শেয়ারবাজারের নেগেটিভ ইক্যুইটি বা ঋণাত্মক ঋণ হিসাব নিয়ে জটিলতায় পড়েছে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর শেয়ারের বিপরীতে দেওয়া অনাদায়ি বিপুল ঋণ আদায় করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার এসব শেয়ারের বাজারমূল্য কমে যাওয়ায় শেয়ার বিক্রি করেও পুরোপুরি ঋণ সমন্বয়ের সুযোগ নেই। সে জন্য এসব ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের বিপরীতে এত দিন নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিংয়ে ছাড় পেয়ে আসছিল প্রতিষ্ঠানগুলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঋণাত্মক ঋণের বিপরীতে প্রভিশনিংয়ের বাধ্যবাধকতা পরিপালনে কয়েক দফায় সময় বাড়ায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে এই সময় শেষ হয়। ফলে এখন থেকে নিয়ম অনুযায়ী, ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ঋণাত্মক ঋণের বিপরীতে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হবে। নয়তো ঋণাত্মক ঋণ হিসাবে থাকা শেয়ার বিক্রি করে অনাদায়ি ঋণ সমন্বয় করতে হবে। দুই ক্ষেত্রেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ঋণাত্মক ঋণ হিসাব সমন্বয়ে আরও সময় চায় ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) এ বিষয়ে বিএসইসির হস্তক্ষেপ চেয়েছে। এ নিয়ে শেয়ারবাজারের শীর্ষ ২০ ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা আজ মঙ্গলবার বিএসইসির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে আর ঢালাও সময় বাড়ানো হবে না। ক্ষতিগ্রস্ত ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে এ বিষয়ে তাদের নিজ নিজ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে কমিশনে আবেদন করতে বলা হয়েছে। সেই আবেদনের ভিত্তিতে আলাদা আলাদাভাবে সময় বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

আমরা ঋণাত্মক ঋণ হিসাব ও ডিলার হিসাবের লোকসানজনিত ক্ষতির বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতির মেয়াদ বাড়াতে আবেদন করব। পরে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা এ বিষয়ে তাদের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে কমিশনে প্রস্তাব জমা দেবে। সেসব আবেদনের ভিত্তিতে কমিশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে বৈঠকে আশ্বস্ত করেছে। মো.

সাইফউদ্দিন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, ডিবিএ।  

একই ধরনের সমস্যায় রয়েছেন ব্রোকার ডিলাররা। মূলত ব্রোকার ডিলারের মাধ্যমে ব্রোকারেজ হাউসগুলো নিজেরা শেয়ারবাজারে নিজেদের পুঁজি বিনিয়োগ করে থাকে। শেয়ারবাজারে দরপতনের কারণে সেসব ডিলার হিসাবের অনেকগুলো এখন বড় ধরনের লোকসানে রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এই লোকসানের বিপরীতেও নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার কথা। কিন্তু এত দিন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে সময় নিয়ে এ ক্ষেত্রে ছাড় পেয়ে আসছিলেন ব্রোকার ডিলাররা। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারিতে সেই সময়ও শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে আর সময় না বাড়ানোর ফলে এখন ডিলারদেরও লোকসানের বিপরীতে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হবে। একাধিক ডিলার বলেছেন, বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে গেলে অনেক ব্রোকারেজ হাউস আর্থিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকে শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধিরা ২০৩০ সাল পর্যন্ত ঋণাত্মক ঋণ হিসাব ও লোকসানে থাকা ডিলার হিসাবের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ছাড়ের দাবি জানান। তাঁরা বলেন, এই সুবিধা দেওয়া না হলে প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বৈঠক সূত্র বলছে, বিএসইসির কর্মকর্তারা বিষয়টির সঙ্গে একমত হলেও ঢালাওভাবে আর সুবিধা না দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠান এই সমস্যায় রয়েছে, তারা তাদের আর্থিক ভিত্তি, লোকসানের পরিমাণ ও অনাদায়ি ঋণের পরিমাণসহ কত দিনের মধ্যে কীভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারবে, এসব বিষয় তুলে ধরে আবেদন করলে কেস টু কেস ভিত্তিতে সমাধান করা হবে।

জানতে চাইলে ডিবিএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. সাইফউদ্দিন বলেন, ‘ডিবিএর পক্ষ থেকে আমরা ঋণাত্মক ঋণ হিসাব ও ডিলার হিসাবের লোকসানজনিত ক্ষতির বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতির মেয়াদ বাড়াতে আবেদন করব। পরে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরা এ বিষয়ে তাদের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে কমিশনে প্রস্তাব জমা দেবে। কমিশন সেসব আবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে বৈঠকে আশ্বস্ত করেছে।’

এদিকে বৈঠকের বিষয়ে বিএসইসির এক বিবৃতিতে বলা হয়, সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ঋণাত্মক ঋণ সমস্যার কার্যকর সমাধানের কথা জানিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ ও অংশীজন মিলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।

বিএসইসি চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সংস্থাটির কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা অংশ নেন। অন্যদিকে ব্রোকারেজ হাউসের পক্ষে সিটি ব্রোকারেজ, লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ, ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ, ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ, ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজ, ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ, ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজসহ শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র ব এসইস র র ব পর ত সমন ব সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
  • ২২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দেবে বিএসইসি
  • পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
  • বিএসইসির তদন্তের মুখে ভ্যানগার্ড ও ক্যাপিটেক অ্যাসেট
  • দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে পুঁজিবাজার ও বন্ডকে ব্যবহারের প্রস্তাব
  • ৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ জনকে দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড