বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জুয়েল। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা, বন্দর সম্প্রসারণে বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ার কারণ এবং এর সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারোয়ার সুমন। 

সমকাল: চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রকল্প বলা হয় বে-টার্মিনালকে। তবু কেন বার বার হোঁচট খাচ্ছে এ প্রকল্প?

শফিকুল আলম জুয়েল: বে-টার্মিনাল প্রকল্প বার বার পেছানোর নেপথ্যে অনেক কারণ আছে। তবে ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা থাকা ও অর্থায়নের প্রক্রিয়া ঠিক করতে না পারা আমার কাছে সবচেয়ে বড় কারণ মনে হয়। অথচ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ত তিনগুণ। এখন সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ নোঙর করতে অপেক্ষা করতে হয় জোয়ারের জন্য। তখন আমরা ১৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজও অনায়াসে নোঙর করাতে পারতাম মূল জেটিতে। এতে করে আমাদের পণ্য পরিবহন খরচ কমত। কমে যেত জাহাজের অপেক্ষমাণ সময়ও। এতে করে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও গতিশীল হতো। 

সমকাল: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, বিশ্বজুড়ে শুল্কযুদ্ধের দামামা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ডলার সংকটের বাধা পেরিয়ে গত বছর চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার এবং কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে। এটি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

শফিকুল আলম জুয়েল: কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ২০২৪ সালে আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০ ফুট এককের কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে দুই লাখ ২৪ হাজার ৮৩৪টি। কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে প্রায় ৩০ লাখ টন। ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর হ্যান্ডল করে ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৩ একক কনটেইনার। ২০২৪ সালে দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরে ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬২৭ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। তবে বন্দরে জাহাজ আসার পরিমাণ কমেছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে জাহাজ কম এসেছে ২৩৬টি। অবশ্য জাহাজের সংখ্যা কমলেও বেড়েছে আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ।

সমকাল: জাহাজ আসার সংখ্যা কেন কমছে? 

শফিকুল আলম জুয়েল: ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর জাহাজ হ্যান্ডল করে ৪ হাজার ১০৩টি। ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৮৬৭টি জাহাজ আসে। এখন যেসব জাহাজ আসছে, সেগুলো আগের চেয়ে বড় জাহাজ। বন্দরে এখন সর্বোচ্চ ২০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারে। আগে সাড়ে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো যেত। তখন যদি এক হাজার কনটেইনার নিয়ে একটি জাহাজ আসত, এখন তার চেয়ে বড় অর্থাৎ দেড়-দুই হাজার কনটেইনার নিয়েও জাহাজ আসছে। এজন্য জাহাজ আসার পরিমাণ কমলেও বেড়েছে কনটেইনারের সংখ্যা।
সমকাল: কার্গো পণ্য পরিবহন ক্রমশ বাড়ছে। এজন্য বহির্নোঙরে বড় ভূমিকা রাখতে হচ্ছে শিপিং এজেন্টকে। সেখানে কোন কোন বিষয়ে আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত?
শফিকুল আলম জুয়েল: সর্বশেষ বছরে প্রায় ১৩ কোটি লাখ টন পণ্য হ্যান্ডল করেছে বন্দর। অথচ ২০২৩ সালে ১২ কোটি ২ লাখ টন পণ্য পরিবহন হয়। ২০২২ সালে এটি ছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৬৫ হাজার টন। ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সামাল দিতে বড় ভূমিকা রাখতে হয় শিপিং এজেন্টদের। কারণ, বন্দরে আসা পণ্যের ৭০ শতাংশেরও বেশি খালাস করতে হয় বহির্নোঙরে। সেখানে বন্দর কর্তৃপক্ষের নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। দক্ষ ও যোগ্য লোক যাতে এ কাজ পরিচালনা করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। 

সমকাল: রেল ও নৌপথে পণ্য পরিবহনে কাঙ্ক্ষিত গতি নেই কেন?

শফিকুল আলম জুয়েল: চট্টগ্রাম বন্দর ও এর আওতাধীন কমলাপুর কনটেইনার ডিপো ও পানগাঁও নৌ টার্মিনাল দিয়ে ২০২৩ সালে আমদানি-রপ্তানি ও খালি মিলিয়ে কনটেইনার পরিবহন হয় ৩০ লাখ ৫০ হাজার টিইইউস। ২০২২ সালে হয় ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ টিইইউস। এটি আরও বাড়ার কথা। যে হারে আমদানি-রপ্তানির পণ্য আসছে সেই হারে পণ্য পরিবহন হচ্ছে না রেল ও নৌপথে। এখানে অনেক ফ্যাক্টর বাধা হিসেবে কাজ করছে। রেলওয়েরও গাফিলতি আছে। তাদের পর্যাপ্ত ইঞ্জিনও নেই। আবার নৌপথে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারিনি আমরা। সেখানে ভাড়া নিয়েও 
অসন্তোষ আছে। সমস্যা আছে পরিচালনা প্রক্রিয়াতেও। বন্দর কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে রেল ও নৌপথে আসবে কাঙ্ক্ষিত গতি।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ২০২৩ স ল ২০২৪ স ল প রকল প আমদ ন সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

আরো পড়ুন:

নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা

সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন 

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।

বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।

অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • গাজায় ব্যাংক খুলেছে, নেই নগদ অর্থ
  • ১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা