টেস্টে ম্যাচ প্রতি ৮ লাখ টাকা, তবুও শান্তদের ফর্মে খরা!
Published: 23rd, April 2025 GMT
প্রশ্নটা শুনতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত প্রস্তুত ছিলেন না। কিছুক্ষণ আগেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট হেরেছেন। চোখে মুখে বিষন্নতা স্পষ্ট। সংবাদ সম্মেলনে এসেছে বিমর্ষ মুখ নিয়ে।
পারফরম্যান্সের আয়নায় নিজেদের খুঁজেও পাচ্ছেন না। একেবারেই অধারাবাহিক। অপেশাদারিত্ব মনোভাব। স্রেফ দায়সারা ও গা-বাঁচানো ক্রিকেট খেলছেন। তাইতো প্রশ্ন উঠছে, বিসিবি এতো সুযোগ-সুবিধা, বেতন বাড়ানো, ম্যাচ ফি’র উন্নতি, বোনাস ঘোষণা করেও কেন সুফল পাচ্ছে না? অধিনায়ক শান্তর কাছেই তাই জানতে চাওয়া, আর কী করলে পারফরম্যান্স পেতে পারে বাংলাদেশ।
অধিনায়ক প্রশ্নটা শুরুতে ভালোভাবে নেননি। তাইতো পাল্টা প্রশ্ন করেই বললেন, ‘‘বেতন বাড়ানোয় মনে হয় আপনারা খুশি না। বা ম্যাচ ফি।’’ তবে বিসিবিকে ধন্যবাদ জানাতে ভুল করেননি, ‘‘অনেক দিন পর আমাদের ম্যাচ ফি বেড়েছে সেটা অবশ্যই অ্যাপ্রিসিয়েট করার মতো বিষয়।’’
শান্ত, মিরাজ ও লিটন বিসিবির ‘এ’ ক্যাটাগরির ক্রিকেটার। তারা ৮ লাখ টাকা করে প্রতি মাসে বেতন পাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় চুক্তির সর্বনিম্ন গ্রেড ‘ডি’। সেখানে থাকা দুই ক্রিকেটার মাস প্রতি পাচ্ছেন ২ লাখ টাকা। ২০২০ সাল থেকে ক্রিকেটাররা ম্যাচ ফি প্রতি টেস্টে ৬ লাখ টাকা, প্রতি ওয়ানডেতে ৩ লাখ টাকা ও প্রতি টি-টোয়েন্টিতে ২ লাখ টাকা করে পেয়ে আসছিলেন।
আরো পড়ুন:
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে এনামুল
যেকোনো মূল্যে আমরা জিততে চেয়েছিলাম: আরভিন
গত বছর ম্যাচ ফি বাড়িয়ে টেস্টে ৮ লাখ, ওয়ানডেতে ৬ লাখ ও টি-টোয়েন্টিতে ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছিল তখনকার ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ। তবে বোর্ড সভায় অনুমোদন পায়নি সেটি। ফারুক আহমেদের বোর্ড গত মার্চে তা অনুমোদন দেয়। সাম্প্রতিক অতীতের পারফরম্যান্স খুব একটা আশা জাগানিয়া নয়—তবে বাড়ছে ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স বোনাসও।
সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে মাঠে নেমে একাদশে থাকা সব ক্রিকেটার ৮ লাখ টাকা করে পেয়েছেন। একাদশের বাইরে থাকা নাঈম হাসান ও জাকির হাসান ছিলেন দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ ক্রিকেটার। তারা পেয়েছেন ম্যাচ ফির ৫০ শতাংশ টাকা, অর্থ্যাৎ ৪ লাখ টাকা। আর চতুর্দশ ও পঞ্চদশ ক্রিকেটার ছিলেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ও তানজিম হাসান সাকিব। তারা পেয়েছেন ৩০ শতাংশ, ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতি দিনের দৈনিক ভাতা তো আছেই।
সুযোগ-সুবিধা, অর্থ-বৈভব কোনো কিছুরই ঘাটতি নেই। তবুও পারফরম্যান্স মনোঃপুত নয়। শান্ত বললেন সামনে এগিয়ে যেতে ভালো ক্রিকেটের বিকল্প নেই, ‘‘আর কি হলে আসলে ভালো হবে….
সিলেট/ইয়াসিন/আমিনুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন আসরে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা, খেলা কবে-কোথায়
অভাগাদের বছরে ‘কুফা’ কাটানোর তালিকায় সর্বশেষ নাম দক্ষিণ আফ্রিকা। লর্ডসে গতকাল অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টেস্টের রাজদণ্ড হাতে পেয়েছে টেম্বা বাভুমার দল। প্রোটিয়াদের শ্রেষ্ঠত্বের মধ্য দিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসর শেষ হয়েছে।
তবে এর রেশ থাকতেই চলে এসেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ আসর বা চক্র। ২০২৫-২৭ চক্রের শুরুটা হচ্ছে বাংলাদেশকে দিয়েই। আগামী ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন দল। ২৫ জুন কলম্বোয় শুরু দুই দলের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এটিই প্রথম সিরিজ।
ক্রিকেটের অভিজাত এই সংস্করণে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বছর পার দিলেও রেকর্ড ভালো নয়। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আসার পর থেকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ক্রমশ উন্নতির দিকে।
প্রথম চক্রে (২০১৯-২১) কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দ্বিতীয় চক্রে (২০২১-২৩) মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ঐতিহাসিক জয় বাদ দিলে বলার মতো কিছু নেই। প্রথম দুই চক্র শেষ করতে হয়েছে পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থেকে।
তবে তৃতীয় চক্রে (২০২৩-২৫) বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বেশ আশাব্যঞ্জক। ১২ টেস্ট খেলে জিতেছে চারটিতে। এর মধ্যে গত বছর পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ধবলধোলাইয়ের সুখস্মৃতিও আছে। পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান ছিল সাত নম্বরে; পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপরে। তিন চক্র মিলিয়ে বাংলাদেশ খেলেছে ৩১ টেস্ট। জিতেছে পাঁচটি, ড্র করে দুটি আর হেরেছে ২৪টি।
এবার কী হবে? শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার আগে মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে আশার বাণীই শুনিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল। তিনি বলেছেন, ‘গত চক্রে আমরা চারটা ম্যাচ জিতেছি। আমাদের একটু উন্নতি হয়েছে। লক্ষ্য থাকবে এই চক্রে কীভাবে আরও একটা-দুইটা ম্যাচ বেশি জিততে পারি।’ সেটা কতটুকু সম্ভব, সময়ই বলে দেবে।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের তিন চক্রের মতো এবারও অংশ নিচ্ছে ৯ দল। প্রত্যেক দল খেলবে ছয়টি করে সিরিজ—তিনটি নিজেদের মাঠে, তিনটি প্রতিপক্ষের মাঠে। পয়েন্ট সিস্টেমেও কোনো পরিবর্তন আসেনি (জিতলে ১২, ড্র করলে ৪, টাই করলে ৬ পয়েন্ট)।
তবে এবার ম্যাচের সংখ্যা গত দুবারের চেয়ে একটি বেড়েছে। ফাইনালসহ মোট ম্যাচ হবে ৭১টি, সিরিজ ২৭টি। প্রত্যেক সিরিজেই সর্বনিম্ন দুই ও সর্বোচ্চ পাঁচটি ম্যাচ হবে।
চতুর্থ চক্রের ফাইনালও লর্ডসে আয়োজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই ম্যাচ হবে ২০২৭ সালের জুনে। ফাইনালের আগে শেষ সিরিজ হবে সেই বছরের মার্চে; পাকিস্তানে দুটি টেস্ট খেলতে যাবে নিউজিল্যান্ড।
এবার সবচেয়ে বেশি ২২ ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২১ ম্যাচ খেলবে ইংল্যান্ড। সবচেয়ে কম ১২টি করে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা, যাদের সিরিজ দিয়েই শুরু হচ্ছে এবারের চক্র। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ দলের টেস্ট সিরিজ এই একটিই। নাজমুল-মুশফিক-তাইজুলদের বাকি পাঁচ সিরিজই ২০২৬ ও ২০২৭ সালে। সব সিরিজেই দুটি করে ম্যাচ।
২০২৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ মার্চে, ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই বছরের আগস্টে দল যাবে অস্ট্রেলিয়ায়। ২০০৩ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেটিই হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের প্রথম টেস্ট সিরিজ।
এই চক্রে বাংলাদেশের ঘরের মাঠে দ্বিতীয় সিরিজ খেলবে ২০২৬ সালের অক্টোবরে; খেলতে আসবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের মাসে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। বাংলাদেশের শেষ সিরিজ দেশের মাটিতেই; ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আসবে ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালের পর এটিই হবে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ।
অনুপ্রেরণা জোগানোর মতো খবর হলো ২০২৫-২৭ চক্রে বাংলাদেশ যে ছয় দলের বিপক্ষে খেলবে, এর চারটির বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে তারা হারেনি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করেছে আর পাকিস্তানকে করেছে ধবলধোলাই (দুই ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়)। সিরিজ হেরেছে শ্রীলঙ্কা আর বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে।