বিনিয়োগ সম্মেলনে দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা রাখা জরুরি বলে মনে করেন মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান। তিনি বলেছেন, ‘সম্মেলনে যেসব আশাব্যঞ্জক কথাবার্তা বলা হয়েছে, বিনিয়োগের জন্য যে প্রতিশ্রুতিগুলো দেওয়া হয়েছে, তা রাখা হচ্ছে, এটি দেখতে চাই।’

আজ মঙ্গলবার প্রথম আলো অনলাইনের ‘বার্তাকক্ষে’ বাংলাদেশের বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে আলোচনায় ইয়াসির আজমান এসব কথা বলেন।

‘বার্তাকক্ষ’ শিরোনামের আলোচনা অনুষ্ঠানটি প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। এতে সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।

ঢাকায় ৭ থেকে ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলন উপলক্ষে মঙ্গলবারের আলোচনার বিষয় ছিল বিনিয়োগ। এতে অতিথি ছিলেন গ্রামীণফোনের সিইও।

ইয়াসির আজমান বলেন, বাংলাদেশের সামনে বড় একটি অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি এ দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বিনিয়োগ আগ্রহে সমস্যাগুলোর সমাধানে উদ্যোগ দরকার।

গ্রামীণফোনের সিইওর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তাঁর চোখে বড় সমস্যা কী কী। জবাবে তিনি চারটি সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এগুলো হলো মূলধনের নিরাপত্তার অভাব, অনেক ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর অধিকার খর্ব হওয়া, দুর্বোধ্য করব্যবস্থা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে ঘাটতি।

ইয়াসির আজমান বলেন, একজন বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আসেন পুঁজি নিয়ে। তিনি যেন ব্যবসা করে লভ্যাংশ নিজ দেশে নিতে পারেন, সেই নিশ্চয়তা দরকার। বিনিয়োগকারীরা সম্মানের জায়গায় থাকবেন, সেই পরিবেশ তৈরিতে কাজ করার সুযোগ আছে।

করনীতির চটজলদি পরিবর্তন নিয়ে গ্রামীণফোনের সিইও বলেন, বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে বিনিয়োগ করেন। দেশের করব্যবস্থা বারবার পরিবর্তিত হচ্ছে কি না, লভ্যাংশ পুরোটাই সরকারের কাছে চলে যাচ্ছে কি না, বিনিয়োগকারীরা পুনরায় বিনিয়োগ করতে পারছেন কি না—এগুলো বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিতে থাকে।

কোনো দেশে যদি করব্যবস্থা দীর্ঘ মেয়াদে কেমন থাকবে, তা বোঝা যায় এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে, তাহলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ হবেন বলে মনে করেন ইয়াসির আজমান।

বিনিয়োগ সম্মেলন নিয়ে মূল্যায়ন জানতে চাইলে ইয়াসির আজমান বলেন, বিনিয়োগ সম্মেলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। তবে বাইরে থেকে দেখার চেষ্টা করলে তাঁর মত হলো, গভীর চিন্তা করে সম্মেলনটি সাজানো হয়েছে। এটার প্রশংসা করা উচিত।

‘আমাদের দেশে বিদেশি বিনিয়োগকারী আছেন। আমি যখন দেশের বাইরে যাই এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে কথা বলি, তখন অনেক বেশি নেতিবাচক কথাবার্তা হয়। অথচ আমাদের জনগণ যে অনেক বেশি সৃষ্টিশীল, অনেক বেশি এনগেজ (সংযুক্ত), এই কথাগুলো বলা হয় না। আমার কাছে মনে হয় এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে এই কথাগুলো সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে,’ বলেন ইয়াসির আজমান।

গ্রামীণফোনের সিইও বলেন, এবারের সম্মেলনের পর চারদিকে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবাই আগ্রহ প্রকাশ করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বিনিয়োগ সম্মেলনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখার তাগিদ দেন।

কোন খাতে সংস্কার বেশি দরকার

বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রেক্ষাপটে কোন খাতে সংস্কার বেশি প্রয়োজনীয়, জানতে চাওয়া হয়েছিল ইয়াসির আজমানের কাছে। তিনি উল্লেখ করেন বিচার বিভাগের কথা।

ইয়াসির আজমান বলেন, প্রত্যেক বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের আইন মেনে চলে। তাদের যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে তারা কোথায় যাবে? সেখানে গিয়ে যেন দ্রুততার সঙ্গে ন্যায়বিচার পায়, সেটি নিশ্চিত করা দরকার। এ কারণে তিনি বিচার বিভাগে সংস্কার জরুরি মনে করেন।

সরাসরি বিনিয়োগের ওপর প্রভাব ফেলে না, এমন সংস্কারও দরকার বলে মনে করেন ইয়াসির আজমান। তিনি নির্বাচন কমিশন সংস্কারের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এটি রাজনৈতিক একটি ব্যাপার। কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ওপর প্রভাব ফেলে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনিয়োগ পরিবেশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে।

ইন্টারনেটের দাম কমবে কি

ইন্টারনেট–সেবার মান বাড়ানো এবং দাম কমাতে গ্রামীণফোনের দিক থেকে উদ্যোগ রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইয়াসির আজমান বলেন, মান ও দামের সম্পর্ক বিপরীতমুখী। মান বাড়লে দাম বাড়ে। ভালো জিনিস কিনতে গেলে একটু বেশি দাম দিতে হয়।

‘আমাদের গ্রাহকেরা যে আশা করেন এবং আমরাও যেটা চেষ্টা করি, মান বাড়বে, কিন্তু দাম কমবে। এখানে দুই দিকেই কাজ করতে হবে,’ বলেন গ্রামীণফোনের সিইও। তিনি বলেন, ‘টেলিযোগাযোগ খাতে মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরসি সংস্কার নিয়ে কাজ করছে। এই সংস্কার হলো টেলিযোগাযোগ খাতকে কীভাবে আরও দ্রুততার সঙ্গে মানুষের কল্যাণের জন্য এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। যেখানে মান বাড়বে, দাম কমবে এবং বিনিয়োগকারীরা ব্যবসাও করতে পারবে। কাজ শুরু হয়েছে। আমরা আশা করি, এক–দুই মাসের মধ্যে দেখতে পাব যে মান বাড়ানো, দাম কমানোর জন্য কতটুকু কাজ হলো।’

ইয়াসির আজমান বলেন, ‘মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি এবং আমরা কাজ করছি, কীভাবে স্মার্টফোনের দাম কমানো যায় এবং ইন্টারনেটকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ ম কম পর ব শ ক জ কর দরক র ব যবস সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

বিনা মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ, সারা দেশে ৮টি কেন্দ্রে

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ প্রশিক্ষণের মেয়াদ দুই মাস। প্রশিক্ষণটি আগামী ১২ অক্টোবর শুরু হবে, চলবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রশিক্ষণ শেষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সরকারি সনদ দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে আবেদন করতে হবে।

প্রশিক্ষণের বিষয়

১. বেসিক কম্পিউটার,

২. অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও ইউনিকোড বাংলা,

৩. ইন্টারনেট,

৪. গ্রাফিক ডিজাইন,

৫. ফ্রিল্যান্সিং,

৬. মার্কেটপ্লেস ও কনসালটিং।

আরও পড়ুনহার্ভার্ড এনভায়রনমেন্টাল ফেলোশিপ, দুই বছরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ডলার১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আবেদনের যোগ্যতা

১. ন্যূনতম দাখিল বা সমমানের পরীক্ষায় পাস হতে হবে,

২. হাফেজদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হবে,

৩. উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে,

৪. প্রার্থীকে কম্পিউটার চালনায় বেসিক জ্ঞান থাকতে হবে,

৫. যাঁদের নিজস্ব কম্পিউটার আছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে।যে ৮টি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

১. ঢাকা,

২. চট্টগ্রাম,

৩. রাজশাহী,

৪. খুলনা,

৫. বরিশাল,

৬. সিলেট,

৭. দিনাজপুর,

৮. গোপালগঞ্জ।

আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ২ লাখ টাকার প্রশিক্ষণ, নন-আইটি স্নাতক শিক্ষার্থীদের সুযোগ ৭ ঘণ্টা আগেদরকারি কাগজপত্র

১. শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদের সত্যায়িত ফটোকপি,

২. জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি,

৩. এক কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে,

৪. ইমামদের ক্ষেত্রে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা ওয়ার্ড কমিশনারের কাছ থেকে নেওয়া ইমামতির প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে,

৫. মাদ্রাসাছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে ছাত্রত্ব প্রমাণের কপি জমা দিতে হবে।

নিবন্ধন ফি

মনোনীত প্রার্থীদের নিবন্ধন ফি হিসেবে ৫০০ টাকা দিতে হবে।

দেশের ৮টি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

সম্পর্কিত নিবন্ধ