বহির্নোঙরে বন্দর কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়াতে হবে
Published: 18th, April 2025 GMT
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জুয়েল। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা, বন্দর সম্প্রসারণে বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ার কারণ এবং এর সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সারোয়ার সুমন।
সমকাল: চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রকল্প বলা হয় বে-টার্মিনালকে। তবু কেন বার বার হোঁচট খাচ্ছে এ প্রকল্প?
শফিকুল আলম জুয়েল: বে-টার্মিনাল প্রকল্প বার বার পেছানোর নেপথ্যে অনেক কারণ আছে। তবে ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা থাকা ও অর্থায়নের প্রক্রিয়া ঠিক করতে না পারা আমার কাছে সবচেয়ে বড় কারণ মনে হয়। অথচ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ত তিনগুণ। এখন সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ নোঙর করতে অপেক্ষা করতে হয় জোয়ারের জন্য। তখন আমরা ১৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজও অনায়াসে নোঙর করাতে পারতাম মূল জেটিতে। এতে করে আমাদের পণ্য পরিবহন খরচ কমত। কমে যেত জাহাজের অপেক্ষমাণ সময়ও। এতে করে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও গতিশীল হতো।
সমকাল: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, বিশ্বজুড়ে শুল্কযুদ্ধের দামামা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ডলার সংকটের বাধা পেরিয়ে গত বছর চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার এবং কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে। এটি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
শফিকুল আলম জুয়েল: কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ২০২৪ সালে আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০ ফুট এককের কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে দুই লাখ ২৪ হাজার ৮৩৪টি। কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে প্রায় ৩০ লাখ টন। ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর হ্যান্ডল করে ৩০ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৩ একক কনটেইনার। ২০২৪ সালে দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরে ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬২৭ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। তবে বন্দরে জাহাজ আসার পরিমাণ কমেছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে জাহাজ কম এসেছে ২৩৬টি। অবশ্য জাহাজের সংখ্যা কমলেও বেড়েছে আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ।
সমকাল: জাহাজ আসার সংখ্যা কেন কমছে?
শফিকুল আলম জুয়েল: ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর জাহাজ হ্যান্ডল করে ৪ হাজার ১০৩টি। ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৮৬৭টি জাহাজ আসে। এখন যেসব জাহাজ আসছে, সেগুলো আগের চেয়ে বড় জাহাজ। বন্দরে এখন সর্বোচ্চ ২০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারে। আগে সাড়ে ৯ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো যেত। তখন যদি এক হাজার কনটেইনার নিয়ে একটি জাহাজ আসত, এখন তার চেয়ে বড় অর্থাৎ দেড়-দুই হাজার কনটেইনার নিয়েও জাহাজ আসছে। এজন্য জাহাজ আসার পরিমাণ কমলেও বেড়েছে কনটেইনারের সংখ্যা।
সমকাল: কার্গো পণ্য পরিবহন ক্রমশ বাড়ছে। এজন্য বহির্নোঙরে বড় ভূমিকা রাখতে হচ্ছে শিপিং এজেন্টকে। সেখানে কোন কোন বিষয়ে আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত?
শফিকুল আলম জুয়েল: সর্বশেষ বছরে প্রায় ১৩ কোটি লাখ টন পণ্য হ্যান্ডল করেছে বন্দর। অথচ ২০২৩ সালে ১২ কোটি ২ লাখ টন পণ্য পরিবহন হয়। ২০২২ সালে এটি ছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৬৫ হাজার টন। ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সামাল দিতে বড় ভূমিকা রাখতে হয় শিপিং এজেন্টদের। কারণ, বন্দরে আসা পণ্যের ৭০ শতাংশেরও বেশি খালাস করতে হয় বহির্নোঙরে। সেখানে বন্দর কর্তৃপক্ষের নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। দক্ষ ও যোগ্য লোক যাতে এ কাজ পরিচালনা করে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
সমকাল: রেল ও নৌপথে পণ্য পরিবহনে কাঙ্ক্ষিত গতি নেই কেন?
শফিকুল আলম জুয়েল: চট্টগ্রাম বন্দর ও এর আওতাধীন কমলাপুর কনটেইনার ডিপো ও পানগাঁও নৌ টার্মিনাল দিয়ে ২০২৩ সালে আমদানি-রপ্তানি ও খালি মিলিয়ে কনটেইনার পরিবহন হয় ৩০ লাখ ৫০ হাজার টিইইউস। ২০২২ সালে হয় ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ টিইইউস। এটি আরও বাড়ার কথা। যে হারে আমদানি-রপ্তানির পণ্য আসছে সেই হারে পণ্য পরিবহন হচ্ছে না রেল ও নৌপথে। এখানে অনেক ফ্যাক্টর বাধা হিসেবে কাজ করছে। রেলওয়েরও গাফিলতি আছে। তাদের পর্যাপ্ত ইঞ্জিনও নেই। আবার নৌপথে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারিনি আমরা। সেখানে ভাড়া নিয়েও
অসন্তোষ আছে। সমস্যা আছে পরিচালনা প্রক্রিয়াতেও। বন্দর কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে রেল ও নৌপথে আসবে কাঙ্ক্ষিত গতি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ২০২৩ স ল ২০২৪ স ল প রকল প আমদ ন সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৪ সালে মেটার কাছে ৩৭৭১ অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছে সরকার
বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৭৭১টি অ্যাকাউন্টের বিষয়ে তথ্য চেয়ে অনুরোধ পেয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। তবে বছরের প্রথম ৬ মাসের চেয়ে শেষ ৬ মাসে অনুরোধের সংখ্যা কমেছে। একই বছর গুগলের কাছে সরকার ৫ হাজার ৮২৭টি কন্টেন্ট সরানোর অনুরোধ করেছিল।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেটা (ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ) ও গুগলের (ইউটিউব) স্বচ্ছতা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। মেটা ও গুগল বছরে দু’বার স্বচ্ছতা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সম্প্রতি প্রকাশিত সর্বশেষ স্বচ্ছতা প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে তথ্য চাওয়া ও কন্টেন্ট সরানোর অনুরোধ বেশি ছিল। পরের ছয় মাসে বিশেষ করে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব অনুরোধের পরিমাণ কমে আসে। সরকারের নির্দেশনা অনুসারে এসব অনুরোধ জানিয়ে থাকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
মেটা বলছে, ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৭৭১টি অ্যাকাউন্টের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়। এর মধ্যে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৫০১টি অনুরোধের মাধ্যমে ২ হাজার ২৮৫টি অ্যাকাউন্টের বিষয়ে তথ্য চেয়েছিল সরকার। এ সময় ৬৮ দশমিক ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে সাড়া দেয় মেটা। প্রথম ছয় মাসে মেটা ২ হাজার ৯৪০টির বেশি কন্টেন্টে প্রবেশ সীমিত করে দেয়। এর মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ৬০০টির বেশি ফেসবুক মন্তব্য, পোস্ট ৩১৭টি, পেজ ও গ্রুপ ১টি এবং প্রোফাইল ৫টি।
সে বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার ৯২৬টি অনুরোধের মাধ্যমে সরকার মেটার কাছে ১ হাজার ৪৮৬টি অ্যাকাউন্টের বিষয়ে তথ্য চেয়েছিল। এর মধ্যে ৬৪ শতাংশ ক্ষেত্রে মেটা তথ্য দিয়েছে। শেষ ছয় মাসে মেটা বাংলাদেশে ১ হাজার ২৮০টির মতো কন্টেন্টে প্রবেশ সীমিত করে দেয়। এর মধ্যে ফেসবুকে মন্তব্য (কমেন্ট) ১ হাজার ১৪০টি, ১২৩টি পোস্ট, ৮টি প্রোফাইল।
সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীন বিভিন্ন অপরাধের জন্য স্থানীয় আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি যেসব রিপোর্ট করেছে, মেটা সেসব কন্টেন্টে প্রবেশ সীমিত করা হয়। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত পণ্য, ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আক্রমণ, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা উসকে দেওয়া ও আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ।
এদিকে বাংলাদেশ সরকার গুগলের কাছে এক বছরে ৫ হাজার ৮২৭টি কন্টেন্ট সরানোর অনুরোধ করেছিল। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৩৩৭টি অনুরোধে ৪ হাজার ৪৭০টি কন্টেন্ট সরাতে বলে সরকার। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫৩টি অনুরোধ জানায় সরকার। এসব অনুরোধের মাধ্যমে ১ হাজার ৩৫৭টি কন্টেন্ট সরাতে বলা হয়। এসব অনুরোধের ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ ক্ষেত্রে গুগল কোনো পদক্ষেপ নেয়নি এবং ৩৭ শতাংশ ক্ষেত্রে যথেষ্ট তথ্য ছিল না। বাকিগুলো সরানো হয়।
সরকারের অনুরোধের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল মানহানি, নিয়ন্ত্রিত পণ্য ও সেবা এবং সরকারের সমালোচনার বিষয়বস্তু। ইউটিউবের বিষয়বস্তু সরানোর অনুরোধ ছিল বেশি।
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার গুগলকে ২৮টি অনুরোধ জানায়। এর মধ্য ৩০টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। গুগল ১৪ শতাংশ ক্ষেত্রে সাড়া দিয়েছে।