কর্মী পাঠাতে মালয়েশিয়ার সঙ্গে সই করা বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক সংশোধনের দাবি তুলেছেন রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট (চক্র) চান না বায়রার সদস্যরা। এ শ্রমবাজার কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য নয়, বরং সব বৈধ এজেন্সির জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে হবে। কম খরচে কর্মী পাঠানো নিশ্চিত করতে হবে।

আজ সোমবার দুপুরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া স্মারকলিপিতে এসব কথা বলেছেন বায়রার সদস্যরা। এতে আরও বলা হয়, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের বিতর্কিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত অনলাইন সফটওয়্যার বাতিল করার জন্য মালয়েশিয়া সরকারের কাছে দাবি জানাতে হবে। সিন্ডিকেটের হোতাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট করে হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন সিন্ডিকেটের হোতা রুহুল আমিন ওরফে স্বপন ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ার নাগরিক আমিনুল ইসলাম বিন আবদুন নূর ওরফে আমিন নূর। বর্তমানে রাজনীতিতে প্রভাবশালী কিছু নেতাকে নিয়ে তাঁরা নতুন করে সিন্ডিকেট গড়ার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, সিন্ডিকেট ছাড়া মালয়েশিয়া কর্মী নেবে না, যা মোটেই সত্য নয়।

৪৫৩টি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের স্বাক্ষরসহ স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন বায়রার সদস্যরা। তাঁদের পক্ষ হয়ে স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন বায়রার সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াজুল ইসলাম, ভাইস প্রেসিডেন্ট নোমান চৌধুরী, বিএনপির ঢাকা জেলা সভাপতি ও বায়রার সদস্য খন্দকার আবু আশফাক, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ও আকবর হোসেন, সাবেক সহসভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন, নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য মোস্তফা মাহমুদ।

রিয়াজুল ইসলাম, খন্দকার আবু আশফাক, মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ও আকবর হোসেন সিনিয়র সচিবের কক্ষে আলোচনা করেন। স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের খন্দকার আবু আশফাক বলেন, আগের সিন্ডিকেট থেকে কিছু বাদ দিয়ে নতুন কাউকে যুক্ত করার চেষ্টা করছে। এবার কোনোভাবেই সিন্ডিকেট হতে দেওয়া হবে না, প্রতিরোধ করা হবে। বিএনপির কেউ সিন্ডিকেটে বিশ্বাসী নয়। যদি কেউ সিন্ডিকেটে যায়, ব্যক্তি হিসেবে যাবে, দল হিসেবে নয়।

মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ও সিনিয়র সচিবের দপ্তরে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র সচিবের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে। সরকারও সিন্ডিকেট চায় না বলে সচিব জানিয়েছেন। সমঝোতা স্মারক সংশোধনে তাঁরা কাজ করবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।

কম খরচে কর্মী পাঠানোর একটি বিকল্প উপায়ও তুলে ধরা হয়েছে স্মারকলিপিতে। এতে বলা হয়, সরকারিভাবে বিএমইটি আগ্রহী কর্মীদের ডেটাবেজ (তথ্যভান্ডার) তৈরি করতে পারে। সেই ডেটাবেজ থেকে রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী সংগ্রহ করবে। সরকার নির্ধারিত খরচ ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দেবেন কর্মী। পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করবে বিএমইটি।

তাঁরা অভিযোগ করেছেন, সিন্ডিকেটকে গতবার কর্মীপ্রতি ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার রিঙ্গিত বা ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা নিত অনলাইন সফটওয়্যারের মালিকানা প্রতিষ্ঠান বেস্টিনেট, যার মালিক আমিন নূর। দেশ থেকে এ টাকা গ্রহণ করতেন তাঁর স্থানীয় প্রতিনিধি রুহুল আমিন। মালয়েশিয়া শ্রমবাজার ওই দুজন ব্যক্তির কাছে জিম্মি ছিল। এতে মালয়েশিয়া যেতে কর্মীর খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, মালয়েশিয়া ১৪টি দেশ থেকে কর্মী নিলেও কোনো দেশের জন্য নির্দিষ্ট এজেন্সিকে বাছাই করে দেওয়া হয় না। ওই সব দেশ থেকে সব এজেন্সি কর্মী পাঠাতে পারে। গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সুপরিকল্পিতভাবে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষর হওয়া সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়া সরকারকে বাছাই করার দায়িত্ব প্রদানের মধ্য দিয়ে সিন্ডিকেটের বীজ বপন করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ম রকল প ত শ রমব জ র ল ইসল ম র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ