শখ করে নদীতে জাল ফেলেছিলেন, ঝালমুড়ি বিক্রেতা পেলেন ৩০ কেজির বাগাড়
Published: 22nd, April 2025 GMT
যমুনা নদীতে শখ করে জাল ফেলেছিলেন ইব্রাহিম মোল্লা (৩২)। এতে ধরা পড়েছে ৩০ কেজি ওজনের বিশাল আকৃতির এক বাগাড় মাছ। আজ মঙ্গলবার ভোরে মাছটি ৩২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি।
ইব্রাহিম মোল্লার বাড়ি মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার দাসকান্দি গ্রামে। তিনি পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ঝালমুড়ি বিক্রি করেন।
ইব্রাহিমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল সোমবার বিকেলে বাড়ির পাশের যমুনা নদীতে খইয়া জাল (ঝাঁকি জাল নামেও পরিচিত) ফেলে মাছ ধরতে যান তিনি। দু-তিন মিনিট পরপর জাল তুলে চিংড়ি, টাটকিনিসহ ছোটখাটো কিছু মাছ পান। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাড়ি ফেরার আগমুহূর্তে আবার জাল ফেলেন। জাল ওঠাতে গিয়ে ভারী কিছু আটকে গেছে মনে হলে টেনে আনেন। পরে তীরে এনে দেখেন, বড় একটি বাগাড় মাছ ধরা পড়েছে। পরে স্থানীয় এক যুবকের সহায়তায় মাছটি তীরে তোলেন ইব্রাহিম। এ সময় উৎসুক লোকজন ভিড় করেন মাছটি দেখতে। তিনি মাছটি বাড়িতে নিয়ে যান এবং আজ ভোরে আরিচা মাছের আড়তে নিয়ে গিয়ে এক আড়তদারের কাছে ৩২ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
ইব্রাহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই জালে এত বড় বাগাড় ধরা পড়বো, কহনো ভাবিই নাই। আসলে কপালে থাকলে ফেরায় ক্যারা। বাড়িতে গিয়্যা মাছটি মাইপ্যা দেহি ২৯ কেজি ৭০০ গ্রাম ওজন। আজ সকালে আরিচা মাছের এক আড়তদারের কাছে ৩২ হাজার ট্যাহায় বিক্রি করছি।’
স্থানীয় লোকজন জানান, মৌসুমের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত জেলেদের জালে অর্ধশতাধিক বাগাড় মাছ ধরা পড়েছে। মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, পাবনা, ফরিদপুর এবং ঢাকার নবাবগঞ্জ ও দোহারের জেলেরা পদ্মা-যমুনাসংলগ্ন এলাকায় বোয়াল, রুই, কাতলার পাশাপাশি বড় বড় বাগাড়ও ধরছেন। মানিকগঞ্জের শিবালয় ও হরিরামপুরের মধ্যবর্তী পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় পদ্মা ও যমুনার মিলনস্থলে প্রায়ই বড় আকৃতির মাছ ধরা পড়ে; যদিও নদীতে পানি কমে যাওয়ায় মাছের অভয়ারণ্য হ্রাস পাচ্ছে।
মানিকগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, বাগাড় মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। আইন অনুযায়ী এ মাছ ধরা নিষিদ্ধ। অনেক সময় জেলেরা বিষয়টি জানেন না। তাঁদের সচেতন করতে উপজেলা মৎস্য কার্যালয় ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ দপ্তরের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
লাখপুরের রংবাহারি রাম্বুটান
১৯ জুলাই সকাল ১০টা। নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মরজাল বাজারে গাড়ি থেকে নামলাম। ততক্ষণে ব্যাপারীদের পাইকারি কেনাকাটা শেষ। মালপত্র বেঁধেছেঁদে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। কিন্তু ফুটপাতে তখনো ভিড়। খুচরা ক্রেতারা পছন্দের জিনিস কিনতে দরদাম করছেন। ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়লাম, দেখা যাক কী পাওয়া যায়।
কাঁঠালের দোকানে তেমন ভিড় নেই। লটকনের দোকান বেশি, বিক্রিও ভালো। আকার অনুযায়ী দাম। এখানে না এলে জানতামই না, এত বড় আকারের লটকন হতে পারে! এক গৃহস্থ টুকরিতে কলম্বো লেবু নিয়ে বসে আছেন। এই লেবু আকৃতি ও সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে থামতেই হলো। কয়েকটি দোকানে সাজানো হলুদ আর লাল রঙের রাম্বুটান!
দেখতে ফুলের মতো আকর্ষণীয় রঙের এই ফল সবার নজর কাড়ছে। ক্রেতারা দাম জানতে চাইছেন। কেউ কেউ কিনছেনও। জানতে চাইলাম, এই রাম্বুটান কোথা থেকে এল? দোকানির উত্তর শুনে চোখ ছানাবড়া। নরসিংদীর কয়েকটি গ্রামেই নাকি ইদানীং চাষ হচ্ছে রাম্বুটান। দারুণ ব্যাপার। এ খবর জানা ছিল না।
কাছাকাছি দূরত্বে কোনো গ্রামে গেলে কি রাম্বুটানের বাগান দেখতে পাওয়া যাবে? এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা মো. সুজন মিয়া। তিনি জানালেন,Ñকাছেই বেলাব উপজেলার লাখপুর গ্রামে চমৎকার একটি বাগান আছে।
আমরা দ্রুত বাগানের পথ ধরি। বাগানে যেতে যেতে মনে হলোÑ ঘন গাছপালার ছাউনির ভেতর দিয়ে ক্রমেই যেন হারিয়ে যাচ্ছি! এখানকার বেশির ভাগ গাছই লটকনের। বাগানগুলো এতই বড় যে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ভালোভাবে দেখা যায় না।
অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেলাম লাখপুর গ্রামে। উয়ারী ও বটেশ্বর–লাগোয়া এই গ্রামে রাম্বুটানের বাগানে গিয়ে চমকে উঠি। বেশ বড় বড় অনেক গাছ। গাছে গাছে দুই রঙের রাম্বুটান। চমৎকার দৃশ্য।
এ রংবাহারি ফল দেখার জন্য সারা দিন অনেক মানুষ ভিড় করেন সেখানে। কেউ কেউ দেখছেন, আবার কিনছেনও। একটু সময় নিয়ে বাগানটি ঘুরে দেখি। ছয়-সাত বছর বয়সী সব গাছই ফলভারে আনত। পাকা ফলগুলো দেখতে রঙের ঝরনাধারার মতো, বহুবর্ণিল। বাগান থেকে তরতাজা কিছু ফল কিনি। মন ভরে ছবি তুলি।
একসময় রাম্বুটান চিনতাম না। ২০০৫ সালে হংকংয়ে বেড়াতে গিয়ে বন্ধু মোস্তাফিজুর রহমান শাহিনের বাসায় প্রথম এ ফল খাই। পরে কুয়ালালামপুর শহরের আশপাশে রাম্বুটানের অনেক গাছ দেখেছি। দুই বছর পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে গাছভর্তি রাম্বুটান দেখে চমৎকৃত হয়েছিলাম। বীজ থেকে তৈরি চারাগুলো সেখানে প্রথম লাগানো হয় ১৯৯৮ সালে। প্রায় সাত বছর পর গাছগুলোতে ফল আসতে শুরু করে। আকৃতি ও স্বাদের দিক থেকেও ফলগুলো সমমানের।
বাগানে সুদর্শন হলুদ রঙের রাম্বুটান