চীন সফরের সময় নেওয়া পরিকল্পনাগুলো নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলে জানিয়েছেন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। 

রবিবার (২০ এপ্রিল) ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

বৈঠককালে তারা প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক চীন সফরের ফলাফল পর্যালোচনা করেন এবং বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা ত্বরান্বিত করতে পরবর্তী পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন।
উভয় পক্ষ অবকাঠামো, বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলোচনাকে কার্যকর প্রকল্পে রূপান্তরিত করার জন্য যৌথ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো চীন সফরের সময় আমরা যে পরিকল্পনাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি সেগুলো নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে গতি যেন হারিয়ে না যায়।” 

চীনা রাষ্ট্রদূত প্রধান উপদেষ্টার অনুভূতির প্রতিধ্বনি করে বলেন, “এটি আমাদেরও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। চীনে আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এজেন্ডা বৈঠক হয়েছে এবং আমরা কেবল চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আরও দুই থেকে তিন বছর অপেক্ষা করতে চাই না - আমরা দ্রুত সেগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই।”

আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে একটি ছিল মোংলা এবং আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, প্রস্তুতি চলছে এবং একবার সম্পন্ন হলে জোনগুলো বাস্তবায়ন শুরু করার জন্য ডেভেলপারদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সূত্র জানিয়েছে, উভয় পক্ষ চীন থেকে চারটি নতুন জাহাজ কেনার পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করেছেন। চীনা পক্ষ আশ্বাস দিয়েছে যে এই প্রক্রিয়াটি এই বছরের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

রাষ্ট্রদূত আরো নিশ্চিত করেছেন যে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন। তার সাথে বিনিয়োগকারীদের ১০০ সদস্যের প্রতিনিধিদল থাকবেন নতুন বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণের লক্ষ্যে।

বিডার চেয়ারম্যান আশিক বলেন “আমরা খাত-নির্দিষ্ট সহযোগিতা জোরদার করার জন্য চীনা বিনিয়োগকারীদের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি ক্ষুদ্র-বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করব।”
আলোচনায় স্বাস্থ্যসেবা সহযোগিতার বিষয়টি বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। চীনা পক্ষ বাংলাদেশে ১ হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যা প্রাথমিকভাবে চীন সফরের সময় প্রস্তাব করা হয়েছিল। তারা চট্টগ্রামে একটি বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠায় চলমান সহায়তার কথাও তুলে ধরেন।

চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, কুনমিং-চট্টগ্রাম সরাসরি ফ্লাইট চালু করার জন্য অগ্রগতি হচ্ছে এবং বাংলাদেশি রোগীদের জন্য চিকিৎসা ভিসা দ্রুততর করার প্রচেষ্টা চলছে।

অধ্যাপক ইউনূস সাংস্কৃতিক বিনিময়ের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে তরুণ বাংলাদেশিদের চীনা ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত করার জন্য একটি চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন।

উভয় পক্ষ তিস্তা নদী ব্যবস্থার কাজসহ জল ব্যবস্থাপনার উপর দীর্ঘমেয়াদী ৫০ বছর মেয়াদী মাস্টার প্ল্যান চালু করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রধান উপদেষ্টা চীনে পাট রপ্তানি সম্প্রসারণের সম্ভাবনাও উত্থাপন করেন এবং লোকোমোটিভ খাতে আরও বেশি চীনা বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

তিনি চট্টগ্রাম এবং সৈয়দপুর উভয় স্থানে লোকোমোটিভ উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করেন। পাশাপাশি সক্ষমতা বৃদ্ধির কর্মশালা এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচিও উপস্থাপন করা হয়।

কৃষি বাণিজ্য ছিল অগ্রগতির আরেকটি ক্ষেত্র। বাংলাদেশ এই মৌসুমে চীনে আম রপ্তানি শুরু করবে, আগামী বছর কাঁঠাল রপ্তানির সময়সূচি রয়েছে।

বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.

তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, বিআইডিএ চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ তাইয়েব, মুখ্য সচিব সিরাজউদ্দিন মিয়া এবং এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ।

তথ্যসূত্র: বাসস

ঢাকা/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ ন সফর র প রস ত কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

১১ নাটক নিয়ে শিল্পকলায় চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’

জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত ১১ দলের ১১টি নতুন প্রযোজনা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’। জাতীয় নাট্যশালায় গত ৩১ জুলাই শুরু হওয়া এই নাট্যোৎসব চলবে ৮ আগস্ট পর্যন্ত। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত এ উৎসবে নাট্যরূপে উঠে আসছে ইতিহাস, আন্দোলন ও সময়ের গল্প।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন গতকাল শুক্রবার জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’। তীরন্দাজ রেপার্টরি প্রযোজিত নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় দীপক সুমন। গতকালই ছিল এ নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মঞ্চস্থ নতুন এ নাটক নিয়ে আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে উল্লেখযোগ্য দর্শকের উপস্থিতি ছিল। দর্শকদের অনেকেই বলছেন, এই নাটকে যেন এক নাগরিকের নির্জনতা, এক প্রেমিকের না-পাওয়া, এক বিপ্লবীর বিষণ্নতা আর এক সাধারণ মানুষের অসহায়তা একসূত্রে বাঁধা পড়েছে।

জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে শুক্রবার ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ছিল। ছবি:শিল্পকলা একাডেমি

সম্পর্কিত নিবন্ধ