ভুলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত ব্যক্তিকে ফেরত দেবে না এল সালভাদর: প্রেসিডেন্ট নায়েব
Published: 15th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের বাসিন্দা কিলমার আবরেগো গার্সিয়াকে ফেরত দেবে না এল সালভাদর। গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেছেন এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়েব বুকেলে।
গতকাল সোমবার ওভাল অফিসে গার্সিয়াকে ফেরত পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রেসিডেন্ট বুকেলে বলেন, ‘এই প্রশ্নই অযৌক্তিক। কীভাবে আমি একজন সন্ত্রাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করব? আমি এটা করছি না। আমার তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানোর ক্ষমতাই নেই। আমি দেশে সন্ত্রাসীদের ছেড়ে দিতে খুব একটা পছন্দ করি না।’
গত মার্চে ভেনেজুয়েলার দুই শতাধিক নাগরিকসহ আড়াই শ’র বেশি মানুষকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করে এল সালভাদরের একটি কারাগারে পাঠিয়ে দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। ওই দলে আবরেগো গার্সিয়াও আছেন।
এল সালভাদর বংশোদ্ভূত গার্সিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করা যাবে না—যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত তাঁকে এই সুরক্ষা দিয়েছে। ২০১৯ সালে একজন অভিবাসন বিচারক গার্সিয়াকে বিতাড়নের ওপর ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
এ মাসের শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসন স্বীকার করেছে, প্রশাসনিক ভুল থেকে গত ১৫ মার্চ গার্সিয়াকে বিতাড়িত করে এল সালভাদরের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যদিও তারা এটাও বলেছে, গার্সিয়া একটি সন্ত্রাসী দলের (এমএস-১৩) সদস্য। গার্সিয়ার আইনজীবী এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প প্রশাসনকে গার্সিয়াকে দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া সহজতর করতে বলেছেন।
জবাবে ট্রাম্প প্রশাসন গত রোববার দাবি করেছে, তাঁরা গার্সিয়াকে ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে আইনগতভাবে বাধ্য নয়।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, কিশোর বয়সে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা গার্সিয়ার বয়স এখন ২৯ বছর। ২০১৯ সালে আরও তিন ব্যক্তির সঙ্গে মেরিল্যান্ডে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাঁকে আটক করে।
কিন্তু সে সময় একজন অভিবাসন বিচারক গার্সিয়াকে বিতাড়ন থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার দেন। এর কারণ হিসেবে বিচারক বলেছিলেন, গার্সিয়াকে দেশে ফেরত পাঠানো হলে স্থানীয় সন্ত্রাসী দল তাঁর ক্ষতি করতে পারে।
বিবিসির খবরে আরও বলা হয়, গত ১২ মার্চ মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ আইসিই মেরিল্যান্ডে চলন্ত গাড়ি থেকে গার্সিয়াকে গ্রেপ্তার করে এবং কোনো ধরনের নোটিশ, আইনি প্রক্রিয়া বা শুনানি ছাড়াই তিন দিনের ভেতর যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাঁকে বিতাড়িত করে এল সালভাদরের কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনকারাগারে রাখার জন্য ভেনেজুয়েলার ২৩৮ নাগরিককে এল সালভাদরে পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র১৬ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সম্প্রতি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর মুসলিমদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় ও তাঁদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। মানবাধিকারকর্মীদের আশঙ্কা, উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা পেহেলগামের হামলাকে ব্যবহার করে দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর দমন–পীড়ন আরও বৃদ্ধি করছে।
কাশ্মীরের পেহেলগাম শহরের কাছে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে একজন বাদে বাকি প্রায় সবাই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। পর্যটক হিসেবে তাঁরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পেহেলগামে গিয়েছিলেন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ জোরালোভাবে নাকচ করে দিয়েছে।
পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার জবাবে ভারত সামরিকভাবে পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে তাদের ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়া হবে। পাকিস্তান সরকারের একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন ভারত শিগগিরই সামরিক হামলা চালাতে পারে।
এই মুহূর্তে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মূলত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন আন্তসীমান্ত নদীগুলোর পানিপ্রবাহ বন্ধের হুমকি দিচ্ছে। একই সঙ্গে বিজেপি সরকার ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিমদের হয়রানি করছে। তারা এটিকে ‘অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান’ বলে দাবি করছে।
মোদির বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে কর্তৃপক্ষ এই সুযোগে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ এবং ‘রোহিঙ্গাদের’ বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। রোহিঙ্গারা মূলত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন। ‘পাকিস্তানি’ বা ‘বাংলাদেশি’ তকমা অনেক সময়েই হিন্দুত্ববাদীরা ভারতের অভ্যন্তরীণ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে থাকে।
উত্তর প্রদেশ ও কর্ণাটক—এই দুই রাজ্যে মুসলিমদের হত্যার খবর পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমের খবরে সেগুলোকে বিদ্বেষমূলক অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরে ইতিমধ্যেই শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে যাঁদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তাঁদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক সরকারি কর্মকর্তার মতে, প্রায় দুই হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে, যা অনেকটা সমষ্টিগত শাস্তির মতো।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি