রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)-এ বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতি চলমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে, ডিপ্লোমা কোটা বাতিল এবং মেধার সঠিক মূল্যায়নের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ মিছিল তালাইমারি মোড় হয়ে শেষ হয় ভদ্রা মোড়ে গিয়ে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা চাই’, ‘কোটার নামে বৈষম্য, চলবে না’, ‘আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ সহ বিভিন্ন স্লোগানে রাস্তাজুড়ে প্রতিবাদ জানায়।

বিক্ষোভে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন রুয়েট ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড.

রবিউল ইসলাম সরকার এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক ও পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এইচ. এম. রাসেল।

অধ্যাপক রবিউল ইসলাম সরকার বলেন, “এই আন্দোলন শুধুই শিক্ষার্থীদের নয়, এটি এখন প্রকৌশল পেশার মর্যাদা ও ন্যায্য অধিকারের প্রশ্ন। উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের জন্য যে ৩৩ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তা বাতিল করা জরুরি।”

তিনি আরো বলেন, “প্রকৌশল খাতে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় কেন্দ্রীয় আইইবি কমিটিকে দ্রুত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।” পাশাপাশি দেশের সকল বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের শিক্ষার্থীদের এই ন্যায়সঙ্গত দাবির পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

আন্দোলনকারীদের একজন, কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রুয়ান বলেন, “প্রকৌশল খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কাঠামোগত বৈষম্য মেধা ও পেশাগত মর্যাদার পরিপন্থী। এই বৈষম্য আমাদের দেশের প্রকৌশল ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার ঘাটতি তৈরি করছে।”

শিক্ষার্থীদের পক্ষে পুরকৌশল বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমান তিন দফা দাবি উপস্থাপন করেন। 

দাবিগুলো হলো:

সহকারী প্রকৌশলী (৯ম গ্রেড) বা সমমান পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সবাইকে সমানভাবে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং প্রার্থীর বিএসসি ডিগ্রি থাকতে হবে। কোনোভাবে কোটা বা বিকল্প পদের মাধ্যমে পদোন্নতি নয়।

উপ-সহকারী প্রকৌশলী (১০ম গ্রেড) পদ সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে, যাতে ডিপ্লোমা এবং বিএসসি উভয় ডিগ্রিধারীরাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।

‘ইঞ্জিনিয়ার’ পদবি ব্যবহারে আইনগত শর্ত নির্ধারণ করতে হবে, যেখানে শুধুমাত্র বিএসসি ডিগ্রিধারীরাই এই পদবি ব্যবহারের অধিকার পাবেন—এই বিষয়ে আইন পাস করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে।

এই আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দেশের প্রকৌশল ব্যবস্থায় একটি সুশৃঙ্খল ও মেধাভিত্তিক কাঠামো গঠনের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে।

মাহাফুজ/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসস

এছাড়াও পড়ুন:

লাখপুরের রংবাহারি রাম্বুটান

১৯ জুলাই সকাল ১০টা। নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মরজাল বাজারে গাড়ি থেকে নামলাম। ততক্ষণে ব্যাপারীদের পাইকারি কেনাকাটা শেষ। মালপত্র বেঁধেছেঁদে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। কিন্তু ফুটপাতে তখনো ভিড়। খুচরা ক্রেতারা পছন্দের জিনিস কিনতে দরদাম করছেন। ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়লাম, দেখা যাক কী পাওয়া যায়।

কাঁঠালের দোকানে তেমন ভিড় নেই। লটকনের দোকান বেশি, বিক্রিও ভালো। আকার অনুযায়ী দাম। এখানে না এলে জানতামই না, এত বড় আকারের লটকন হতে পারে! এক গৃহস্থ টুকরিতে কলম্বো লেবু নিয়ে বসে আছেন। এই লেবু আকৃতি ও সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে থামতেই হলো। কয়েকটি দোকানে সাজানো হলুদ আর লাল রঙের রাম্বুটান!

দেখতে ফুলের মতো আকর্ষণীয় রঙের এই ফল সবার নজর কাড়ছে। ক্রেতারা দাম জানতে চাইছেন। কেউ কেউ কিনছেনও। জানতে চাইলাম, এই রাম্বুটান কোথা থেকে এল? দোকানির উত্তর শুনে চোখ ছানাবড়া। নরসিংদীর কয়েকটি গ্রামেই নাকি ইদানীং চাষ হচ্ছে রাম্বুটান। দারুণ ব্যাপার। এ খবর জানা ছিল না।

কাছাকাছি দূরত্বে কোনো গ্রামে গেলে কি রাম্বুটানের বাগান দেখতে পাওয়া যাবে? এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা মো. সুজন মিয়া। তিনি জানালেন,Ñকাছেই বেলাব উপজেলার লাখপুর গ্রামে চমৎকার একটি বাগান আছে।

আমরা দ্রুত বাগানের পথ ধরি। বাগানে যেতে যেতে মনে হলোÑ ঘন গাছপালার ছাউনির ভেতর দিয়ে ক্রমেই যেন হারিয়ে যাচ্ছি! এখানকার বেশির ভাগ গাছই লটকনের। বাগানগুলো এতই বড় যে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ভালোভাবে দেখা যায় না।

অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেলাম লাখপুর গ্রামে। উয়ারী ও বটেশ্বর–লাগোয়া এই গ্রামে রাম্বুটানের বাগানে গিয়ে চমকে উঠি। বেশ বড় বড় অনেক গাছ। গাছে গাছে দুই রঙের রাম্বুটান। চমৎকার দৃশ্য।

এ রংবাহারি ফল দেখার জন্য সারা দিন অনেক মানুষ ভিড় করেন সেখানে। কেউ কেউ দেখছেন, আবার কিনছেনও। একটু সময় নিয়ে বাগানটি ঘুরে দেখি। ছয়-সাত বছর বয়সী সব গাছই ফলভারে আনত। পাকা ফলগুলো দেখতে রঙের ঝরনাধারার মতো, বহুবর্ণিল। বাগান থেকে তরতাজা কিছু ফল কিনি। মন ভরে ছবি তুলি।

একসময় রাম্বুটান চিনতাম না। ২০০৫ সালে হংকংয়ে বেড়াতে গিয়ে বন্ধু মোস্তাফিজুর রহমান শাহিনের বাসায় প্রথম এ ফল খাই। পরে কুয়ালালামপুর শহরের আশপাশে রাম্বুটানের অনেক গাছ দেখেছি। দুই বছর পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে গাছভর্তি রাম্বুটান দেখে চমৎকৃত হয়েছিলাম। বীজ থেকে তৈরি চারাগুলো সেখানে প্রথম লাগানো হয় ১৯৯৮ সালে। প্রায় সাত বছর পর গাছগুলোতে ফল আসতে শুরু করে। আকৃতি ও স্বাদের দিক থেকেও ফলগুলো সমমানের।

বাগানে সুদর্শন হলুদ রঙের রাম্বুটান

সম্পর্কিত নিবন্ধ