বিথী,
তোকে লিখছি ৩৯ টাইডল্যান্ড ড্রাইভের এক নির্জন বাড়িতে বসে। টরন্টোতে এখন পুরো সামার, দেশ কি এত সুন্দ্রর হয় বীথি? প্রকৃতি কি এত অপরূপ আর মোহনীয় হয়?
নিজের বাড়ি থেকে বাস দূরত্বে প্রায় সোয়া তিন ঘণ্টা দূর হবে এই বাসা। অন্যদিকে ব্রাম্পটনে কষ্টি অফিস থেকে এই বাসার বাসের দূরত্ব মাত্র ৫০ মিনিট।
তোকে প্রথমে এই বাড়ির সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই কেমন। ইনেদ মুলেট, বয়স ৫১ বছর, মূল বাড়ি ত্রিনিদাদ। কানাডায় আছে ২৫ বছর, এই বছরের শুরুর দিকে মার্চ–এপ্রিল নাগাদ ইনেদ–এর সাথে পরিচয় হয় গুডলাইফ ফিটনেস সেন্টারে। যেখানে রেগুলার ব্যায়াম করতে যাই। কী করে ইনেদ–এর বাসায় উঠলাম, কী করে এমন ভিনদেশি একটা মেয়ে এত কাছের ও নির্ভরতার মেয়ে হয়ে উঠছে বা উঠল, সে গল্পে পরে আসছি।
এই বাড়ির দ্বিতীয় মানুষ সাগা কিম, এসেছে কানাডার কুইবেক প্রভিন্স থেকে। মূলত ফরাসি ভাষার ১৭ বছরের মেয়ে সাগা একজন জ্বলজ্বলে সুন্দরী, সারাক্ষণ স্কাইপে বয়ফেন্ডের সাথে কথা বলছে, ইনেদ এবং আমার সাথেও কথা বলছে আবার নিজের কাজ ও রান্না করছে মন দিয়ে।
এই যে, এইমাত্র সাগা ওর ছোট নোটপ্যাড নিয়ে কথা বলতে বলতে ওপর থেকে নিচে নামল, সাগা এসেছে ওয়াইএমসির একটা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে। সাগা মনে করে ও ইংলিশে কাঁচা, কিন্তু আমি জানি সাগা বেশ ভালোভাবেই ইংলিশ বলতে জানে।
ঘড়িতে এখন সন্ধ্যা ছয়টা, ইফতার হতে আরও তিন ঘণ্টা বাকি। বীথি, জীবনে বিচিত্র রকমের কষ্ট/ হাহাকার/ না পাওয়া আছে। সবার জীবনেই আছে, কিন্তু প্রাপ্তিও কি ভীষণভাবে আছে, সেটাও তো আমাদের মনপ্রাণ উজাড় করে বলা দরকার, তা–ই না?
কি ভীষণ প্রাপ্তি আছে এই বিদেশবিঁভুইয়ে তোকে সেই গল্প বলে বোঝানো যাবে না। এই আনন্দ আর বিশ্বাস বারবার আরও বেশি জীবনমুখী করে তোলে নিজেকে। আমিও সরদার ফজলুল করিম স্যারের মতো বিশ্বাস করি ‘মানুষের মৃত্যু আছে কিন্তু জীবনের মৃত্যু নেই—জীবন অমর’ শেষনিশ্বাস ফেলার আগেও স্যার বলে গেছেন জীবনের এই বিপুল জীবনমুখী দর্শন।
‘দূর পরবাস’-এ জীবনের গল্প, নানা আয়োজনের খবর, ভিডিও, ছবি ও লেখা পাঠাতে পারবেন পাঠকেরা। ই-মেইল: [email protected]যুগে যুগে সেই জীবন হাত থেকে হাতের নিশানা বদলে বেঁচে থাকে। এ যে গতকাল রাতে ‘ক্রাচের কর্নে’ বইটা শেষ করে কেবলই মনে হয়েছে, কী করে পৃথিবী এত মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে আছে? কিন্তু আসলেই কি তা–ই? কর্নেল তাহের হয়তো নেই আমাদের মাঝে, কিন্তু সৎ আর নির্ভীক তাহের তো বেঁচে আছে সাহসী হয়ে, আমাদের ইতিহাসের পাতায়, জীবনের পাতায়।
এবার আসি নিজের প্রসঙ্গে, কি কর ইনেদ–কে পেলাম? তুই তো জানিস নাইয়া যদি বাসায় না থাকে, তাহলে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা জার্নি করে বাড়ি ফেরার কোনো মানে হয় না। গত বছর এই সামারে ছিলাম ৭৪ বছর বয়সী মনিকা পারকিন্সনের বাসায় ব্রাম্পটনেই, কিন্তু হায়, মনিকা মারা গেল গত বছরই আগস্টের মাঝামাঝি। প্রিয় মনিকাও আমার কাছের মানুষ হয়েছিল।
বীথি, এসব দেশে আমি যত বেশি বিদেশিদের দেখি, তত অবাক হই, ভাবি, আহা বাংলাদেশে এদের টিভিতে দেখে মনে করতাম, এরা বুঝি কেবলই ছোট ছোট কাপড় পরে এবং যা ইচ্ছা তাই করে বেড়ায়।
কিন্তু বাস্তবতা যে কত বেশি অন্য রকম, সেটাও জানার সুযোগ হলো একজীবনেই। মনিকা বা ইনেদ বা আমার অফিসের আরও সব বিদেশি সহকর্মীরা তাদের ব্যক্তিগত জীবনে, পরিবারের ব্যাপারে কত বেশি যে মনোযোগী, সেটা খুব কাছে থেকে না দেখলে কোনো দিন জানা যাবে না। ইনেদকে বলেছিলাম, আমি সামারের দুই মাস সপ্তাহের কয়েকটা মাত্র দিন কারও বাসায় থাকতে চাই, তেমন বেশি পে করতে পারব না, খুব সামান্যই দেব, কিন্তু আমি একটা থাকার জায়গা খুঁজছি। হাসিমুখে ইনেদ বলে, আমার একটা বেজমেন্ট আছে, তুমি দেখতে পারো।
আমি তো মহাখুশি, এপ্রিল নাগাদ আমি এসে ইনেদের বাসা দেখে গেলাম। কিন্তু বাদ সাধল অন্য জায়গায়। ইনেদ বলে, না লুনা, তুমি আমার গেস্ট, তুমি আমার রুমে থাকবে, কিছুতেই নিচের ঘরে না। এই নিয়ে তুলকালাম, কথা–চালাচালি ফোনে, ৫১ বছর বয়স, ইনেদকে দেখলে মনে হবে ৩৫ বছরের ইয়াং মেয়ে।
এই কথোপকথনের ভেতর দিয়ে ইনেদকে আরও ভালো করে চিনে গেলাম। কিন্তু অন্য জায়গায়ও কিছু হিসাব আছে, তা–ই না বীথি? সবার উপরে একজন আছেন, যারও হিসাব আছে পাকাপাকি।
জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমি বুঝতে পারলাম, আমার গাড়িটা অন্তত দুই মাস চালানো বন্ধ রাখতে হবে। আর অফিস থেকে যেহেতু ইনেদের বাসায় আসতে প্রায় ২ ঘণ্টা লাগে, তাহলে নিজের বাসায় ফিরে যাওয়াই ভালো।
এ কথা ইনেদকে জানানোর জন্য ফোন করতেই ইনেদ বলে, না লুনা, তুমি আসো, আমি তোমাকে তোমার অফিসে নামানো–ওঠানো করব, তোমাকে বাস ধরতে হবে না। ভাবতে পারিস বীথি? আমার চোখে পানি এসে গেল ওর কথা শুনে।
এই পড়ন্ত অপরূপ সামারের বিকেলে বসে আছি ওর বাসায়, আমাকে থাকতে দিয়েছে ওর বেডরুমে, চারপাশ দিয়ে রুপালি আলোয় ভরে যাচ্ছে ঘর। কতখনি আন্তরিক ইনেদ হয়েছে, আমার আতিথেয়তার ব্যাপারে সেটা বলতে আরও কিছু সময় নেব।
আরও পড়ুনবীথি: পর্ব-১৪২৯ মার্চ ২০২৫কেবল ভাবছি, এ ভালোবাসার প্রপ্তিকে কোথায় রাখব?
আজকে আর না বীথি, লম্বা হয়ে গেল চিঠি। এখান থেকেই আবার লেখা শুরু করব তোকে, কেমন? ল্যাপটপ নিয়ে এসেছি, থাকব বুধবার রাত পর্যন্ত, দেখি এর ভেতরেই আবার লিখব তোকে।
এখন উঠে যাই, ইনেদ আসার আগেই কিছু কাজ সারি—মনে রাখিস, আবার শুরু করব এখান থেকেই। আদর। চলবে.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনীতিতে না জাড়ানোর কারণ জানালেন প্রীতি জিনতা
বলিউড অভিনেত্রী প্রীতি জিনতা এখন অভিনয়ে অনিয়মিত। অভিনয়ে তাকে দেখা না গেলেও নিজের ক্রিকেট দলের হয়ে মাঠে তাকে প্রায়ই দেয়া যায়। মাঝে গুঞ্জন উঠেছিলে রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন তিন। অবশ্য এবিষয়ে টুঁশব্দও করেননি এই অভিনেত্রী।
এদিকে মাস তিনেক আগে কংগ্রেসের পক্ষ অভিযোগ তোলা হয়েছিল, প্রীতি জিনতার ১৮ কোটি টাকার ঋণ নাকি মকুফ করে দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। শুধু তাই নয়, প্রীতি নাকি তার সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বিজেপির হাতে সঁপে দিয়েছেন- এমন অভিযোগও ওঠে। এরপর বলিউড নায়িকার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার জল্পনা শুরু হয়।
সম্প্রতি এক্স হ্যান্ডলে প্রীতি জিনতাকে একজন জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি ভবিষ্যতে বিজেপিতে যোগ দেবেন? আপনার গত কয়েক মাসের টুইট দেখে তো তেমনটাই মনে হচ্ছে। জবাবে অভিনেত্রী বলেন, ‘সোশাল মিডিয়ায় ব্যবহারকারীদের এটাই একটা সমস্যা। সবাই এত বিচার করতে বসে যান সবকিছু নিয়ে। আমি যেমনটা আগে বলেছি, মন্দিরে, মহাকুম্ভে যাওয়া কিংবা নিজের পরিচয় নিয়ে আমি গর্বিত। তার মানে এই নয় যে এসমস্ত কারণে আমি বিজেপিতে যোগ দেব।’
প্রীতি বলেন, ‘ভারতের বাইরে থাকার ফলে আমি দেশের প্রকৃত মূল্য উপলব্ধি করতে পেরেছি এবং আর পাঁচজন ভারতীয়র মতোই গর্ববোধ করি আমার দেশকে নিয়ে।’
রাজনীতিতে না আসার কারণ গত ফেব্রুয়ারি মাসেও জানিয়েছিলেন প্রীতি জিনতা। সেসময় তিনি বলেন, ‘রাজনীতি আমার দ্বারা হবে না। বিগত কয়েক বছরে একাধিক রাজনৈতিক দল আমাকে টিকিট দিতে চেয়েছে। এমনকি রাজ্যসভার আসনের প্রস্তাবও এসেছিল। তবে আমি বিনম্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ, আমার ইচ্ছে নেই। আর আমাকে ‘সৈনিক’ বললেও অতিরঞ্জিত হবে না। কারণ, আমি একজন আর্মি পরিবারের সন্তান। আমার বাবা সৈনিক এবং আমার দাদাও। আর্মি পরিবারের সন্তান হওয়ায় আমাদের মানসিকতা খানিক আলাদা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিজেদের উত্তর ভারতীয়, দক্ষিণ ভারতীয় কিংবা হিমাচলী বা বাঙালি বলে ভাবি না, আমাদের পরিচয় শুধুমাত্র ভারতীয়। আর হ্যাঁ, দেশভক্তি আমাদের রক্তে।’ সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন।