রোমাঞ্চ, উত্তেজনা ছড়াল। নখ কামড়ানো মুহূর্তও এলো। প্রতিটি বল, প্রতিটি রান হয়ে উঠল মহামূল্যবান। প্রতিটি মুহূর্তে রঙ পাল্টাল। এই ম্যাচে জয়-পরাজয়ের পেন্ডুলাম দুই দলের দিকেই দুলেছে। সমীকরণ কখনো বাংলাদেশকে হাসায়, কখনো জিম্বাবুয়েকে। আবার কখনো চোখ রাঙানি দেয় দুই দলকে।

শেষমেশ টানা দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়ে বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে দুইশ উইকেটের মাইলফলক ছোঁয়া মেহেদী হাসান মিরাজের বলে রিভার্স সুইপে ওয়েসলি মাধভেরে ৪ রানের সমীকরণ মিলিয়ে দেওয়ায় স্বাগতিক শিবিরে নেমে এলো পিনপতন নিরাবতা। ধ্রুপদী পারফরম্যান্সে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে।

১৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়া নেমে ৯৫ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়লেও জিততে ঘাম ঝরিয়েছে তারা। তাদের ঘাম ছুটেছে মিরাজের ঘূর্ণিতে। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া মিরাজ এবারও পেলেন সমান উইকেট। সঙ্গে তাইজুলের শিকার ২। তাতে বোলিংয়ে কিছুটা লড়াই করলেও দুই ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের হতশ্রী পারফরম্যান্সেই ডুবেছে বাংলাদেশ।

আরো পড়ুন:

শান্ত কেন ‘অশান্ত?’

বাংলাদেশের বিপক্ষে কঠিন দিন, তবে এখনো ম্যাচে আছি: মুজারাবানি

১৯৪ রানে ৬ উইকেট হাতে রেখে দিন শুরু করা বাংলাদেশ মাত্র ৫৫ রান যোগ করতেই অলআউট। বাংলাদেশের ভরডুবির শুরুটা দিনের দ্বিতীয় বল থেকে। এতোটা সহজে জিম্বাবুয়ে সাফল্য পাবে হয়তো কল্পনাও করেনি। পেসার মুজারাবানির শর্ট লেন্থের বল পুল করতে চেয়েছিলেন শান্ত। কিন্তু শটটা পুরোপুরি খেললেন না। জাস্ট চেক করলেন। বলে ছিল গতি। টপ এজ হয়ে চলে যায় ফাইন লেগে। সেখানে সহজ ক্যাচ নিয়ে শান্তকে হতাশায় ডোবান নয়ুচি। সাত ইনিংস পর ফিফটি পাওয়া শান্ত থেমে যান ৬০ রানে।

ক্রিজে এসে মিরাজ স্থির থাকতে পারলেন না। ক্যালকুলেটিভ ক্রিকেট খেলার ওপর জোর দিয়েছিলেন মুমিনুল। কিন্তু মিরাজ যেভাবে অফস্টাম্পে বেরিয়ে যাওয়া বল ড্রাইভ করতে গেলেন তাতে নিবেদন নিয়ে উঠল প্রশ্ন। তাকে শর্ট বলে পরীক্ষা নিলেন মুজারাবানি। আগের দিন মিরাজ জানিয়েছিলেন, শর্ট বল তার স্কোরিং জোনও। সেটাই হলো। পুল শটে মুজারাবানিকে ছক্কা উড়ান। আরেক পেসার নয়ুচিকে মারেন চার। পরিকল্পনা পাল্টে তাকে ব্যাক অব লেন্থে বল করেন মুজারাবানি। জোড়া পায়ে ব্যাকফুটে বল খেলতে গিয়ে মিরাজ ক্যাচ দেন গালিতে, ১১ রানে।

তাইজুল এরপর উইকেটে টেকেন ৩ বল। তাতে বাংলাদেশের বড় স্কোরবোর্ডের সম্ভাবনাও কমে যায়। কিন্তু অষ্টম উইকেটে জাকের ও হাসান দেয়াল হয়ে দাঁড়ান। ৯১ বল দুজন লড়াই করেন। যেখানে হাসান ৫৮ বল একাই খেলেন। জাকের আক্রমণ করার পরিবর্তে ওভারের শুরুতে সিঙ্গেল নেওয়ায় তার ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। থিতু হওয়া ব্যাটসম্যান কেন রান বাড়ানোর চেষ্টা করলেন না তো বোঝা গেল না একটুও। হাসান পথ ভুলেন ওয়েলিংটনের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে। বাঁহাতি স্পিনার খালেদকে পরের বলেই স্লিপে তালুবন্দি করান। লেজের ব্যাটসম্যান নাহিদকে নিয়ে জাকের ৭ রানের বেশি করতে পারেননি। টানা চার টেস্টে অন্তত এক ইনিংসে ফিফটি তোলার অনন্য রেকর্ড গড়া জাকেরের ব্যাট থেকে আসে ৫৮ রান।

বাংলাদশ জিম্বাবুয়েকে অন্তত ৩০০ রানের টার্গেট দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ২৫৫ রানে অলআউট হয়ে লক্ষ্য দেয় ১৭৪ রানের। শুরুতে বেনেট ও বেন কুরান ৯৫ রান তুললে কাজটা সহজ হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের জন্য। প্রতি আক্রমণে গিয়ে তারা রান তোলেন অনায়েসে।

কিন্তু উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর সব এলোমেলো হয়ে যায় মুহূর্তেই। রান আসছিল। সঙ্গে পড়ছিল উইকেট। তাতে জমে উঠে ম্যাচ। কিন্তু শেষ হাসিটা আর হাসতে পারেনি বাংলাদেশ। মিরাজের দুইশ উইকেটের মাইলফলক ছোঁয়া ম্যাচটাতেও আর জিততে পারেনি।

সিলেটের এই মাঠকে জিম্বাবুয়ের জন্য পয়মন্ত বলতে হবে। দুই টেস্ট খেলে দুটিতেই জয় পেলে। ২০১৮ সালে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভিষেক ম্যাচে ১৫১ রানে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল তারা। মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, লিটন, শান্তরাও খেলেছিলেন ওই ম্যাচ। জিম্বাবুয়ে দলে হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, সিকান্দার রাজা, ব্রেন্ডন টেলরের মতো তারকারা ছিলেন। একপেশে ম্যাচে বাংলাদেশ সহজেই করে আত্মসমর্পণ।

সাত বছর পর আবার সেই একই ক্রিকেট। পার্থক্য এবার একটু শেষ দিকে লড়াই করেছে। নয়তো সিলেট ও জিম্বাবুয়ে ‘ভূত’ বাংলাদেশের ওপর বেশ ভালোভাবেই চেপে বসেছে বোঝা যাচ্ছে। সেই ‘ভূত’ সামনে কবে তাড়াতে পারবে বাংলাদেশ সেটাই দেখার।

বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজের ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে বিটিভিতে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর নস্টালজিয়ার ছোঁয়া লেগেছে অনেকের মনে। পুরোনো দিনের ক্রিকেটের কথাই মনে হয়েছে সবার। ক্রিকেটাররা মাঠের পারফরম‌্যান্সে সেই ‘বিটিভি যুগের’ ক্রিকেটকেই ফিরিয়েছেন। দুই ইনিংসে ব‌্যাটিংয়ে ব‌্যর্থতা। বোলারদের লড়াই। তাতে কিছুটা মুখরক্ষা হয়েছে। কিন্তু ২২ গজে তাদের যে নিবেদন, শরীরী ভাষার যে হতশ্রী নিদের্শন তাতে পুরো দলকে কাঠগড়ায় তোলা যাবে।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

তাইজুলকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে অবমূল্যায়িত বোলার’ বললেন তামিম

চট্টগ্রাম টেস্টে আজ প্রথম দিনে জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসে ৬০ রানে ৫ উইকেট পেয়েছেনতাইজুল ইসলাম। টেস্টে এ নিয়ে ১৬তমবার ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেন  বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার। প্রথম দিনের খেলা শেষে তাইজুলের প্রশংসা করে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাস দেন তামিম ইকবাল।

আরও পড়ুনতাইজুলের মনে হয় না তারা খেলা বোঝে১ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের পেজে তাইজুলের একটি ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, ‘এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে অবমূল্যায়িত (আন্ডাররেটেড) বোলার। এখন খেলা অন্য বোলারদের পরিসংখ্যান দেখুন, তাহলে আমার কথাটা বুঝতে পারবেন। আরেকবার ৫ উইকেট নিয়ে দারুণ খেলেছ তাইজুল।’

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে টেস্ট ও ডিসেম্বরে ওয়ানডে অভিষেক তাইজুলের। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক ২০১৯ সালে। ওয়ানডে (২০) ও টি-টোয়েন্টির (২) চেয়ে টেস্ট ম্যাচই (৫২) বেশি খেলেন তাইজুল। চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলতি টেস্টে প্রথম দিনের পারফরম্যান্সসহ মোট ৫৩ টেস্টে এ পর্যন্ত ২২৪ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। তাঁর টেস্ট সংস্করণের পারফরম্যান্সটা যাচাই করে দেখা যায়।

এখনো যাঁরা খেলছেন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট নাথান লায়নের। অস্ট্রেলিয়ার অফ স্পিনারের টেস্ট অভিষেক ২০১১ সালে। তাইজুলের টেস্ট অভিষেকের সময় থেকে লায়নের পারফরম্যান্স—   ১০৩ টেস্টে ২৯.৪৮ গড়ে ৪৪১ উইকেট। মোট ২৪ বার ৫ উইকেট নিলেও তাইজুলের অভিষেকের পর থেকে ১৯ বার ৫ উইকেট নেন লায়ন। তবে অস্ট্রেলিয়া দল বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি টেস্ট খেলায় লায়ন এ সময়ে তাইজুলের চেয়ে অনেক বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন। বোলিং গড় এবং স্ট্রাইকরেটে লায়ন ও তাইজুলের মাঝে ব্যবধান বেশি না। তাইজুলের বোলিং গড় ৩১.৫৬, স্ট্রাইক রেট ৬১.৯, যেখানে লায়নের স্ট্রাইকরেট ৬১.৬ ও গড় ৩০.১৯।

আরও পড়ুনতাইজুলের ভেলকি, শেষ সেশনে গেল ৭ উইকেট২ ঘণ্টা আগে

ভারতের স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন গত বছর ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়েন। টেস্টে তার অভিষেক ২০১১ সালে। তাইজুলের টেস্ট অভিষেক থেকে এই সংস্করণে ৮৫ ম্যাচে ২২.৮৪ গড়ে ৪৩০ উইকেট নেন অশ্বিন। এ সময়ে ২৮ বার পেয়েছেন ৫ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার মতো ভারতও বেশি বেশি টেস্ট খেলায় স্বাভাবিকভাবেই এ সময়ে তাইজুলের তুলনায় বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন অশ্বিন।

ভারতের আরেক স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। তাইজুলের অভিষেকের দুই বছর আগে টেস্টে অভিষেক জাদেজার। তাইজুলের অভিষেকের সময় থেকে এ পর্যন্ত ৬৮ টেস্টে ২৭৮ উইকেট নিয়েছেন জাদেজা। তবে তাঁর চেয়ে এ সময়ে বেশি সংখ্যকবার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। জাদেজা এ সময়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন ১৩ বার, তাইজুল নিয়েছেন ১৬ বার।

তাইজুল ৫ উইকেট নেওয়ার পর তাঁকে জড়িয়ে ধরেন অধিনায়ক নাজমুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের
  • আজিজুল হাকিমের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স, কলম্বোয়ও হেসেছে বাংলাদেশ
  • ‘বাজপাখি’ মার্তিনেজের বাজে ফর্ম, আর্জেন্টিনার জন্য কতটা দুশ্চিন্তার
  • বিজয়-সাদমানের শতরানের জুটি, প্রথম সেশন বাংলাদেশের
  • সাদমানের ফিফটি
  • সাদমান-বিজয়ের জুটির ফিফটি
  • প্রথম বলেই তাইজুলের আঘাত, ২২৭ রানে অলআউট জিম্বাবুয়ে
  • সমালোচকরা খেলা বোঝে না!—আক্ষেপ তাইজুলের
  • তাইজুলকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে অবমূল্যায়িত বোলার’ বললেন তামিম
  • বার্সেলোনা ও পিএসজি ছাড়া যে কীর্তি গড়ার সুযোগ নেই এবার আর কারও