ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় বাজার ইজারাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার জিরো পয়েন্ট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৩৬ জনকে আটক করেছে।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন দাগনভূঞা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো.

হানিফ, পৌর যুবদলের সদস্য মো. রিয়াজ, মো. ইব্রাহিম, সদর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ চৌধুরী, রামনগর ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফারুক, পৌর যুবদলের সদস্য হাসান, রাজু, শামীম। তাঁরা স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

সংঘাতে জড়িয়ে পড়া দুটি পক্ষের মধ্যে এক পক্ষে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন এবং অপর পক্ষে জেলা ছাত্রদলের সদ্য বহিষ্কৃত সহসভাপতি কাজী জামশেদুর রহমান। দাগনভূঞা পৌরসভার তোহা বাজারের ইজারাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। তোহা বাজারের একসনা ইজারামূল্য ৪৫ লাখ টাকা। বাজারটি আকবর হোসেনের অনুসারীরা ইজারা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। পয়লা বৈশাখ থেকে টোল নেওয়া শুরু হলে সংঘর্ষ হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাজারের টোল নেওয়াকে কেন্দ্র করে আজ দুপুরে দাগনভূঞা জিরো পয়েন্টে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় দাগনভূঞা সদরের আতাতুর্ক সরকারি হাইস্কুল, দাগনভূঞা বালিকা বিদ্যালয় ও আজিজিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা চলছিল। তখন পরীক্ষার্থী ও তাঁর স্বজনেরা আতঙ্কগ্রস্ত  হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেন।

জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন বলেন, ‘বাজার ইজারার বিষয়টি প্রশাসনিক। আমাদের এক কর্মী ইজারা পাওয়ার পর নিয়মমাফিক টাকা তুলতে গেলে ফটিকপন্থীরা (কাজী জামশেদুর রহমান) বাধা দেন। তাঁরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালান, এতে আমাদের কয়েকজন আহত হয়েছেন।’

অন্যদিকে ছাত্রদল নেতা কাজী জামশেদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘আকবর হোসেনের লোকজন আগে থেকেই মহড়ার ঘোষণা দিয়ে জিরো পয়েন্টে গুলি চালান। আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেন। এতে যুবদল নেতা চৌধুরী রিয়াদ, লিটন, রাসেল, রিয়াজ, রাজু, হানিফসহ অনেকেই আহত হয়েছেন। উল্টো পুলিশ আমাদের নেতা-কর্মীদেরও আটক করেছে।’

ফেনীর সহকারী পুলিশ সুপার (সোনাগাজী-দাগনভূঞা সার্কেল) তছলিম উদ্দিন বলেন, বাজার ইজারাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় একটি এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রের পাশে ককটেল বিস্ফোরণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে যৌথ বাহিনীর অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্তত ৩৬ জনকে আটক করেছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আকবর হ স ন ক ন দ র কর স ঘর ষ র ব এনপ র য বদল র দ গনভ ঞ র ইজ র আম দ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

পদ স্থগিত নেতার পক্ষে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বিবৃতি, দ্রুত মুক্তি দাবি

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদাপাথর লুটের মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনের মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে উপজেলা বিএনপি। গতকাল সোমবার উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। কেন্দ্র থেকে পদ স্থগিত হওয়া একজন নেতার পক্ষে এমন বিবৃতি দেওয়ায় দলের ভেতরে ও বাইরে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

গত শনিবার রাতে সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকা থেকে সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৯)। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। গত ১১ আগস্ট কেন্দ্রীয় বিএনপি চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ দলীয় নীতি ও আদর্শবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করে।

গতকাল উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মন্নান ও সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সাহাব উদ্দিন বিগত স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রসৈনিক ও মিথ্যা মামলায় নির্যাতিত নেতা। তাঁকে সাদাপাথর লুটের মামলায় মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানোয় উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করা হয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল মন্নানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আকবরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সাহাব উদ্দিনের চাচাতো ভাই। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠে আছি। আমরা তাঁকে ভালোভাবে চিনি। তিনি কোনো লুটপাটে ছিলেন না। বরং লুটপাটের বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে আমরা মিছিল, মানববন্ধন করেছি। এ তথ্য আমরা মৌখিকভাবে জেলা বিএনপিকেও জানিয়েছি।’

উপজেলা বিএনপির বিবৃতিতে সাহাব উদ্দিনের বিষয়ে ‘মিথ্যা অভিযোগে সদ্য পদ স্থগিত হয়েছে’ বলে দাবি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা রিসিভ করেননি। তাই এ বিষয়ে জেলা বিএনপির অবস্থান ও কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করা হয়েছে। এমন অবস্থায় উপজেলা বিএনপি কীভাবে ওই নেতার পক্ষে বিবৃতি দেয়, সেটা অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। ব্যক্তির অপকর্মের দায় কেন সংগঠন নেবে? বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।

সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি প্রায় ১৫০ একর জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। গত ১৭ মার্চ প্রথম আলোয় এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ১৮ মার্চ সরকারি জমি উদ্ধারে অভিযানে নামে স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে প্রায় ৭০ একর জমি উদ্ধার করে এবং ১০০টি পাথর ভাঙার যন্ত্র উচ্ছেদের পাশাপাশি প্রায় ৫০টি টিনশেড ঘর উচ্ছেদ করা হয়।

এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে সরকারি জমি দখলের ঘটনায় ১৯ মার্চ সাহাব উদ্দিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা বিএনপি। পাশাপাশি অভিযোগ তদন্তে জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশিক উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

গত ১০ এপ্রিল ভোলাগঞ্জে পাথর কোয়ারি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে সাহাব উদ্দিন ও তাঁর স্বজনেরা জমি দখল ও লুটপাটে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, উপজেলা সভাপতির নেতৃত্বে এমন অপরাধ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।

সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাঁকে ‘সাদাপাথর লুটপাটে অভিযুক্ত অন্যতম মূলহোতা’ হিসেবে উল্লেখ করে। সাদাপাথর লুটের ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় গত ১৫ আগস্ট খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা এক হাজার থেকে দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদ স্থগিত নেতার পক্ষে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বিবৃতি, দ্রুত মুক্তি দাবি