ভারত-বাংলাদেশ শীতল সম্পর্ক আন্তসীমান্ত বাণিজ্য ও অবকাঠামোর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে
Published: 18th, April 2025 GMT
সম্প্রতি আসাম রাইফেলস ও এশিয়ান কনফ্লুয়েন্স যৌথভাবে এক সম্মেলন আয়োজন করেছে। এ উপলক্ষে আগরতলায় এক সফরে গিয়ে আমাদের আবারও ‘আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি)’ পরিদর্শন ও সেখানে আলোচনা করার সুযোগ হয়েছে। কাস্টমস ল্যান্ড স্টেশনগুলোতে আগরতলা আইসিপির মতো সুযোগ–সুবিধা না থাকলেও স্থানটি এক বছরের কম সময় আগেও সীমান্ত কর্মকাণ্ডের এক জমজমাট কেন্দ্র ছিল।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রতিটি সীমান্ত পয়েন্টে বাণিজ্যের গতি ভীষণভাবে কমিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আগরতলা-আখাউড়া সীমান্তও। প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার মানুষ এ চেকপোস্ট ব্যবহার করেন। এ সংখ্যা ২০০–এর নিচে নেমে গেছে। ২০২৩–২৪ সালে আগরতলা স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩১৮ কোটি রুপি। দৃশ্যত আজ সেখানে কোনো পণ্য চলাচল নেই। আধুনিক, ঝকঝকে আইসিপি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রজন্মগত পরিবর্তনের প্রতীক। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বাণিজ্য ও আন্তসীমান্ত অবকাঠামোর উন্নয়নে উভয় দেশ উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে।
অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশ কলম্বো, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার পোর্ট ক্লাংয়ের মতো গভীর আঞ্চলিক সমুদ্রবন্দরের ওপর নির্ভর করে আছে। মাতারবাড়ী বন্দর একবার চালু হলে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট খরচ কমবে, জাহাজে পণ্য পরিবহন সক্ষমতার উন্নয়ন ঘটবে ও দেশটি তার সামুদ্রিক কর্মকাণ্ডের ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।বর্তমানে আগরতলা আইসিপি–ই যে শুধু দৃশ্যত ফাঁকা পড়ে আছে তা নয়, কয়েক কিলোমিটার দূরে সাব্রুমে নতুন নির্মিত আইসিপিও নীরব। এটি কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। আন্তসীমান্ত ফেনী নদীর মৈত্রী সেতুর কাছে ২৫০ কোটি রুপিতে এ আইসিপি নির্মিত হয়েছে। ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের দক্ষিণ–পূর্বের জেলা খাগড়াছড়ির মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে নদীটি। প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির জন্য এ সুবিধা একসময় অপরিসীম প্রতিশ্রুতির ছিল।
বাংলাদেশও রামগড় স্থল বন্দরের নির্মাণকাজ শেষ করেছে। এটি একবার চালু হলে ভারতের মধ্য দিয়ে সংযোগ সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহ এবং সিলেটে কার্যকর যাতায়াতের পথ সুগম হবে। পণ্য পরিবহন ও মানুষ চলাচলের ক্ষেত্রে বিশাল সম্ভাবনা থাকায় সাব্রুম ও রামগড় স্থলবন্দর একত্রে এই অঞ্চলের জন্য যুগান্তকারী পরিবর্তন বয়ে আনবে বলে আশা করা হয়েছিল। এতে ভারতের ত্রিপুরা ও উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বাসিন্দারা শুধু চট্টগ্রাম বন্দরের সুবিধাই নয়, বরং চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ব্যবহারেরও সুযোগ পেতেন। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এক নতুন বাণিজ্যিক করিডর হয়ে উঠতে পারত রামগড় স্থলবন্দর।
অপ্রকাশ্য সম্ভাবনা
বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত বাংলাদেশের কক্সবাজার। ভারত থেকে এ সৈকতে উল্লেখযোগ্য পর্যটক আসতে দেখা যায়নি। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের মধ্যে দ্বিমুখী চলাচল সুবিধার উন্নয়নে কিছু পরিবর্তন আনতে পারে এ সৈকত। বাস্তবে, এসব আন্তসীমান্ত পথের মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যও লাভবান হবে বলে ধারণা করা হয়।
আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, মাতারবাড়ী বন্দরের সঙ্গে কখনো যুক্ত হলেই শুধু আন্তসীমান্ত সুবিধাগুলো পূর্ণ সম্ভাবনার স্তরে পৌঁছাবে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সহায়তায় কক্সবাজার জেলায় এ গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষিণে অবস্থিত মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর শুধু বাংলাদেশ ও জাপানের জন্যই নয়, ভারতের জন্যও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশ কলম্বো, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার পোর্ট ক্লাংয়ের মতো গভীর আঞ্চলিক সমুদ্রবন্দরের ওপর নির্ভর করে আছে। মাতারবাড়ী বন্দর একবার চালু হলে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট খরচ কমবে, জাহাজে পণ্য পরিবহন সক্ষমতার উন্নয়ন ঘটবে ও দেশটি তার সামুদ্রিক কর্মকাণ্ডের ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের ওপর বৈশ্বিক মনোযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান বাণিজ্যিক ও কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেশটির আবেদন বাড়িয়েছে। কৌশলগত লক্ষ্য এগিয়ে নেওয়ার অংশ হিসেবে ঢাকা নিজেকে তার ঐতিহ্যগত দক্ষিণ এশীয় পরিচয় ছাপিয়ে ক্রমেই আরও বেশি আঞ্চলিক খেলোয়াড় হিসেবে দেখছে। বৃহত্তর পরিসরে ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে তার। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে আঞ্চলিকতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে আছে। মাতারবাড়ী বন্দর দেশটিকে আঞ্চলিক ট্রান্সশিপমেন্টের একটি কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বন্দরের কার্যক্রম শুরু হলে বড় জাহাজগুলো সেখানে সরাসরি নোঙর করতে পারবে। এতে এ বন্দর বাংলাদেশের সামুদ্রিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে। বাংলাদেশের প্রথম সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে বড় জাহাজের সরাসরি নোঙর করার সুবিধা নেই। আনুমানিক পরিসংখ্যানে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়, ‘টোয়েন্টি ফুট ইক্যুইভ্যালেন্ট ইউনিটের (টিইইউ)’ কনটেইনার বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পরিবহন করতে বর্তমানে ৩ হাজার ডলার খরচ পড়ে ও সময় লাগে ৪০–৪২ দিন।
মাতারবাড়ী ৮ হাজার ২০০ টিইইউ–এর বেশি বৃহৎ কনটেইনারবাহী জাহাজগুলো ভেড়ার সুবিধা দিতে পারবে। এতে দ্রুততার সঙ্গে ও সুলভে জাহাজে পণ্য সরবরাহের সম্ভাবনা তৈরি হবে। রামগড় স্থলবন্দর ভারতের আইসিপিগুলো যুক্ত করবে। বাংলাদেশ গভীর সমুদ্রবন্দরকে কক্সবাজারের সঙ্গে যুক্ত করতে ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কও নির্মাণ করছে।
বাংলাদেশ বলেছে, ভারতের কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের ফিডার নৌযান সেবাকেও সহায়তা করতে পারবে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর। এই ট্রান্সশিপমেন্ট রূপরেখা শুধু ভারত নয়, স্থলবেষ্টিত নেপাল ও ভুটানের মতো প্রতিবেশীর জন্যও কার্যকর বাণিজ্য–সুবিধা ত্বরান্বিত করতে পারে। যাহোক, এসব সম্ভাবনার অনেকটাই অপ্রকাশ্য রয়ে গেছে।বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভারতের কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের ফিডার নৌযান সেবাকেও সহায়তা করতে পারবে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর। এই ট্রান্সশিপমেন্ট রূপরেখা শুধু ভারত নয়, স্থলবেষ্টিত নেপাল ও ভুটানের মতো প্রতিবেশীর জন্যও কার্যকর বাণিজ্য–সুবিধা ত্বরান্বিত করতে পারে। যাহোক, এসব সম্ভাবনার অনেকটাই অপ্রকাশ্য রয়ে গেছে। বাংলাদেশের বর্তমান অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ ও ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা চলার মধ্যে এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
হারানো সুযোগ
বিশ্ববাণিজ্যে অনিশ্চয়তা চলার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর শুল্কারোপ তা আরও তীব্র করেছে। সেই সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের শীতলতা দক্ষিণ এশীয় উপ–আঞ্চলিক সম্ভাবনাকে আরও বাধাগ্রস্ত করছে। সম্প্রতি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে দুই নেতার বৈঠকও (অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি) দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উত্তেজনা কাটাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলাফল, দুই দেশের অধিকাংশ সীমান্ত অবকাঠামো অব্যবহৃত পড়ে আছে। কূটনৈতিক সম্পর্কে উষ্ণতা ফেরানো না গেলে মাতারবাড়ী বন্দরের নির্মাণকাজ শেষ হলেও এর পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচিত করা সম্ভব হবে না।
দৃশ্যত, বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেই শুধু এ সম্পর্কের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব। ততক্ষণ পর্যন্ত উভয় পাশের সাধারণ জনগণকে সুযোগ হারানোর ভার টানতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ত রব ড় পর বহন র জন য আরও ব আইস প র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন: বিএনপির যে প্রার্থীদের সঙ্গে লড়বেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতাদের যেসব আসনে নির্বাচন করার কথা রয়েছে, সেখানেও প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আরো পড়ুন:
বিএনপির প্রার্থী তালিকায় নেই তারকারা
কুষ্টিয়ায় মনোনয়নবঞ্চিত সোহরাব- সমর্থকদের বিক্ষোভ
বিএনপির ঘোষিত আসনভিত্তিক তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা-১১ (বাড্ডা-ভাটারা-রামপুরা) আসনের তাদের প্রার্থী এম এ কাইয়ুম। এই আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম।
রংপুর-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ এনামুল হক ভরসা। এই আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
পঞ্চগড়-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ নওশাদ জমির। এই আসনে নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের।
কুমিল্লা-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী। এই আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
চাঁদপুর-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী করা হয়েছে মো. মমিনুল হককে। এই আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত আমাদের দলের আসনভিত্তিক মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়নি। যখন চূড়ান্ত করা হবে, আপনাদের জানানো হবে।”
এর আগে রবিবার (৩ নভেম্বর) সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা ৩০০ আসন ধরে এগোচ্ছি। ঢাকা থেকেই আমি দাঁড়াব। আর কে কোন আসনে দাঁড়াবেন, আমরা প্রার্থী তালিকা এ মাসেই দিতে পারি।”
অবশ্য বিএনপি ও এনসিপি চূড়ান্ত মনোনয়ন না দেওয়া পর্যন্ত যে কোনো আসনে যেকোনো সময় পরিবর্তন আসতে পারে বলে তারা ঘোষণা দিয়ে রেখেছে।
ঢাকা/রায়হান/রাসেল