শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে সিপিআর ও এইডি প্রশিক্ষণ চালুর পরামর্শ
Published: 24th, April 2025 GMT
ধরুন, আপনারা কয়েকজন গাড়িযোগে দূরে কোথাও যাচ্ছেন। হঠাৎ সহযাত্রীদের একজনের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল। দ্রুত তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাস না ফিরলে মৃত্যু নিশ্চিত। স্বল্প দূরত্বে কোনো হাসপাতালও নেই। এ ক্ষেত্রে আপনি কী করবেন? এ ক্ষেত্রে আপনার সিপিআর বা কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশনের মৌলিক প্রশিক্ষণ থাকলে অসুস্থ সহযাত্রীর জীবন বাঁচাতেও পারেন।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘ভবিষ্যতের তামিমদের বাঁচান: সিপিআর-প্রস্তুত বাংলাদেশ গঠনে প্রতিবছর ১,০০,০০০ জীবন বাঁচান’ শীর্ষক এক নীতিনির্ধারণী আলোচনার আয়োজন করা হয়।
এ আলোচনায় জীবনরক্ষাকারী সিপিআর ও এইডি (অটোমেটেড এক্সটারনাল ডিফিব্রিলেটর) যন্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরেন আলোচকেরা। সম্প্রতি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হার্ট অ্যাটাকে ক্রিকেটার তামিম ইকবালের জীবন বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হয়। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
ই–টু–ডি ওয়ার্ল্ড স্কুল অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়ালস, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেন সিপিআর দিয়ে তামিম ইকবালের হৃৎস্পন্দন ফেরানোর ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ভূমিকা রাখা মোহামেডানের ট্রেনার ইয়াকুব চৌধুরী ডালিম। সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন ই-টু-ডি ওয়ার্ল্ড স্কুল অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়ালসের প্রতিষ্ঠাতা চ্যান্সেলর ও পার্টনার অধ্যাপক বারি কাহার।
অধ্যাপক বারি কাহার বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো আম্বুলেন্সে এইডি থাকে না, চালক বা সেবাকর্মীরা সিপিআর জানেন না। সঠিক নিয়মে না জানার জন্য অনেকে সিপিআর দিতে গিয়েও ব্যর্থ হন। আবার দেখা যায়, চিকিৎসকেরাও সিপিআর দেওয়া নিয়ে আইনি ভয় পান। কেননা, অনেকে ভাবেন বুকে চাপ দেওয়ার কারণেই রোগী মারা গেছেন।
এ পরিস্থিতি বদলানো সম্ভব বলে মনে করেন অধ্যাপক বারি কাহার। তিনি বলেন, মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তকে ‘বেসিক লার্নিং স্কিল’ হিসেবে সিপিআরকে যুক্ত করা গেলে দক্ষ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে উঠবে।
সভায় অধ্যাপক এম এ রশিদ বলেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হার্ট অ্যাটাক মানেই হৃৎপিণ্ডের আচমকা থেমে যাওয়া। তখন হাসপাতালের চেয়ে জরুরি হয় পাশে থাকা মানুষটা। হাসপাতালে আসা অনেক রোগীকে বাঁচানো যেত, যদি পাশে কেউ মাত্র দুই মিনিট আগে সিপিআর দিত।
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সালেহা নাসরিন বলেন, শুধু ঢাকায় নয়, প্রতিটি জেলা শহরে স্কুল-কলেজে সিপিআর ও এইডি প্রশিক্ষণ চালু করা এখন সময়ের দাবি। এইডি ব্যবহার করতে চিকিৎসক হতে হয় না। একজন দোকানদারও পারেন জীবন বাঁচাতে, যদি তাঁকে একবার শেখানো হয়।
গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও মেডিকেল অ্যাডভাইজার ব্রিগেডিয়ার (অব.
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক ও ঢাকা বিভাগের প্রধান সালাহ উদ্দিন, জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের চিকিৎসক নুসরাত দৃষ্টি, কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজিস্ট প্রদীপ কুমার সরকার, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আনোয়ার হাবিব কাজল, স্কিল জবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কে এম হাসান, জাগো ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ইয়ুথ কো-অর্ডিনেটর সাদিয়া জাহান প্রমুখ।
আরও পড়ুনতামিম ইকবালের জীবন রক্ষা করেছে সিপিআর, এটি কেন সবার জেনে রাখা জরুরি, কোথায় শিখবেন ২৬ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভয় দেখাতে হামলা, নির্দেশদাতা এখনো পলাতক
চট্টগ্রাম নগরে কাস্টমসের দুই কর্মকর্তার প্রাইভেট কার থামিয়ে হামলার ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে নগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। আজ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে বান্দরবান থেকে কাজী মো. ইমন হোসেন (২৩) ও মো. সুজন (২৪)–কে গ্রেপ্তার করে ডিবি (পশ্চিম)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, এক ব্যক্তির নির্দেশে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে এ হামলা চালান। সেই নির্দেশদাতা এখনো পলাতক।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশীদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, হামলার সময় ওই ব্যক্তির মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়। কাস্টমস কর্মকর্তাকে ভয় দেখানোই ছিল হামলার লক্ষ্য। পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
৪ ডিসেম্বর সকালে নগরের ডবলমুরিং থানার সিডিএ আবাসিক এলাকায় কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বদরুল আরেফিন ভাড়ায় নেওয়া প্রাইভেট কারে করে যাচ্ছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলে করে তিন ব্যক্তি তাঁদের গাড়ি থামিয়ে চাপাতি দিয়ে গাড়ির কাচে কোপ দেন। গাড়ির কাচ ভাঙার পাশাপাশি হামলাকারীরা একজন আরেকজনকে বলতে থাকেন, ‘গুলি কর, গুলি কর’। তবে দুই কর্মকর্তা দ্রুত গাড়ি সরিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসেন।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের ধারণা, সম্প্রতি বিভিন্ন অনিয়ম, রাজস্ব জালিয়াতি ও নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি আটকে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে জড়িত চক্র হামলা চালাতে পারে। কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যমানের নিষিদ্ধ পপি বীজ ও ঘন চিনি, প্রায় ৩০ কোটি টাকার নিষিদ্ধ সিগারেট এবং মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা বিপুল পরিমাণ প্রসাধনী জব্দ করা হয়েছে। এসব অভিযানে দুজন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। প্রসাধনী জব্দের পর মো. আসাদুজ্জামানকে ফোনে হুমকিও দেওয়া হয়।
হামলার নির্দেশদাতার পরিচয় এখনো প্রকাশ করেনি পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে তারা। তবে হামলায় ওই ব্যক্তির ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার মো. তারেক মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, নিষিদ্ধ পপি বীজ, ঘন চিনি ও মিথ্যা ঘোষণায় আসা প্রসাধনী জব্দের কারণে একটি সিন্ডিকেট ক্ষুব্ধ। গত দুই মাসে এসব সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকেই বিভিন্ন নম্বর থেকে হুমকি আসছে।
আরও পড়ুনগাড়ি থামিয়ে কাচে চাপাতির কোপ, একজন বলতে থাকেন, ‘গুলি কর, গুলি কর’০৪ ডিসেম্বর ২০২৫