সমন্বয়ক পরিচয়ে বোর্ড সভাপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ
Published: 17th, April 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বোর্ড সভাপতি আবদুর রহিমকে মারধর ও জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় অভিযোগ ওঠা সমন্বয়কের নাম সুমন আহমেদ। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া জেলা শাখার সদস্য। তবে সুমনকে আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে জানিয়ে তাঁর কর্মকাণ্ডের দায়ভার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেবে না বলে জানিয়েছেন জেলার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৫ নম্বর এলাকা পরিচালক নির্বাচিত হন আবদুর রহিম। পরে তিনি সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও সচিব পদে দায়িত্ব পালন করেন। চলতি বছরের ১ মার্চ আবদুর রহিম সমিতির বোর্ড সভাপতির পদে শপথ গ্রহণ করেন। ২০২৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। মঙ্গলবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নামধারী কিছু লোকজন আবদুর রহিমকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন।
ভুক্তভোগী আবদুর রহিম জানান, মঙ্গলবার কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বোর্ড সভা ছিল। তিনি সভায় যোগ দিতে সেখানে গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে সুমন নামে এক যুবক দলবল নিয়ে এসে তাঁকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বলেন। কারণ জানতে চাইলে তারা তাঁকে লাঞ্ছিত করেন। এর পর জোরপূর্বক জেনারেল ম্যানেজারের কক্ষের ভেতরেই পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে জমা দেন। তারা কী লিখেছে, কী করেছে– তিনি কিছুই দেখেননি। এ ঘটনার পর তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
আবদুর রহিমের স্বাক্ষরিত পদত্যাগপত্রে বলা হয়, ‘আমি বোর্ডের সভাপতি পদে আছি। আমার বিশেষ প্রয়োজনে আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন এলাকা পরিচালক বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বোর্ড সভাপতি পদটি অরাজনৈতিক পদ। কারও রাজনৈতিক পদপদবি থাকলে তিনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। তিনি জানান, একটি পক্ষ আবদুর রহিমকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। আবার তারাই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছে জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) বরাবর। এটিও অবৈধ প্রক্রিয়া। জিএম মাধ্যম হতে পারেন। কিন্তু পদত্যাগপত্রের আবেদন হবে চেয়ারম্যান বরাবর।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী সুমন আহমেদ বলেন, ‘আমরা তাঁকে (আবদুর রহিম) জোর করিনি। তাঁকে সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করে চলে যেতে বলেছিলাম। তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।’ সুমন আহমেদের ভাষ্য, আবদুর রহিম আওয়ামী লীগের দোসর। এই শহরে ফ্যাসিবাদের কোনো দোসরকে পুনর্বাসন করতে দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়ার সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সুমন আহমেদ জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন। বিতর্কিত কার্যক্রমের জন্য তাঁকে আগেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ নন। তাঁর ব্যক্তিগত অপকর্মের দায়ভার সংগঠন বহন করবে না।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) প্রকৌশলী ইসমাত কামাল বলেন, আবদুর রহিম নিজেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। জোর করে তাঁর কাছ থেকে স্বাক্ষর করে নেওয়ার কোনো অভিযোগ পাননি তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সমন বয়ক পদত য গ পদত য গপত র ক পর চ
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি