ট্রাম্পের শুল্কঝড়ে কমবে জ্বালানি তেলের চাহিদা: ওপেক
Published: 17th, April 2025 GMT
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া বাণিজ্যযুদ্ধের চাপে চলতি ও আগামী বছর সারা বিশ্বে অপরিশোধিত তেলের চাহিদা কমে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) তথ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত বাণিজ্য শুল্কের প্রভাব বিবেচনা করে আগের পূর্বাভাস সংশোধন করেছে সংস্থাটি।
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দৈনিক চাহিদা ১৩ লাখ ব্যারেল এবং ২০২৬ সালে ১২ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ওপেক। দুই বছরের জন্য দেওয়া এ পূর্বাভাস আগের পূর্বাভাসের তুলনায় দৈনিক গড়ে ১ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল কম।
একই সঙ্গে চলতি বছরের জন্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩ দশমিক ১ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশে নামিয়ে এনেছে ওপেক। এ ছাড়া ২০২৬ সালে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ১ শতাংশ; আগের পূর্বাভাসে যা ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ। মূলত প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাবে বলেই তেলের চাহিদা কমবে বলে জানিয়েছে ওপেক। ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হলে স্বাভাবিকভাবেই তেলের চাহিদা কমবে বা প্রবৃদ্ধির গতি কমবে।
ওপেকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ও ওপেক প্লাসের (ওপেক ও রাশিয়াসহ অন্যান্য সহযোগী দেশ নিয়ে গঠিত) সম্ভাব্য উত্তোলন বৃদ্ধি—এ দুই কারণে চলতি মাসে জ্বালানি তেলের দাম পড়ছে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক আরোপের পর জ্বালানি তেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে বা ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে নেমে আসে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।
পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক বলেছে, বছরের শুরুতে বৈশ্বিক অর্থনীতি একরকম স্থিতিশীল ছিল। বিশ্ববাণিজ্যে সম্প্রতি যা ঘটেছে, অর্থাৎ যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ পরস্পরের পণ্যে শুল্ক আরোপ করছে, তার জেরে স্বল্প মেয়াদে হলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে ওপেক।
এদিকে ওপেকের পর এবার ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সিও (আইইএ) চলতি বছরের বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির পূর্বাভাস উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত মাসিক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলছে, বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আইইএ জানায়, চলতি বছর বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের দৈনিক চাহিদা ৭ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল বাড়তে পারে। আগের মাসে তারা বলেছিল, প্রবৃদ্ধি হতে পারে দৈনিক গড়ে ১০ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিলের শুরুতে বাণিজ্য উত্তেজনা হঠাৎ তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে অনিবার্যভাবেই বিশ্ব অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়বে। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা ভবিষ্যতে আরও কমতে পারে। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় চাহিদাও সবচেয়ে বেশি কমবে এই দুই দেশে। এ ছাড়া উদীয়মান বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও চাহিদা কমবে।
সাম্প্রতিক অতীতে তেলের দামে সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন ঘটে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে, অর্থাৎ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর। ওই বছর তেলের গড় দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়, সর্বোচ্চ দাম ওঠে ১৩৯ ডলার। ফলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। তবে পরের বছর তেলের দাম কমে ৮০ ডলারে নেমে আসে। ২০২৪ সালেও দাম ৭০ ডলারের ঘরে ছিল। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৬৬ ডলার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রব দ ধ র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
সার আমদানি ও জমি হস্তান্তরের প্রস্তাব অনুমোদন
সরকারি পর্যায়ে সৌদি আরবের সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্ট কোম্পানি থেকে ইউরিয়া সার আমদানি চুক্তি অব্যাহত রাখা এবং চট্টগ্রাম জেলার ভাটিয়ারিতে অবস্থিত বিটিএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন জলিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড মিলটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা যায়, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে জি টু জি চুক্তির আওতায় সৌদি আরবের সাবিক এগ্রো-নিউট্রিয়েন্ট কোম্পানি থেকে ইউরিয়া সারের আমদানির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
প্রান্তিক চাষিদের মাঝে ইউরিয়া সারের সাপ্লাইচেইনে নিরবচ্ছিন্নভাবে সারের যোগান বজায় রাখতে জি-টু-জি ভিত্তিতে সৌদি আরব থেকে চুক্তির মাধ্যমে ইউরিয়া সার আমদানি করা হচ্ছে। সাবিক-সৌদি আরবের সাথে বিদ্যমান চুক্তির মেয়াদ ৩০/০৬/২০২৫ শেষ হয়। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে নিরবচ্ছিন্ন ইউরিয়া সার সরবরাহের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জি-টু-জি চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব থেকে সর্বমোট ৬ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির চুক্তি স্বাক্ষরের নীতিগত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। দেশটি থেকে প্রতি লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার ক্রয় করা হবে।২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে বিভিন্ন দেশে থেকে মোট ৩০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।
সভায়, চট্টগ্রাম জেলার ভাটিয়ারিতে অবস্থিত বিটিএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন জলিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড নামে মিলটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
জলিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ১৯৬১ সালে ৫৪.৯৯ একর জমির ওপর স্থাপিত হয়।১৯৭২ সালে মিলটি জাতীয়করণ করা হয় এবং পরিচালনার দায়িত্ব বিটিএমসির অধীনে ন্যস্ত হয়।পরবর্তীতে মিলটি বেসরকারি খাতে পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করা হলেও চুক্তি ভঙ্গ করার কারণে পুনরায় পুনঃগ্রহণ করে বিটিএমসির নিয়ন্ত্রণে ন্যস্ত করা হয়। চট্টগ্রাম এরিয়ায় বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি (বিওএফ) সম্প্রসারণের জন্য বিটিএমসির জলিল টেক্সটাইল মিলটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের অনুরোধ করে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথে সেনাবাহিনী প্রধান আলোচনা ও মৌখিক সম্মতি গ্রহণ করেন।
‘গত ২৪/১২/২০১৮ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় জমি বিক্রয়ের অনুমোদনের প্রস্তাব করা হলে মিলটির অব্যবহৃত জমি বিক্রয় না করে সরকারের উন্নয়নমূলক/জনহিতকর কাজে উক্ত জমি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়।’ মিলের জমিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি স্থাপন করা হলে মিলের জমি সরকারের উন্নয়নমূলক ব্যবহৃত হবে।
এমতাবস্থায়, জলিল টেক্সটাইল মিলস্ লিমিটেড এর ৫৪.৯৯ একর জমি মিলের কাছে সরকারি পাওনা বাবদ ১৭ কোটি ৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা বিটিএমসিকে প্রদানপূর্বক মিলের জমি প্রতীকী মূল্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তরের নীতিগত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে। বর্ণিত ৫৪.৯৯ একর জমির মৌজা মূল্য প্রায় ১১১ কোটি ৪৪ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৫ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত/এসবি