ভোট গেলেই ভুলে যান প্রতিশ্রুতি, হয় না সেতু
Published: 19th, April 2025 GMT
হলহলিয়া নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা। এতে দুর্ভোগে রয়েছেন ১৯ গ্রামের মানুষ। একটি সেতু নির্মাণ করা হলে পাল্টে যেতে পারে ওই চরাঞ্চলের কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সামগ্রিক চিত্র। এমন অবস্থা কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের কাজাইকাটা এলাকায়। তাই হলহলিয়া নদীর ওপর দ্রুত একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, চরশৌলমারী ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামের মানুষের রৌমারী উপজেলা শহরে যাওয়া-আসার একমাত্র রাস্তায় হলহলিয়া নদী পারাপারের উপায় নৌকা অথবা সাঁকো। এই নদীর ওপর দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন কাজাইকাটা, চর কাজাইকাটা, আন্দবাজার, ফুলকার চর, শান্তির চর, খরানিয়ারচর, সোনাপুর, গেন্দার আলগা, নামাজের চর, খেয়ারচর, ডিগ্রীরচর, বাংলা বাজার, চর ইটালুকান্দা, লাউবাড়ি, উত্তর নামাজের চর, জাহাজের আলগা, দই খাওয়ার চর, হবিগঞ্জ ও ফুলকার চর গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময় নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতারা একাধিকবার হলহলিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয় না। এ কারণে হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া জমির উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে পারেন না কৃষক। গাড়ি চলতে পারে না। এ কারণে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ পড়েছে বিপাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা বাদল মিয়া জানান, নদীতে সেতু না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। সেতুর অভাবে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। প্রতিবার নির্বাচনের আগে সেতু করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন নেতারা, ভোট গেলে তা ভুলে যান তারা। এ কারণে সেতু আর হয় না। এলাকার মানুষের কষ্টও শেষ হয় না।
শাহিন মিয়া নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, প্রতিদিন কোনো না কোনো কাজে তাদের দাঁতভাঙ্গা বাজারসহ রৌমারী শহরে যাওয়ার জন্য নদী পার হতে হয়। এতে অনেক কষ্ট হয়। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্য দ্বিগুণ খরচ বহন করতে হয়। অথচ একটি সেতু হলে এই এলাকার চিত্র বদলে যাবে।
চরশৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান দুলালের দাবি, ওই স্থানে সেতু নির্মাণ করার জন্য অনেকবার বলা হয়েছে উপজেলা মাসিক সভায়। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। সেতু না হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের চলাফেরায় কষ্ট হচ্ছে।
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-৪ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন রৌমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য আজিজুর রহমান। আগামী নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিগত দিনে যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের তিন-তিনবার চেয়ারম্যান ছিলাম। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে যেখানে যে প্রতিশ্রুতি বা মানুষের সামনে যা বলেছি, সব ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছি।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রৌমারী উপজেলা প্রকৌশলী মনছুরুল হক বলেন, ‘আমার ও ইউএনওর কাছে যদি দাবিদাওয়া করা হয়, তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।’
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার হালদারের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বিষয়টি জেনেছেন তিনি। জনসাধারণের দুর্ভোগ নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। তাঁর আশা দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।