আজকাল সন্তানদের নিয়ে ভীষণ সচেতন বাবা-মায়েরা। সব পরীক্ষায় সন্তানদের এ প্লাস নিশ্চিত করতে চান তাঁরা। চান সঠিক পুষ্টি আর সঠিক স্বাস্থ্যে বেড়ে উঠুক তাঁদের সন্তান। মোটকথা সন্তানের ছোট-বড় অনেক অনেক বিষয় নিয়েই আমরা ওয়াকিবহাল। কিন্তু যেটা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সচেতনতা দরকার, সেখানেই অনেকে উদাসীন। আর সেটা হচ্ছে—‘বুলিং।’

অথচ ‘বুলিং’ যুগ যুগ ধরেই আছে, যা দীর্ঘদিন ধরে শিশুদের একটা কষ্টের জায়গা। বেশির ভাগ শিশু স্কুলে বিভিন্নভাবে বুলিংয়ের শিকার হয়। অথচ আমরা এই বিষয়টিকে সম্ভবত সবচেয়ে কম গুরুত্ব দিই কিংবা সমস্যাই মনে করি না। সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে আলোড়ন তুলেছে একটি মিনি সিরিজ। নাম অ্যাডলেসেন্স। ইংল্যান্ডের পটভূমিতে তৈরি সিরিজটি প্রকাশের পর সারা বিশ্বেই বেশ নড়চড়ে বসেছে। যেখানে সাইবার বা সেক্সুয়াল বুলিংয়ের কারণে সহপাঠীকে হত্যার মতো সিদ্ধান্ত নেয় সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্র জিমি। বুলিং একটা মানুষকে বিশেষ করে শিশু-কিশোরকে কতটা আক্রমণাত্মক করতে পারে, ভেবে দেখেছেন? আজকের আলোচনা তাই স্কুল বুলিং নিয়ে।

স্কুল বুলিং কী?

বুলিংয়ের আভিধানিক অর্থ উৎপীড়ন, মাস্তানি, হেনস্তা ইত্যাদি। ইচ্ছাকৃত এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশে স্কুলের একজন/একদল শিক্ষার্থী দ্বারা অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থী বা প্রতিপক্ষের ওপর হিংসাত্মক আচরণই হলো ‘স্কুল বুলিং’। ক্লাসে বা স্কুলে বাকিদের সামনে নিজেদের জাহির করা বা শক্তি প্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গে ভিকটিমকে হাসির পাত্র হিসেবে উপস্থাপন করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য।

আরও পড়ুনপুরোনো বুলিং কেন ভুলতে পারে না মানুষ১৪ মার্চ ২০২৪স্কুল বুলিংয়ের ধরন

অনেকভাবেই হতে পারে স্কুল বুলিং। তবে আমাদের দেশে সাধারণত নিম্নোক্তভাবে বুলিং করা হয়—

১.

গায়ের রং (বিশেষ করে কালো হলে তাকে বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করা হতো), উচ্চতা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি নিয়ে নানা রকম অসৌজন্যমূলক কথা বলা।

২. একটু দুর্বল বা অতি ভদ্র বাচ্চাটিকে ধাক্কা দেওয়া, মারা, খোঁচা দেওয়া, থুতু ছিটানো, চশমা-ঘড়ি-টিফিনবক্স ইত্যাদি জিনিস জোর করে নিয়ে যাওয়া, লুকিয়ে রাখা, ভেঙে ফেলা ইত্যাদি।

৩. একটু বড়সড় হলে একঘরে করে রাখা, তার সঙ্গে না মেশা, অন্য সহপাঠীদেরও মিশতে মানা করা। এখানে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের একটা বিষয় কাজ করে।

৪. ক্লাসের ফেসবুক গ্রুপ বা অন্য ভার্চ্যুয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিকটিমের ছবি নিয়ে মজা করা। আপত্তিজনক বার্তা বা ছবি পাঠানো, ক্লাসের মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বের করে দেওয়া, নিয়মিত বাজে কমেন্ট করা ইত্যাদি।

৫. তা ছাড়া একই ক্লাস বা উঁচু ক্লাসের ছাত্রদের দ্বারা ছোট বা একই ক্লাসের ছাত্রদের অপ্রত্যাশিতভাবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পর্শ করা বা করার চেষ্টা করা, ইঙ্গিতবাহী চিহ্ন প্রদর্শন, কয়েকজন মিলে প্যান্ট খুলে দেওয়া, বিভিন্ন আপত্তিকর স্থানে পানি ঢেলে দেওয়া ইত্যাদিও দেখা যায়।

আমাদের দেশে ছেলেদের ক্ষেত্রে শারীরিক বুলিং এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে মৌখিক, আবেগময় ও সাইবার বুলিংয়ের হার বেশি। বিশেষ করে ৯ম-১০ম শ্রেণিতে সাইবার ও সেক্সুয়াল বুলিংই বেশি হয়।

আরও পড়ুনপুরোনো বুলিং কেন ভুলতে পারে না মানুষ১৪ মার্চ ২০২৪বুলিংয়ের পরিণামশিক্ষার্থী ক্রমাগত বুলি হতে হতে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ