যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের তীব্র সমালোচনা করে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত চীন। বুধবার ২০২৫ সালের জন‍ চায়না এইডের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠকের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী আগামী মাসে ঢাকায় আসছেন। তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে চীনের ১০০ বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আসবেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থানরত আরও ১০০ ব্যবসায়ী তাঁর সঙ্গে যোগ দেবেন। এ ছাড়া স্থানীয় আরও কিছু প্রতিষ্ঠানকে মে মাসের পরিকল্পিত বিনিয়োগ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

ইয়াও ওয়েন বলেন, মোংলা বন্দর প্রকল্প এবং চট্টগ্রামে চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি তিস্তা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত বেইজিং। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে বাংলা নববর্ষের ড্রোন শো বাংলাদেশে এটা প্রথম, আর চীনও এই প্রথম কোনো দেশে শোর জন্য আড়াই হাজার ড্রোন পাঠাল। এই ড্রোন শোর দারুণ সাফল্য আমরা একে অন্যের কত  কাছাকাছি এবং দুই দেশ কীভাবে পরিবর্তনের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে পারে তার প্রতিফলন।’

চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘মনে আছে সেদিন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনে ড্রোন শো চলাকালে দর্শক চীন চীন চীন বলে স্লোগান দিচ্ছিল। এ ধরনের আয়োজন আমাদের মধে৵ নৈকট্য বাড়ায় আর আমাদের একে অন্যের সত্যিকার বন্ধুতে পরিণত করে। ওই অনুষ্ঠানের অংশীদার হতে পেরে আমরা গর্বিত।’

চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ দুই দেশের সহযোগিতার ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করে। গত মাসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া বার্ষিক সম্মেলন ২০২৫–এ যোগ দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে বেইজিং সফর করেছিলেন। সফরে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাত করেন, যা চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নয়নের একটি নতুন পর্যায় চিহ্নিত করে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরে দুই দেশের মধ্যে বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতায় নতুন গতি সঞ্চার হয় বলে উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের সমাজে একটি বিস্তৃত ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। চীন বাংলাদেশ ও বিশ্বের উন্নয়নের জন্য সংস্কার আরও গভীর করবে এবং উচ্চস্তরের সুযোগ সম্প্রসারণ করবে।

ইয়াও ওয়েন বলেন, চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে এবং ডিজিটাল অর্থনীতি, সুনীল অর্থনীতি, অবকাঠামো এবং পানি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতার সুযোগ খুঁজবে। চীনে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের জন্য চিকিৎসা সুবিধা সহজতর করবে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৃত্তির সুযোগ সম্প্রসারণ করবে। পাশাপাশি চীনে ব্যবসা, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের বৃহত্তর সম্পৃক্ততাকে উৎসাহিত করবে।

মার্কিন শুল্কারোপকে চীন সরকার তীব্র নিন্দা ও দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের অভিন্ন উন্নয়ন অর্জনে একসঙ্গে কাজ করার জন্য একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল আন্তর্জাতিক পরিবেশ প্রয়োজন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তা ও বাণিজ্য ঘাটতির অজুহাতে চীন–বাংলাদেশসহ তার সব বাণিজ্য অংশীদারের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। এটি সব দেশের বৈধ অধিকারের তীব্র লঙ্ঘন এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মকে গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছে। সেই সঙ্গে এ শুল্ক আরোপ নিয়মভিত্তিক বহুপক্ষীয় বাণিজ্যব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে দুর্বল ও বিশ্ব অর্থনৈতিক শৃঙ্খলাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে যে বাণিজ্য বা শুল্ক যুদ্ধে কেউ বিজয়ী হয় না। সুরক্ষাবাদ ব্যবস্থা একটি অচলাবস্থা। অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে বৃহত্তর উন্মুক্ততা এবং সুষম সুবিধার সঙ্গে অন্তর্ভুক্তির দিকে এগিয়ে নিতে চীন বাংলাদেশ ও বিশ্বের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত, যাতে অভিন্ন উন্নয়নের স্বার্থে একটি ন্যায্য বিশ্ব গড়ে তোলা যায়।

প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মিরানা মাহরুখ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত অনুবিভাগ) মোহাম্মদ নুর-ই আলম।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ত ক জ করত সহয গ ত ক জ কর র জন য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে:

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।  

সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএনসিসির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত পশ্চিম শেওড়াপাড়া, পশ্চিম কাজীপাড়া ও সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা, ৫ কিলোমিটার নর্দমা ও দেড় কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণকাজের উদ্বোধন ও গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।

ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, ডিএনসিসির সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। প্রকল্পটি কবে শুরু হবে, কবে শেষ হবে, কতা টাকা বরাদ্দ আছে—এসব তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এছাড়া, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ হলে নির্মাণ সামগ্রী কী, সেটা জনগণের জানা দরকার। যখন জনগণ জানবে, তখন তারা জবাবদিহি করতে পারবে।

তিনি বলেন, “আমি গত সপ্তাহে কাউকে না জানিয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে চলমান কাজ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, রাস্তাকে ধরে রাখার জন্য যে ওয়াল (বিশেষ দেয়াল) দেওয়া হয়েছে, সেটার পিলার বানানোর কথা ছিল স্টোন দিয়ে; কিন্তু বানিয়ে রেখেছে ব্রিক দিয়ে। এটা বড় দুর্নীতি। স্থানীয় মানুষ যদি না জানে, কী নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হবে, তাহলে দুর্নীতি করাটা সহজ। তথ্যের যত বেশি আদান-প্রদান হবে, তথ্য যত বেশি পাবলিক করা হবে, জনগণ তত বেশি জবাবদিহি করতে পারবে। আমি ঠিকাদারকে জানিয়ে দিয়েছি, সঠিক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার না করলে বিল দেব না। তারা বলেছে, এটা ঠিক করে দেবে।” 

মোহাম্মদ এজাজ বলেন, যার যার এলাকার কাজ তারা বুঝে নেবেন। বুঝে নেওয়ার জন্য যত তথ্য ও সহযোগিতা লাগবে, সেটা আমরা দেব। ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে প্রকল্পের সব তথ্য ও ঠিকাদারের ফোন নম্বরসহ দেওয়া থাকবে। স্থানীয় জনগণ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ বুঝে নেবেন। আমরা চাই, সকলের অংশগ্রহণে উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হবে। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।”

তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় সোসাইটি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতা পাচ্ছি। সবার অংশগ্রহণ বাড়াতে আমি বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে গণশুনানি করছি। প্রতি মাসে ফেসবুক লাইভে দেশে-বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সাথে যুক্ত হচ্ছি। ডিএনসিসির সবার ঢাকা অ্যাপ আছে, সেটির পাসওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের দিচ্ছে না। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা ৪ কোটি টাকা খরচ করে এই অ্যাপ বানিয়েছে। পাসওয়ার্ড না দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।”

ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় হকারদের জন্য হাটা যায় না। মানুষের অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। ঢাকা শহরে মানুষের চলাচলের অধিকার সবার আগে, সেই অধিকার আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। মিরপুর-১০ এর প্রধান সড়কের যত হকার ও অটোরিকশা আছে, সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেব। যারা এ ধরনের ইনফরমাল পেশায় যুক্ত আছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্যও আমরা প্ল্যাটফর্ম করব। তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা আমরা তৈরি করব। এই শহরটা সবার, সবাই একসাথে বসবাস করব; কিন্তু অন্যদের কষ্ট না দিয়ে, অন্যের অধিকার নষ্ট না করে। 

বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

ঢাকা/এএএম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সাথে পুলিশের মতবিনিময়
  • ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সিপিবি নেতার সৌজন্য সাক্ষাৎ
  • রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত স্থগিতের দাবি রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের
  • ট্রাম্প কানাডাকে ‘ভেঙে ফেলতে’ চেয়েছিলেন
  • পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
  • হামদর্দের গাজার জনগণের প্রতি মানবিক সহায়তা
  • প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে রিট, ইউনিয়ন পরিষদটিতে চার মাস ধরে সব সেবা বন্ধ
  • সংসদে সংরক্ষিত আসন, না তৃণমূল রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ?
  • স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে: