মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ শুরু হচ্ছে
Published: 21st, April 2025 GMT
অনুমোদনের পাঁচ বছর পর দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মূল কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। বন্দর নির্মাণের প্যাকেজ-১-এর অবকাঠামো নির্মাণ করবে জাপানি প্রতিষ্ঠান। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তারা চুক্তি করবে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে এই গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে পণ্য পরিবহনে সময় এবং ব্যয় সাশ্রয় হবে।
চট্টগ্রামে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে এখন সর্বোচ্চ ১০ মিটার গভীরতার, ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টন ধারণক্ষমতার জাহাজ নোঙর করতে পারে। কিন্তু মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে প্রথম পর্যায়েই নোঙর করতে পারবে ১৬ মিটার গভীরতার জাহাজ। এতে ১ লাখ টন ধারণক্ষমতার বড় জাহাজ সহজে ভিড়তে পারবে। পণ্য পরিবহন সহজতর করতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে সংযোগকারী ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনাও নিয়েছে। এতে বর্তমানের চেয়ে জাহাজের পরিবহন খরচ ও অপেক্ষমাণ সময় চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ কমবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন জানান, বর্তমানে এক টিইইউ (২০ ফুট সমমানের ইউনিট) কনটেইনার পরিবহনে গড়ে ৩ হাজার ডলার খরচ হয়। ইউরোপে একটি চালান পৌঁছাতে ৪০ থেকে ৪২ দিন সময় লাগে। কিন্তু গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে বড় কনটেইনার জাহাজ সরাসরি নোঙর করতে পারবে। এতে করে ডেলিভারির সময় ১৫ থেকে ১৬ দিন কমে আসবে এবং খরচ নেমে আসবে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ ডলারে।
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডর এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকার প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০২৯ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জাপানের দুই খ্যাতনামা নির্মাণ ও প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান পেন্টা-ওশান লিমিটেড এবং টিওএ করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। এ চুক্তির মাধ্যমে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পৃক্ত হবে জাপান।
চট্টগ্রাম বন্দরের বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের নেতা ও মিউচুয়াল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পারভেজ আহমেদ জানান, বন্দরটি বাংলাদেশের ‘আঞ্চলিক ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট’ হিসেবে পরিচিতি পাবে। ব্যবসায়ীদের খরচ ও সময়ও অন্তত ৬০ শতাংশ সাশ্রয় করবে। বন্দর চালু হলে ভারতের কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর থেকে ফিডার জাহাজে করে পণ্য পরিবহনের সুযোগ মিলবে। আবার ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে পণ্য পরিবহন আরও সহজ হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই নির্মাণকাজ শুরু হবে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই এবং জমি অধিগ্রহণ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। আবার জাপানের দুটি প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে টাগবোট ও পাইলট বোটের মতো প্রয়োজনীয় নৌযান সংগ্রহ করা হবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, মাতারবাড়ীতে ১২শ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ গভীর সমুদ্রবন্দরের অবকাঠামো দ্রুত তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা ও অন্যান্য উপকরণ পরিবহনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল। এই চ্যানেলে এরই মধ্যে ১৬১টি জাহাজ নোঙর করেছে। পরিবহন করেছে প্রায় ৩৩ লাখ
টন পণ্য।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি ২০২০ সালে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনুমোদন পায়। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে মূল কাজ শুরু হতে দেরি হয়। ২০২৪ সালের অক্টোবরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটির ব্যয় সংশোধন করে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা নির্ধারণ করে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম ত রব ড় প রকল প পর য য় র করত
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।