ঢালাইকার থেকে প্রথম মানুষ হিসেবে যেভাবে মহাকাশে পা রাখলেন গ্যাগারিন
Published: 14th, April 2025 GMT
দিনটি ছিল ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল। কাজাখস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়ন পরিচালিত মহাকাশ বন্দর বাইকোনুর কসমোড্রমে শীতের চাদর ভেদ করে ভোরের আলো ফুটতেই শুরু হয়েছে প্রকৌশলীদের দৌড়ঝাঁপ। প্রতিটি যন্ত্র, প্রতিটি সংযোগ—দ্বিগুণ সতর্কতায় পরীক্ষা চলছে। লঞ্চপ্যাডে (যে স্থান থেকে রকেট উৎক্ষেপণ হয়) তখন উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। এর মধ্যে সেখানে অপেক্ষমাণ ভস্তক–১ রকেটের ককপিটে গিয়ে বসলেন এক তরুণ। গায়ে চাপানো কমলা রঙের স্পেস স্যুট আর চোখে বিস্ময়ের ঝিলিক।
সেই ঐতিহাসিক সকালে ২৭ বছর বয়সী ওই তরুণকে নিয়ে ছোট্ট মহাকাশ যানটি ছুটে গেল অসীম অজানার উদ্দেশ্যে। সামনে সীমাহীন অনিশ্চয়তা। আর কখনো চেনা ডেরায় ফিরতে পারবেন কি না, জানা নেই। যে গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটে চলেছেন সেখানে পৌঁছাতে পারবেন কি না, তার ঠিক নেই। যাত্রাপথে উনিশ-বিশ হলে নেই বেঁচে ফেরার একরত্তি সম্ভাবনা। এরপরও এক অদম্য নেশায় পাড়ি দিলেন পৃথিবী নামক গ্রহের চৌহদ্দি। আর ফিরলেন ইতিহাসের খোলনলচে বদলে দিয়ে। মহাকাশে যাওয়া প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পা রাখলেন পৃথিবীর বুকে।
ইউরি গাগারিনের ছেলেবেলা কেটেছে সোভিয়েত রাশিয়ার স্মোলেনস্কক অঞ্চলের ক্লুশিনো গ্রামে, জন্মও সেখানেই। বাবা-মা দুজনই ছিলেন কৃষক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁদের পরিবার নাৎসিদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। যুদ্ধের প্রভাব সংসারে এসে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব সংসারের হাল ধরার তাড়না অনুভত করেন তিনি। ১৯৪৯ সালে বয়স যখন ১৫, ঠিক করলেন মাধ্যমিক স্কুলের পড়া ছেড়ে দিয়ে কাজে নেমে পড়বেন।বলছি বিখ্যাত সোভিয়েত মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিনের কথা। কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া গ্যাগারিন কৈশোরে ছিলেন ঢালাইকার। আকাশে ওড়ার অদম্য নেশা তাঁকে ঢালাই কারখানা থেকে নিয়ে গেছে উড়োজাহাজের ককপিট পর্যন্ত। সময়ের আবর্তে সেই স্বপ্ন আকাশ ছাড়িয়ে ছুঁয়েছে মহাকাশের গণ্ডি। ইউরি গ্যাগারিনের দুঃসাহসী অভিযান খুলে দিয়েছে মহাকাশ গবেষণা নিয়ে অপার সম্ভাবনার দুয়ার।
প্রথম মানব হিসেবে এই তরুণের মহাকাশে পা রাখার ঘটনা সে সময় বিশ্বের বুকে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বিশ্বদরবারে রাতারাতি তারকা বনে যান ইউরি গ্যাগারিন। তাঁকে দেওয়া হয় জাতীয় বীরের খেতাব। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেতর-বাহির থেকে তাঁর ঝুলিতে যোগ হতে থাকে একের পর এক পুরস্কার-সম্মাননা।
সংসারের হাল ধরতে ঢালাইকারের চাকরি
ইউরি গ্যাগারিনের ছেলেবেলা কেটেছে সোভিয়েত রাশিয়ার স্মোলেনস্কক অঞ্চলের ক্লুশিনো গ্রামে, জন্মও সেখানেই। বাবা-মা দুজনই ছিলেন কৃষক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁদের পরিবার নাৎসিদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। যুদ্ধের প্রভাব সংসারে এসে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব সংসারের হাল ধরার তাড়না অনুভব করেন তিনি।
১৯৪৯ সালে বয়স যখন ১৫, ঠিক করলেন মাধ্যমিক স্কুলের পড়া ছেড়ে দিয়ে কাজে নেমে পড়বেন। বাবা-মা ছাড়তে না চাইলেও সিদ্ধান্তে অনড়, চলে গেলেন মস্কোয় চাচার কাছে। তাঁর পরামর্শে মস্কোর উপকণ্ঠে ল্যুবের্তস্কি শহরের কৃষিযন্ত্র বৃত্তি বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন। তরুণ শ্রমিকদের সন্ধ্যাকালীন বিদ্যালয়ে তার ভবিষ্যৎ পেশা নির্ধারিত হলো ঢালাই কলঘরের ঢালাইকার।
—‘পৃথিবী দেখছি’ শিরোনামে নিজের লেখা বইয়ে ইউরি গ্যাগারিন বলেছেন, ‘পেশাটা সহজ নয়। তাতে শুধু জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নয়, রীতিমতো দৈহিক শক্তিও দরকার।’
আকাশে ওড়ার নেশা
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চগড়ে সীমান্ত এলাকা থেকে যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার
পঞ্চগড়ে ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা বাড়ি থেকে রাজু ইসলাম (৩৫) নামের এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে মারা গেছেন বলে ধারণা করছেন স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা। তবে ওই সীমান্তে বিএসএফের গুলির কোনো খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
রোববার দুপুর পৌনে ১২টায় লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় সদর থানা-পুলিশ। নিহত রাজু ইসলামের বাড়ি সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা ঝুলিপাড়া এলাকায়। তিনি বিবাহিত এবং তাঁর তিন ছেলেমেয়ে আছে।
নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, রাজু গতকাল শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত বাড়িতেই ছিলেন। এরপর তিনি কখন বাইরে গেছেন, স্বজনদের কেউ জানেন না। রাত তিনটার দিকে তাঁকে কে বা কারা বাড়ির বাইরে আহত অবস্থায় ফেলে যায়। এ সময় তাঁর চিৎকারে স্বজনেরা ঘুম থেকে উঠে আহত অবস্থায় তাঁকে দেখে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে দেবীগঞ্জ উপজেলার কাছাকাছি গেলে তিনি মারা যান। পরে লাশ বাড়িতে আনা হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, প্রথম দিকে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, রাজু স্ট্রোক (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ) করে মারা গেছেন। পরে তিনি গিয়ে দেখেন, তাঁর দুটি পায়ের হাঁটু ও আশপাশে গুলির চিহ্ন। ভারত সীমান্তে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে তিনি মারা গেছেন বলে তাঁরা ধারণা করছেন। কারণ, তাঁর পায়ে স্পষ্ট গুলির চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, সকালে বিষয়টি জানাজানির পর বাড়িতে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে গেছে।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দিবাগত রাতে ওই এলাকায় বিজিবির দুটি টহল দল দায়িত্বরত ছিল। তখন সীমান্তে গুলির কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিএসএফও গুলি করেনি বলে জানিয়েছে। এমনকি পরিবার থেকে প্রথম দিকে তাঁদের জানানো হয়, তিনি হৃদ্রোগে মারা গেছেন। তবে তিনি যে আহত হয়েছেন, সেটা সীমান্ত এলাকায় হয়েছেন নাকি বাংলাদেশের ভেতরে হয়েছেন, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. শইমী ইমতিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ব্যক্তির লাশ বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের দুই পায়ে গুলির চিহ্ন আছে, সেটি তাঁরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন। তবে গুলি কারা করেছে বা কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে, সেটা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলার প্রক্রিয়া চলছে।