Samakal:
2025-07-31@07:17:05 GMT

আশ্বাসেই ঝুলছে বগা সেতু

Published: 24th, April 2025 GMT

আশ্বাসেই ঝুলছে বগা সেতু

পটুয়াখালীর বাউফলের লোহালিয়া নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তিন উপজেলার মানুষকে। দুমকী-বাউফল-দশমিনা-গলাচিপা আঞ্চলিক মহাসড়কে একটি সেতু নির্মাণে কয়েক দশক ধরে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বগা নামক স্থানে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। 

জানা গেছে, কুয়াকাটা-পটুয়াখালী-ঢাকা মহাসড়কের লেবুখালী থেকে দুমকী-বাউফল-দশমিনা-গলাচিপা সদর পর্যন্ত প্রায় ৮৬ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মিত হয়েছে। মাঝপথে বাউফলের বগা ইউনিয়নের লোহালিয়া নদী। ওই আঞ্চলিক মহাসড়কের ১১ কিলোমিটারে লোহালিয়া নদীতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ফেরি রয়েছে। প্রতিদিন ফেরিতে পণ্যবাহী শত শত ট্রাক,  কাভার্ডভ্যান, যাত্রীবাহী বাস, তিন উপজেলার রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স নদী পার হয়। এসব যানবাহন ও যাত্রীদের নদী পারাপার হতে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। অনেক সময় ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। লোহালিয়া নদীতে সেতুটি নির্মিত হলে জেলা সদর থেকে দুমকী উপজেলা হয়ে বাউফল, দশমিনা উপজেলা ছাড়াও গলাচিপা উপজেলা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত হবে। 

স্থানীয়রা জানান, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ অর্থনৈতিক সূচকে সমৃদ্ধ এক জনপদ বাউফল। এই একটি উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন পটুয়াখালী-২। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সড়কপথে বাউফলে এলে লোহালিয়া নদী পেরিয়ে আসতে হয়ে। এ ছাড়া দুমকী, দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলার কয়েক লাখ মানুষকে বগা ফেরিঘাট হয়ে জেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতে হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে এই আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও উপজেলাবাসীর প্রধান দাবি বগা সেতু নির্মাণ হয়নি। 

পটুয়াখালী-বগা-বাউফল সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী ট্রাকচালক খলিলুর রহমান বলেন, ‘ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এর থেকে বড় বড় নদীতেও সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। লোহালিয়া নদীতে ফেরি পার হতে গাড়িচালকদের যেমন সময় নষ্ট হয়, তেমনি পরিবহন ভাড়াও বেশি দিতে হয়। এ ছাড়া অনেক সময় নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হয় না।’

বাউফলের বগা বন্দরের ব্যবসায়ী সমির বণিক বলেন, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আগে রাজধানী ঢাকা থেকে লঞ্চে মালপত্র পরিবহন করতেন। এতে করে বগা লঞ্চ ঘাটে মালপত্র নামিয়ে আবার ছোট ছোট পরিবহনে বন্দরে নিয়ে আসতে অনেক খরচ  পড়ে। পদ্মা সেতুসহ দক্ষিণাঞ্চলে অনেক সেতু নির্মাণ হওয়ায়  পরবর্তী সময়ে সড়ক পথে ট্রাকে মালপত্র পরিবহন বেড়ে যায়। এখনও লোহালিয়া নদীতে ফেরি নিয়ে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বগা সেতুটি নির্মাণ হলে সড়ক পথে সরাসরি মালপত্র বন্দরে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। অবিলম্বে বগা সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি। 

বাউফলের এনামুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান খান বলেন, রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সড়ক পথে যাতায়াতে তিন উপজেলার মানুষের বড় দুর্ভোগ বগা ফেরি পারাপার। বগা ফেরিঘাটে সেতু নির্মাণ হলে জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে বাউফলসহ তিন উপজেলার নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে কয়েক লাখ মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন ও স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটবে। 

স্থানীয় কৃষক আরোজ আলী বলেন, লোহালিয় নদীতে বগা সেতু নির্মাণ হলে স্থানীয় কৃষকরা তাদের পণ্য জেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে লাভবান হতে পারবে। 

বাউফল শাখা পূবালী ব্যাংকের ম্যানেজার টি এম মনিরুজ্জামান বলেন, লোহালিয়া নদীর ওপর বগা সেতুটি নির্মিত হলে এ অঞ্চলের মানুষের ব্যবসা বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে নতুন গতি আসবে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার দুটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, জেলা সদর থেকে ফেরিতে ব্যাংকের টাকা নিয়ে আসতে তাদের প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এতে আমানতকারীরা ব্যাংক সম্পর্কে খারাপ ধারণা করেন এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। 

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

জামিল আক্তার জানান, লোহালিয়া নদীতে বগা সেতু নির্মাণের জন্য ২০২১ সালের মার্চ মাসে চীনের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ইতোমধ্যে সেতুর ফিজিবিলিটি স্টাডিও শেষ  হয়েছে। এখন জমি অধিগ্রহণ এবং এতে কী পরিমাণ অর্থ খরচ হবে, সে বিষয়ে প্রাক্কলন তৈরি করা হচ্ছে। এটি শেষ হলে দ্রুত ডিপিপি প্রণয়ন করে সেতু নির্মাণকাজ শুরু করা যাবে বলে তিনি আশাবাদী। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত ন উপজ ল র ম লপত র ব উফল র পর বহন ব যবস দশম ন

এছাড়াও পড়ুন:

লাখপুরের রংবাহারি রাম্বুটান

১৯ জুলাই সকাল ১০টা। নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মরজাল বাজারে গাড়ি থেকে নামলাম। ততক্ষণে ব্যাপারীদের পাইকারি কেনাকাটা শেষ। মালপত্র বেঁধেছেঁদে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। কিন্তু ফুটপাতে তখনো ভিড়। খুচরা ক্রেতারা পছন্দের জিনিস কিনতে দরদাম করছেন। ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়লাম, দেখা যাক কী পাওয়া যায়।

কাঁঠালের দোকানে তেমন ভিড় নেই। লটকনের দোকান বেশি, বিক্রিও ভালো। আকার অনুযায়ী দাম। এখানে না এলে জানতামই না, এত বড় আকারের লটকন হতে পারে! এক গৃহস্থ টুকরিতে কলম্বো লেবু নিয়ে বসে আছেন। এই লেবু আকৃতি ও সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে থামতেই হলো। কয়েকটি দোকানে সাজানো হলুদ আর লাল রঙের রাম্বুটান!

দেখতে ফুলের মতো আকর্ষণীয় রঙের এই ফল সবার নজর কাড়ছে। ক্রেতারা দাম জানতে চাইছেন। কেউ কেউ কিনছেনও। জানতে চাইলাম, এই রাম্বুটান কোথা থেকে এল? দোকানির উত্তর শুনে চোখ ছানাবড়া। নরসিংদীর কয়েকটি গ্রামেই নাকি ইদানীং চাষ হচ্ছে রাম্বুটান। দারুণ ব্যাপার। এ খবর জানা ছিল না।

কাছাকাছি দূরত্বে কোনো গ্রামে গেলে কি রাম্বুটানের বাগান দেখতে পাওয়া যাবে? এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা মো. সুজন মিয়া। তিনি জানালেন,Ñকাছেই বেলাব উপজেলার লাখপুর গ্রামে চমৎকার একটি বাগান আছে।

আমরা দ্রুত বাগানের পথ ধরি। বাগানে যেতে যেতে মনে হলোÑ ঘন গাছপালার ছাউনির ভেতর দিয়ে ক্রমেই যেন হারিয়ে যাচ্ছি! এখানকার বেশির ভাগ গাছই লটকনের। বাগানগুলো এতই বড় যে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ভালোভাবে দেখা যায় না।

অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেলাম লাখপুর গ্রামে। উয়ারী ও বটেশ্বর–লাগোয়া এই গ্রামে রাম্বুটানের বাগানে গিয়ে চমকে উঠি। বেশ বড় বড় অনেক গাছ। গাছে গাছে দুই রঙের রাম্বুটান। চমৎকার দৃশ্য।

এ রংবাহারি ফল দেখার জন্য সারা দিন অনেক মানুষ ভিড় করেন সেখানে। কেউ কেউ দেখছেন, আবার কিনছেনও। একটু সময় নিয়ে বাগানটি ঘুরে দেখি। ছয়-সাত বছর বয়সী সব গাছই ফলভারে আনত। পাকা ফলগুলো দেখতে রঙের ঝরনাধারার মতো, বহুবর্ণিল। বাগান থেকে তরতাজা কিছু ফল কিনি। মন ভরে ছবি তুলি।

একসময় রাম্বুটান চিনতাম না। ২০০৫ সালে হংকংয়ে বেড়াতে গিয়ে বন্ধু মোস্তাফিজুর রহমান শাহিনের বাসায় প্রথম এ ফল খাই। পরে কুয়ালালামপুর শহরের আশপাশে রাম্বুটানের অনেক গাছ দেখেছি। দুই বছর পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে গাছভর্তি রাম্বুটান দেখে চমৎকৃত হয়েছিলাম। বীজ থেকে তৈরি চারাগুলো সেখানে প্রথম লাগানো হয় ১৯৯৮ সালে। প্রায় সাত বছর পর গাছগুলোতে ফল আসতে শুরু করে। আকৃতি ও স্বাদের দিক থেকেও ফলগুলো সমমানের।

বাগানে সুদর্শন হলুদ রঙের রাম্বুটান

সম্পর্কিত নিবন্ধ