‘‘রাজনীতিতে আমরা চাই মতপার্থক্য থাকুক। মতপার্থক্য না থাকলে রাজনীতিবিদরা অন্ধ হয়ে যাবে। বন্ধ চোখ খুলে দেওয়ার জন্যই প্রয়োজন মতপার্থক্য। তবে আমরা এটাও প্রত্যাশা করি যে, এই মতপার্থক্য যেন মতবিরোধে রূপ না নেয়। পার্থক্য পর্যন্তই থাকুক।’’

বাংলা‌দেশ জামায়া‌তে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের ইইউ সফর শে‌ষে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স‌ঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ নি‌য়ে এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।

জামায়াত আমির বলেন, ‘‘যদি আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গত নির্বাচন দেখেন, তাহলে এটা কোনো বিরোধই নয়। সেখানে তো বাকযুদ্ধ হয়েছে অনেক। ওই নির্বাচনের পর হ্যান্ডশেক। একদল সরকারে, আরেক দল বিরোধী দলে। এখন তারা মিলেমিশে দেশ চালাবে, এটাই স্বাভাবিক।’’

আরো পড়ুন:

খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডনে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ, ছিলেন তারেক রহমানও

‘বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের পরিবর্তে নতুন সংঘ গঠিত হতে পারে’

‘‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের রাজনীতিবিদরা অনেক সময় এটা খেয়াল করেন না। এটা করতে হবে। যদি আমরা দেশকে ভালোবাসি, তাহলে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার জায়গা থেকে আমাদের পারস্পরিক সম্মানের জায়গায় আসতে হবে। আমার মতামত আমি দেব। কিন্তু আমি এটা বলতে পারবো না যে এটিই করতে হবে। বরং আমি মতামত দেব যে এটি করলে জাতি উপকৃত হবে। আর এটা আমি করতে দেবো না, যে যাই হোক, এটা কিন্তু গণতন্ত্র বা রাজনীতির ভাষা নয়। করতেই হবে, যেমন ভাষা নয়, তেমনি করতে দেব না সেটাও ভাষা নয়। অনেক সময় আমরা এই সীমানাটা মানি না, আমাদের এটা মানতে হবে’’ ব‌লেন তি‌নি।

বেগম জিয়ার স‌ঙ্গে বৈঠক সুনির্দিষ্ট ইস‌্যু নয়

ডা.

শফিকুর রহমান ব‌লেন, ‘‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডনে বৈঠক হয়েছে। তবে সেটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছিল না। রাজনৈতিক নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি।’’

তি‌নি ব‌লেন, ‘‘দেশ থেকে যাওয়ার আগে যে কোনো কারণে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়ে উঠেনি। ইউরোপ সফরে গিয়েছি। ইউকের কাছের দেশ বেলজিয়াম। আমরা ব্রিটেনে গিয়ে লন্ডনে ঢুকেই প্রথমে তার (বেগম জিয়া) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তারা অত্যন্ত ভালোবাসা ও সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল তাকে দেখা। তিনি অবস্থান করছেন তার বড় সন্তান ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বাসায়। সঙ্গত কারণে ওই সাক্ষাতে তিনিও থাকবেন, এটিই স্বাভাবিক।’’

জামায়া‌তের আমির ব‌লেন, ‘‘দুজন বাংলাদেশি মানুষ পরিচয় ছাড়াই চা খেতে গিয়েও রাজনৈতিক আলাপ শুরু করে দেন। সেখানে আমরা দুটি দলের দায়িত্বশীল নেতারা একসঙ্গে বসবো আর রাজনৈতিক কথাবার্তা হবে না, তা তো বাস্তব নয়।’’

‘‘যেহেতু এটা ফরমাল কোনো মিটিং ছিল না, সেজন্য বিএনপিও জানায়নি, আমরাও দরকার মনে করিনি। আমাদের ভিজিটের মূল উদ্দেশ্য ছিল একজন অসুস্থ সম্মানিত সহকর্মীকে দেখা। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তবে মিডিয়াগুলো যে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা করছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমাদের পাওয়ার অনেক কিছু আছে। আমরা এগুলোকে স্বাগত জানাই। মিডিয়ার এই চর্চাগুলো চলতে থাকুক’’ যোগ ক‌রেন তি‌নি।

শ‌ফিকুর রহমান বলেন, ‘‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিও অনেক সঙ্গী-সাথী হারিয়েছে। আমরা আয়নাঘরের শিকার হয়েছি। তারাও হয়েছে। লাখে লাখে জেলে গেছে। ব্যক্তি হিসেবে খালেদা জিয়াও জুলুমের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি একদিকে মজলুম, অন্যদিকে অসুস্থ।’’

তি‌নি ব‌লেন, ‘‘বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সব রাজনৈতিক দল ও জনগণই নির্যাতিত হয়েছে। নির্যাতিত দল হিসেবে প্রথম আঘাত ও শেষ আঘাত জামায়াতে ইসলামীর ওপরে এসেছে। প্রথমে মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়। ব্রিটেনের একটি এপেক্স কোর্ট এ সংক্রান্ত একটি রায় দিয়ে বলেছে, এটা ছিল বিচারের গণহত্যা। এটা কোনো বিচার ছিল না। শেষ আঘাতটা ছিল আমাদের নিষিদ্ধ করা, যা অন্য কোনো দলকে করা হয়নি। আমরা মজলুম। আমরা আমাদের অনেক নেতা সঙ্গী হারিয়েছি। অনেকে পঙ্গু হয়েছেন।’’

জামায়া‌তের আমির ব‌লেন, ‘‘তিনি (খালেদা জিয়া) দেশে কবে ফিরবেন, সে ব্যাপারে কথাবার্তা হয়নি। তবে ধারণা করি, তিনি হয়তো আগামী মাসে ফিরবেন। তার ফেরাই উচিত, এই দেশ তো তার।’’

জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারকে তিনটি শর্ত পূরণ করার উপর জোর দেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তি‌নি বলেন, ‘‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেশ নতুনভাবে স্বাধীনতা পেয়েছে। এ অবস্থায় দেশে নির্বাচন হওয়ার আগে তিনটি শর্ত পূরণ হতে হবে। মৌলিক সংস্কার, সহাবস্থানসহ নির্বাচনের শর্ত পূরণ করতে হবে। তা নাহলে নির্বাচনের কমিটমেন্ট ঠিক থাকবে কি না তা আল্লাহই জানেন।’’

জামায়াত আমির আরো বলেন, ‘‘অনেক কষ্টে যা এসেছে এতে তিনটি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর প্রধান হচ্ছে দৃশ্যমান গ্রহণযোগ্য মৌলিক সংস্কার। আমরা তা সংস্কার কমিশনের কাছে দিয়েছি। এসব পরিবর্তন ছাড়া কোনো নির্বাচন হলে তা গণতন্ত্রের কোনো ভিত্তি গঠন হবে না। এ নির্বাচনও তাহলে পূর্বের মতো খারাপ হবে। হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে যে বিজয় এসেছে সেখানে এই পরিবর্তন খুবই জরুরি।’’

তিনি বলেন, ‘‘প্রথমত সংস্কারের প্রধান অংশীজন হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। এতে যদি তারা সহযোগিতা করে তাহলে দ্রুত নির্বাচনে পরিবেশ হবে। তারা যদি সহযোগিতা না করে যদি গতানুগতিক নির্বাচন হয় তাহলে আগের মতো নির্বাচন হবে। যার দায় রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতে হবে। দ্বিতীয়ত গণহত্যাকারীদের দৃশ্যমান বিচার করতে হবে। যাতে মানুষের আস্থা ফিরে আসে। শহীদের আত্মা যাতে প্রশান্তি পায়।’’

‘‘তৃতীয়ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্মানবোধ থাকতে হবে। যাতে এমন না হয়, আমি জিতে গেলেই নির্বাচন সুষ্ঠু, না জিতলে দুষ্ট- এমন মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এর জন্য সবার এনগেজমেন্ট প্রয়োজন। এটি সরকারের তরফ থেকেই হতে পারে, রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্যোগে হতে পারে, সিভিল সোসাইটির উদ্যোগেও হতে পারে।’’

জামায়াত আমির বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে এই তিন শর্ত পূরণ করতে হবে। শর্ত পূরণ ছাড়া মার্চ ফেব্রুয়ারি কোনো কিছু ঠিক থাকবে কি না নির্বাচনের কমিটমেন্ট ঠিক থাকবে কি না তা আল্লাহই জানে।’’

সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত আমির ইইউ সফরের ফিরিস্তি তুলে ধরেন ও নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন দলটির সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। 

উপস্থিত ছিলেন দলের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, আ ন ম শামসুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, অধ্যাপক ইজ্জত উল্লাহ, নুরুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ম য় ত আম র ফ ক র রহম ন আম দ র আম র ব র আম র ব এনপ ইসল ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় গোলের থ্রিলারে জমজমাট ড্র বার্সেলোনা-ইন্টারের

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল মানেই উত্তেজনার পারদ চড়া—আর বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলান মিলে সেটিকে নিয়ে গেল অন্য উচ্চতায়। কাতালানদের ঘরের মাঠ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে দর্শকরা উপভোগ করলেন এক দুর্দান্ত গোলবন্যার ম্যাচ। ম্যাচ শেষে ফল—৩-৩ গোলে ড্র।

মৌসুমের রেকর্ড ৫০ হাজার ৩১৪ দর্শকের সামনে ইউরোপীয় ফুটবলের এই মহারণে উভয় দলই তুলে ধরেছে আক্রমণাত্মক ফুটবল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের ইতিহাসে ১৯৯৯ সালের পর এটিই প্রথম ম্যাচ যেখানে ছয়টি গোল হয়েছে এবং শেষ হয়েছে ড্রয়ে।

ম্যাচ শুরু হতে না হতেই চমকে দেয় ইন্টার মিলান। ম্যাচের মাত্র প্রথম মিনিটেই ডেনজেল ডামফ্রিজের ব্যাকহিল গোল দলকে এগিয়ে দেন মার্কাস থুরাম। এরপর ২১ মিনিটে আবারও দিমারকোর কর্নার থেকে ফ্রান্সেসকো আকেরবির সহায়তায় শ্বাসরুদ্ধকর অ্যাক্রোব্যাটিকে ব্যবধান বাড়ান ডামফ্রিজ।

তবে ঘুরে দাঁড়াতে দেরি করেনি বার্সা। দুই মিনিট পরই ইয়ামাল ডান দিক থেকে একক নৈপুণ্যে দুর্দান্ত গোল করে ব্যবধান কমান। প্রথমার্ধ শেষের আগে পেদ্রির ফ্লিকে রাফিনিয়ার নিয়ন্ত্রণ এবং তাতে ফেরান তোরেসের শটে গোল করে ২-২ সমতায় ফেরে স্বাগতিকরা।

দ্বিতীয়ার্ধে লাউতারো মার্টিনেজের ইনজুরির পর মাঠে নামেন মেহেদি তারেমি। ৬০ মিনিটে কর্নার থেকে হেড করে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ডামফ্রিজ। কিন্তু দ্রুতই গোল শোধ করে বার্সা—ছোট কর্নার থেকে রাফিনিয়ার শট লাগে পোস্টে, সেখান থেকে গোলরক্ষক সোমারের পিঠে লেগে ঢুকে পড়ে জালে—ফলাফল ৩-৩। ৭৫ মিনিটে হেনরিখ মিখিতারিয়ান গোল করে ইন্টারকে আবারও এগিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু ভিএআরের চোখে পড়ে সামান্য অফসাইড, বাতিল হয় সেই গোল।

এখন সবকিছু নির্ভর করছে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচের ওপর, যা হবে ৬ মে, মঙ্গলবার, ইন্টারের ঘরের মাঠ জিউসেপ্পে মিয়াজ্জায়। ওই ম্যাচেই জানা যাবে ফাইনালে কারা প্যারিস সেইন্ট জার্মেই ও আর্সেনালের মধ্যকার বিজয়ীর মুখোমুখি হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ