অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত চীন: রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন
Published: 24th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের তীব্র সমালোচনা করে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত চীন। বুধবার ২০২৫ সালের জন চায়না এইডের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠকের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী আগামী মাসে ঢাকায় আসছেন। তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে চীনের ১০০ বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আসবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থানরত আরও ১০০ ব্যবসায়ী তাঁর সঙ্গে যোগ দেবেন। এ ছাড়া স্থানীয় আরও কিছু প্রতিষ্ঠানকে মে মাসের পরিকল্পিত বিনিয়োগ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
ইয়াও ওয়েন বলেন, মোংলা বন্দর প্রকল্প এবং চট্টগ্রামে চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি তিস্তা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত বেইজিং। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে বাংলা নববর্ষের ড্রোন শো বাংলাদেশে এটা প্রথম, আর চীনও এই প্রথম কোনো দেশে শোর জন্য আড়াই হাজার ড্রোন পাঠাল। এই ড্রোন শোর দারুণ সাফল্য আমরা একে অন্যের কত কাছাকাছি এবং দুই দেশ কীভাবে পরিবর্তনের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে পারে তার প্রতিফলন।’
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘মনে আছে সেদিন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনে ড্রোন শো চলাকালে দর্শক চীন চীন চীন বলে স্লোগান দিচ্ছিল। এ ধরনের আয়োজন আমাদের মধে৵ নৈকট্য বাড়ায় আর আমাদের একে অন্যের সত্যিকার বন্ধুতে পরিণত করে। ওই অনুষ্ঠানের অংশীদার হতে পেরে আমরা গর্বিত।’
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ দুই দেশের সহযোগিতার ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করে। গত মাসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলন ২০২৫–এ যোগ দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে বেইজিং সফর করেছিলেন। সফরে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাত করেন, যা চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়নের একটি নতুন পর্যায় চিহ্নিত করে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরে দুই দেশের মধ্যে বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতায় নতুন গতি সঞ্চার হয় বলে উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের সমাজে একটি বিস্তৃত ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। চীন বাংলাদেশ ও বিশ্বের উন্নয়নের জন্য সংস্কার আরও গভীর করবে এবং উচ্চস্তরের সুযোগ সম্প্রসারণ করবে।
ইয়াও ওয়েন বলেন, চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে এবং ডিজিটাল অর্থনীতি, সুনীল অর্থনীতি, অবকাঠামো এবং পানি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতার সুযোগ খুঁজবে। চীনে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের জন্য চিকিৎসা সুবিধা সহজতর করবে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৃত্তির সুযোগ সম্প্রসারণ করবে। পাশাপাশি চীনে ব্যবসা, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের বৃহত্তর সম্পৃক্ততাকে উৎসাহিত করবে।
মার্কিন শুল্কারোপকে চীন সরকার তীব্র নিন্দা ও দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের অভিন্ন উন্নয়ন অর্জনে একসঙ্গে কাজ করার জন্য একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক পরিবেশ প্রয়োজন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তা ও বাণিজ্য ঘাটতির অজুহাতে চীন–বাংলাদেশসহ তার সব বাণিজ্য অংশীদারের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। এটি সব দেশের বৈধ অধিকারের তীব্র লঙ্ঘন এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মকে গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছে। সেই সঙ্গে এ শুল্ক আরোপ নিয়মভিত্তিক বহুপক্ষীয় বাণিজ্যব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে দুর্বল ও বিশ্ব অর্থনৈতিক শৃঙ্খলাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে যে বাণিজ্য বা শুল্ক যুদ্ধে কেউ বিজয়ী হয় না। সুরক্ষাবাদ ব্যবস্থা একটি অচলাবস্থা। অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে বৃহত্তর উন্মুক্ততা এবং সুষম সুবিধার সঙ্গে অন্তর্ভুক্তির দিকে এগিয়ে নিতে চীন বাংলাদেশ ও বিশ্বের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, যাতে অভিন্ন উন্নয়নের স্বার্থে একটি ন্যায্য বিশ্ব গড়ে তোলা যায়।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত অনুবিভাগ) মোহাম্মদ নুর-ই আলম।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ত ক জ করত সহয গ ত ক জ কর র জন য ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
লন্ডন বৈঠকে অবিশ্বাস দূর, সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের পথ সুগম হবে: সাইফুল হক
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক দেশে আগামী সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক অচলাবস্থা, সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর করবে বলে আশা করছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। আজ শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন তিনি।
লন্ডনে দুই নেতার বৈঠকের বিস্তারিত সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করারও আহ্বান জানিয়েছেন সাইফুল হক।
সরকারের এই উদ্যোগ বিলম্বিত বোধদয়ের ফল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সাইফুল হক বলেন, আরও আগে সরকারের এই বোধদয় হলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক ও রাজনৈতিক বিরোধ এড়িয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ মৌলিক কাজে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া যেত।
সব অংশীজনকে আস্থায় নিয়ে সরকারকে কাজ করার আহ্বান জানান সাইফুল হক। তিনি বলেন, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের রাস্তা সুগম হলো।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাইফুল হক বলেন, দেশের মানুষের অধিকার ও মুক্তি অর্জনে তাঁর দল জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আগামীতে আপসহীন ধারায় সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল ও মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক। সমাবেশে সংহতি জানান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষদের আহবায়ক শেখ আবদুর নূর।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম মীর, রেজাউল আলম, ফিরোজ আলী, কেন্দ্রীয় সংগঠক আইয়ুব আলী, বাবর চৌধুরী, ঢাকা মহানগর কমিটির নেতা মো. সালাউদ্দীন, মিজারুল রহমান ডালিম, আরিফুল ইসলামসহ পার্টির ঢাকা মহানগরের নেতারা।