীক্ষা চলছে। লঞ্চপ্যাডে (যে স্থান থেকে রকেট উৎক্ষেপণ হয়) তখন উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। এর মধ্যে সেখানে অপেক্ষমাণ ভস্তক–১ রকেটের ককপিটে গিয়ে বসলেন এক তরুণ। গায়ে চাপানো কমলা রঙের স্পেস স্যুট আর চোখে বিস্ময়ের ঝিলিক।

সেই ঐতিহাসিক সকালে ২৭ বছর বয়সী ওই তরুণকে নিয়ে ছোট্ট মহাকাশ যানটি ছুটে গেল অসীম অজানার উদ্দেশ্যে। সামনে সীমাহীন অনিশ্চয়তা। আর কখনো চেনা ডেরায় ফিরতে পারবেন কি না, জানা নেই। যে গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটে চলেছেন সেখানে পৌঁছাতে পারবেন কি না, তার ঠিক নেই। যাত্রাপথে উনিশ-বিশ হলে নেই বেঁচে ফেরার একরত্তি সম্ভাবনা। এরপরও এক অদম্য নেশায় পাড়ি দিলেন পৃথিবী নামক গ্রহের চৌহদ্দি। আর ফিরলেন ইতিহাসের খোলনলচে বদলে দিয়ে। মহাকাশে যাওয়া প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পা রাখলেন পৃথিবীর বুকে।  

ইউরি গাগারিনের ছেলেবেলা কেটেছে সোভিয়েত রাশিয়ার স্মোলেনস্কক অঞ্চলের ক্লুশিনো গ্রামে, জন্মও সেখানেই। বাবা-মা দুজনই ছিলেন কৃষক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁদের পরিবার নাৎসিদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। যুদ্ধের প্রভাব সংসারে এসে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব সংসারের হাল ধরার তাড়না অনুভত করেন তিনি। ১৯৪৯ সালে বয়স যখন ১৫, ঠিক করলেন মাধ্যমিক স্কুলের পড়া ছেড়ে দিয়ে কাজে নেমে পড়বেন।

বলছি বিখ্যাত সোভিয়েত মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিনের কথা। কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া গ্যাগারিন কৈশোরে ছিলেন ঢালাইকার। আকাশে ওড়ার অদম্য নেশা তাঁকে ঢালাই কারখানা থেকে নিয়ে গেছে উড়োজাহাজের ককপিট পর্যন্ত। সময়ের আবর্তে সেই স্বপ্ন আকাশ ছাড়িয়ে ছুঁয়েছে মহাকাশের গণ্ডি। ইউরি গ্যাগারিনের দুঃসাহসী অভিযান খুলে দিয়েছে মহাকাশ গবেষণা নিয়ে অপার সম্ভাবনার দুয়ার।
প্রথম মানব হিসেবে এই তরুণের মহাকাশে পা রাখার ঘটনা সে সময় বিশ্বের বুকে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বিশ্বদরবারে রাতারাতি তারকা বনে যান ইউরি গ্যাগারিন। তাঁকে দেওয়া হয় জাতীয় বীরের খেতাব। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেতর-বাহির থেকে তাঁর ঝুলিতে যোগ হতে থাকে একের পর এক পুরস্কার-সম্মাননা।

সংসারের হাল ধরতে ঢালাইকারের চাকরি

ইউরি গ্যাগারিনের ছেলেবেলা কেটেছে সোভিয়েত রাশিয়ার স্মোলেনস্কক অঞ্চলের ক্লুশিনো গ্রামে, জন্মও সেখানেই। বাবা-মা দুজনই ছিলেন কৃষক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁদের পরিবার নাৎসিদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। যুদ্ধের প্রভাব সংসারে এসে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব সংসারের হাল ধরার তাড়না অনুভব করেন তিনি।

১৯৪৯ সালে বয়স যখন ১৫, ঠিক করলেন মাধ্যমিক স্কুলের পড়া ছেড়ে দিয়ে কাজে নেমে পড়বেন। বাবা-মা ছাড়তে না চাইলেও সিদ্ধান্তে অনড়, চলে গেলেন মস্কোয় চাচার কাছে। তাঁর পরামর্শে মস্কোর উপকণ্ঠে ল্যুবের্তস্কি শহরের কৃষিযন্ত্র বৃত্তি বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন। তরুণ শ্রমিকদের সন্ধ্যাকালীন বিদ্যালয়ে তার ভবিষ্যৎ পেশা নির্ধারিত হলো ঢালাই কলঘরের ঢালাইকার।  

—‘পৃথিবী দেখছি’ শিরোনামে নিজের লেখা বইয়ে ইউরি গ্যাগারিন বলেছেন, ‘পেশাটা সহজ নয়। তাতে শুধু জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নয়, রীতিমতো দৈহিক শক্তিও দরকার।’
আকাশে ওড়ার নেশা

মহাকাশে সফর অভিযানের পর বিশ্বদরবারে রাতারাতি তারকা বনে যান ইউরি গাগারিন.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিল র‍্যাব, চায় সাইবার ইউনিট

অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অভিনব কৌশলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা করা নতুন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট চেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সেখানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র‍্যাবসহ একাধিক ইউনিট একুশ শতকের জটিল অপরাধ ও তা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনে। গতকাল পুলিশের যে ইউনিটগুলো পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তা হলো হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শিল্প পুলিশ, র‍্যাব, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ ও সিআইডি।

কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ভুক্তভোগী র‍্যাবের সহযোগিতা পেতে পারেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি দ্রুত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। র‍্যাবের জন্য আলাদা একটি সাইবার ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। র‍্যাব জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র‌্যাব। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তদন্ত সেলকে শক্তিশালী করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সেলও গঠন করা হয়েছে।’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের মতে, র‍্যাব ডিজির উপস্থাপনায় মূলত বাহিনীর অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিআইডি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) গাজী জসীম অনুষ্ঠানে জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলার অনুসন্ধানে সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করেছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক সম্পদের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে চলছে তদন্ত। এস আলম, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মামলায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ফরেনসিক শাখা দিন দিন অপরাধ বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সিআইডিতে আছে কাঠামোগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল যানবাহন নেই। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনিয়মিত বদলি আতঙ্ক রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারে রয়েছে সরঞ্জামের অভাব। ফরেনসিক ল্যাবে সফটওয়্যারের জন্য বাজেট-স্বল্পতার কথা তুলে ধরেন তারা।

হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের সিসিটিভি থেকে হাইওয়ে পুলিশ ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ক্লোন নাম্বারপ্লেট শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন করে থাকে।

এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক রাখা) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ডিটেনশনে নেওয়া উচিত। সরকারের অনুমতি পেলে এসবির পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিস্তারিত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। ডিটেনশনে নেওয়ার জন্য যাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ পেশাদার অপরাধী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ