নির্বাচনের আগে প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেট হওয়া দরকার: ইশরাক
Published: 24th, April 2025 GMT
সাদেক হোসেন খোকা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশে আমেরিকার মতো নির্বাচনের আগে প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেট হওয়া দরকার। যেন প্রার্থীদের যুক্তিতর্ক শুনে মানুষ কাকে ভোট দেবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
বৃহস্পতিবার সেন্ট জোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় বিতর্ক উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিন দিনব্যাপী আয়োজিত উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ব্রাদার ড.
ইশরাক হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তরুণ প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আছে। তারাই দেশের ভবিষ্যৎ কান্ডারি। আমাদের ট্যালেন্ট খুঁজে বের করতে হবে। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনী সাধনের মাধ্যমে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি।
তিনি বলেন, আশা করি, আমরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে পারব। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ হবে পৃথিবীর সমৃদ্ধশালী একটি দেশ। যুক্তিতর্ক করে পলিসি নির্ধারণ হবে। কোনো হানাহানি থাকবে না। শিক্ষার্থীদের আর যেন রাস্তায় নামতে না হয়, সে দিকে সবাইকে গুরুত্ব দিতে হবে।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পরিবর্তী সময়ে পরিস্থিতিতে তরুণ প্রজন্মের ওপর দেশবাসীর আশা ভরসার জায়গা আরও বেশি তৈরি হয়েছে। কোনো অপশক্তি যেন জুলাই বিপ্লবকে ভূলুণ্ঠিত করতে না পারে সে জন্য নবীন ও প্রবীণ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জুলাই বিপ্লবে শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে, তরুণরা ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র ব্যর্থ হবে। এই ব্যর্থতার দায় রাজনৈতিক শক্তিগুলো এড়াতে পারবে না।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে যারা ভবিষ্যৎ সরকার পরিচালনায় আসবেন তাদের অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতার মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পথ নকশা তৈরি করা উচিত।
সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এ কলেজের উপাধ্যক্ষ ব্রাদার নিপু হিউবার্ট রোজারিও সিএসসি, যোসেফাইট ডিবেটিং ক্লাবের চিফ মডারেটর ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন করিব প্রমুখ। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এবারের উৎসবে ৩১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪৮ বিতর্ক দল অংশ নিয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন অন ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।