অধিকার হরণ ও অধিকার আদায় উভয়ের মাঝেই দুনিয়ার বহু কর্মকাণ্ড ঘটেছে। সামাজিক ভারসাম্য ও ন্যায়নিষ্ঠ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মানুষের তৎপরতাও কম নয়। কিন্তু তার বিপরীত চেষ্টাও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। এ জন্য আধুনিক বিশ্বে কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব আইনের উদ্ভব ঘটে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় সমাজের দুষ্টচক্র শুধু মেধাজাত সম্পদের অধিকারই হরণ করছে না, বরং পরিসর 
বাড়িয়ে পাইরেসির মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে পুনরুৎপাদন করে মেধাসম্পদ, সৃজনশীলতা ও অর্থনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ন করছে। সাম্প্রতিক বিশ্বে কম্পিউটার প্রযুক্তিনির্ভর সফটওয়্যার খাতেও পাইরেসি জেঁকে বসেছে।

মোটাদাগে, সফটওয়্যার হলো এক ধরনের প্রোগ্রাম বা নির্দেশনার সমষ্টি, যা কম্পিউটার হার্ডওয়্যারকে বিভিন্ন কাজ করতে নির্দেশ দেয়। বর্তমান চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) যুগে মানুষ হিসাব-নিকাশ থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র, সংগীতসহ নানা ক্ষেত্রে সফটওয়্যারের মাধ্যমে সৃজন প্রতিভার প্রসার ঘটিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ২০২৩ সালে প্রণীত কপিরাইটে পূর্বতন আইনের সীমাবদ্ধতা কাটাতে আর্থসামাজিক অবস্থা আমলে নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সফটওয়্যার পাইরেসির বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। কপিরাইট আইন ২০২৩-এর প্রথম অধ্যায়ের ১০ নম্বর অনুচ্ছেদে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। 
সফটওয়্যার বানাতে সোর্স কোড লাগে, ভাষা লাগে। সোর্স কোডের মাধ্যমে বিষয়টি উপস্থাপিত হয়। এ জন্য এর সুরক্ষায় কপিরাইট প্রয়োজন। যে কোনো ধরনের সফটওয়্যার চাহিদার প্রয়োজনে উন্নত ভার্সনের দরকার পড়ে। আপগ্রেড করে নতুন সংযোজিত মেধার জন্য নবায়নকৃত সফটওয়্যারও কপিরাইট করা যেতে পারে। তবে পুরোনো সফটওয়্যার মোটাদাগে ৫০ শতাংশের বেশি নতুন সংযোজন না হলে কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারে।

সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে সোর্স কোড বিন্যাস করে নতুন নামে সামনে আসে। তখন এর সুরক্ষার জন্যও কপিরাইট আবশ্যক। সফটওয়্যারের সুরক্ষার জন্যও ন্যারেটিভের কপিরাইট প্রয়োজন, পাশাপাশি বাণিজ্যিকীকরণের জন্য ব্র্যান্ড হিসেবে ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এই দুই সুরক্ষা কবচ সফটওয়্যারের সুরক্ষা দেয়। কিন্তু প্রযুক্তিনির্ভর সফটওয়্যার তৈরিতে প্রযুক্তিবিদরা যেমন মেধার কর্ষণে সৃজনের আনন্দ পান, বিপরীতক্রমে পর্দার আড়ালে থাকে পাইরেসি চক্র। তারাও প্রযুক্তির সহায়তায় পাইরেসির মাধ্যমে কপিরাইট লঙ্ঘন করে। 

সফটওয়্যার পাইরেসির ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নতুন কৌশল নেওয়া হচ্ছে। তাই আইনের মোটাদাগের পরিধির ভেতর সরল ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের কপিরাইট অফিস সফটওয়্যার পাইরেসির ক্ষেত্রে আইনের বিধির মান্যতার অনুশাসন ও অনুসরণ রক্ষা ছাড়াও কপিরাইট বোর্ড এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ইতোপূর্বে বিরোধ নিষ্পত্তির নজির রয়েছে। সফটওয়্যার পাইরেসির ক্ষেত্রে স্রষ্টা কিংবা বাণিজ্যিক ব্যবহারের স্বত্ব গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের জনতুষ্টির বিষয় অনেক সময় লোভী পাইরেট চক্রকে আরও প্রলুব্ধ করে।
উন্নয়নশীল দেশের জন্য বড় কিছু কোম্পানি অনেক সফটওয়্যার পাবলিক ডোমেন হিসেবে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। সেই সুযোগে সাধারণ গ্রাহক তুষ্ট হলেও অতিলোভী চক্র সংরক্ষিত সফটওয়্যার অবৈধ উপায়ে পাইরেসি করে আয় করতে চায়। বাংলাদেশে এই প্রবণতা এখন বেশ তীব্র। এ জন্য বর্তমান আইনের বুনন বেশ মজবুত ও প্রতিকার রক্ষায় সাজা ও দণ্ড পূর্বতন অবস্থার চেয়ে ঢের বেশি। কপিরাইট আইন ২০২৩-এর ষোড়শ অধ্যায়ে অনুচ্ছেদ ৭৮-এ দেওয়ানি, সপ্তদশ অধ্যায়ে ফৌজদারি প্রতিকারের বিধান আছে। ৮৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি চলচ্চিত্রের কপিরাইট বা এই আইনে বর্ণিত অন্য কোনো অধিকার ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করেন বা করিতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড এবং অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’ 

বর্তমানে সফটওয়্যার পাইরেসির ফলে প্রযুক্তিবিদদের সৃজনের বিনিময়ে আনন্দ, স্বস্তি, স্বীকৃতি ও যথার্থ বিনিময়মূল্য দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে শুধু মেধাস্বত্বের স্রষ্টা নয়; পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপাতদৃষ্টিতে ব্যবহারকারী সুবিধা ভোগ করে, কিন্তু তারা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন। অনেক ক্ষেত্রে সামান্য অর্থ প্রদান করে অরিজিনাল সফটওয়্যার পাওয়া গেলেও পাইরেটেড কপির প্রতি নজর বাড়ছে। 
ব্যক্তিগত কাজে ড্রপবক্স অ্যাকাউন্ট খুলে তথ্য, ছবি, নথি ইত্যাদি ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা অনেকাংশে গুগল ড্রাইভের চেয়ে সহজতর। ধারণা করা হচ্ছে, সফটওয়্যারের ওপর নির্ভরতা আমাদের যাপিত জীবনে আরও থিতু হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে শুধু কপিরাইট আইনের বিধিবিধানের কঠোরতা নয়; জনসমাজে কপিরাইট আইনের ফাঁকফোকর না খুঁজে বরং তা মেনে চলা জরুরি।
এ জন্য বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এ ব্যাপারে পাঠ্যক্রম ও আলাদা বিভাগের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদবিষয়ক পাঠদানে তত্ত্বীয় দিকের চেয়ে প্রায়োগিক দিককে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে অর্থনৈতিক বিষয়টির গুরুত্ব থাকে। তবেই পাইরেসি প্রতিরোধে জাগরণ ঘটবে জনসমাজে। 

খান মাহবুব: কপিরাইট বিশেষজ্ঞ ও প্রাবন্ধিক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সফটওয় য র র ব যবহ র জন য ব র জন য এ জন য আইন র ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতি বরখাস্

বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় অসদাচরণের  অভিযোগে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

বরখাস্তকৃতরা হ‌লেন: গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান মনি, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী  আবদুল্লা আল মামুন, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোছাঃ রাহানুমা তাজনীন, নির্বাহী প্রকৌশলী ফারহানা আহমেদ, সহকারী প্রকৌশলী মফিজুল ইসলাম এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহকারী স্থপতি শিরাজী তারিকুল ইসলাম। 

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় জানায়, কর্মস্থলে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকায় অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশের মাধ্যমে এ সকল কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

জানা গে‌ছে, মনিরুজ্জামান মনি টরেন্টো ইউনিভার্সিটিতে ডক্টোরাল প্রোগ্রামে অংশ নিতে ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি কাটানোর পর পরবর্তী সময়ে অনুমতি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী তাকে ২১ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে বরখাস্ত করা হয়। 

আবদুল্লা আল মামুন পিএইচ.ডি করতে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে  ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন। এরপর থেকে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা মোতাবেক তাকে ১৫ মে ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।    

মোছাঃ রাহানুমা তাজনীন ২০২১ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের জুলাইয়ের ৭ তারিখ পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন। ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে অননুমোদিতভাবে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে ২ জুলাই ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।   

ফারহানা আহমেদ ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর  থেকে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে ৮ জুলাই ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

মফিজুল ইসলাম ২০২৩ এর ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি কাটালেও পরে ছুটি না নিয়ে অফিসে  অনুপস্থিত। তাকে ২৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।

শিরাজী তারিকুল ইসলামও ২০২২ সালের ১২ মে থেকে ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে ২১ মে ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন// 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কলকাতায় বাংলাদেশি অভিনেত্রী গ্রেপ্তার , দাবি ভারতীয় গণমাধ্যমের
  • কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী
  • ওভালে টস হেরে ব্যাটিংয়ে ভারত, একাদশে চার পরিবর্তন
  • কর্মস্থলে অনুপস্থিত, পাঁচ প্রকৌশলী ও এক স্থপতি বরখাস্ত
  • গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতি বরখাস্
  • দলবদলের বাজারে চেলসিই রাজা, শীর্ষ দশে আর কারা
  • গাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে কেন বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এসব দেশ
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়ালো
  • উইন্ডোজ ১১ আপডেট করতে না পারার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে মাইক্রোসফট
  • আলোচিত ষোড়শী আইনার পারিশ্রমিক কত?