Samakal:
2025-05-01@05:34:58 GMT

থাকার কথা ১১ জন আছেন ১ চিকিৎসক

Published: 24th, April 2025 GMT

থাকার কথা ১১ জন আছেন ১ চিকিৎসক

তিন বছর বয়সী ছেলে মারুফের সর্দি-জ্বর। তাকে বুধবার চিকিৎসকের কাছে নিয়ে এসেছেন মা নাজমা আক্তার (৩৫)। বহির্বিভাগের ২ নম্বর কক্ষের সামনে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাউফলের নাজিরপুর ইউনিয়নের তাঁতেরকাঠি গ্রামের এই গৃহবধূ। হঠাৎই তাঁর সামনে চলে আসেন আরেক নারী। এই নিয়ে ঝগড়া বেঁধে যায় দু’জনের। উভয়েরই দাবি, তারা আগে এসেছেন, তাই সামনে দাঁড়াবেন। বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমন চিত্র দেখা মেলে প্রতিদিনই। 
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, জনবল সংকটের কারণে এখানে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। বাড়তি রোগীর চাপে তারা স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন না। বাউফল পৌরসভাসহ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ মানুষের বসবাস। তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০১১ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির শয্যা ৩১ থেকে বাড়িয়ে ৫০টি করে। পুরোনো দ্বিতল ভবনের জায়গায় মাথা তুলে দাঁড়ায় চারতলা ভবন। দীর্ঘ ১৪ বছরেও বাড়েনি জনবল। 
তাঁতেরকাঠির নাজমা আক্তার মঙ্গলবার ছেলে মারুফকে নিয়ে এসেছিলেন হাসপাতালে। রোগীর দীর্ঘ সারির কারণে সেদিন চিকিৎসক দেখাতে পারেননি। বাধ্য হয়ে বুধবার সকাল ৮টার দিকে এসে লাইনে দাঁড়ান। সকাল ১০টার দিকেও তিনি লাইনের মাঝামাঝি ছিলেন। এরই মধ্যে অন্য এক নারী এসে সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে ঝগড়া বেঁধে যায়।
ওই নারীর নাম আয়শা আক্তার। তিনি মেয়ে আরিফাকে নিয়ে আসেন সূর্যমনি গ্রাম থেকে। তিনি উল্টো নাজমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তবে দুর্ভোগ-বিড়ম্বনা তাদের একই। আয়শা-নাজমার মতো শিশুসন্তানের চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন দাসপাড়া গ্রামের সখিনা, ময়না ও কুলসুম। তারা জানান, তীব্র গরমের মধ্যে টানা ৩-৪ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কোমরে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। 
২ নম্বর কক্ষে প্রতিদিন নিজের সাধ্যের বাইরে রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন মেডিকেল অফিসার শাম্মী আক্তার। অতিরিক্ত রোগী সামলাতে গিয়ে গালাগালও শুনতে হয় তাঁকে। হতাশ কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘দশজনের খাওয়া যেমন একা খাওয়া যায় না, তেমনি দশজনের কাজ একা করা যায় না। তবুও দায়িত্ব কাঁধে, (এভাবেই) চলতে হবে।’
রোগীদের এই প্রতিদিনের ভোগান্তির সাক্ষী চা দোকানি মো.

আশ্রাফ। হাসপাতালের সামনে তাঁর দোকান। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত খোলা রাখেন তিনি। আশ্রাফের ভাষ্য, রোগীর নানা সংকটে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। কয়েক মাস ধরে রোগীরা ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। 
রোগীর স্বজনের কাছ থেকে প্রায়ই ফোনকল পান বাউফল পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মিজানুর রহমান খোকন। রোগীর দুর্ভোগের কথা শুনে কোনো জবাব দিতে পারেন না। তিনি বলেন, মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তাদের সেবাবঞ্চিত হওয়া সবার জন্য লজ্জার। 
দীর্ঘদিন ধরে এ হাসপাতালে সংকট চললেও তীব্র মাত্রা পেয়েছে মাস দেড়েক আগে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে এখান থেকে বদলি হয়ে যান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) প্রশান্ত কুমার সাহা ও মেডিকেল অফিসার এস এম সায়েম। একজন ডেন্টাল সার্জনও বদলি হন একই সময়ে। তখনকার আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) পদে থাকা আব্দুর রউফ পদোন্নতি পান ইউএইচএফপিও পদে। তিনি বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, এখানে ১১টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে শুধু তিনিই আছেন। এ জন্য ইউনিয়ন পর্যায় থেকে চিকিৎসক নুরজাহান, শাম্মী আক্তার ও তাসরিফ হোসেনকে প্রেষণে এনে হাসপাতাল পরিচালনা করছেন। 
এই কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যমতে, অন্য পদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ৬টি পদ এখন খালি। সহকারী সার্জনের ৯ পদের বিপরীতে তিনজন, স্টাফ নার্সের ১০টি পদ, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ১১টি পদ ও ওয়ার্ড বয়ের ২০টি পদের বিপরীতে আছেন দুইজন করে। এ ছাড়া সহকারী নার্সের ১৫ পদ, সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ১৫ পদ, স্টোরকিপারের ১৪ পদ, কম্পিউটার অপরেটরের ১৩ পদ, ক্যাশিয়ারের ১৪ পদ, গাড়িচালকের ১৩ পদের বিপরীতে একজন করে আছেন। ক্লিনিং স্টাফের ২০টি পদের বিপরীতে ৪ জন কর্মরত আছেন। এ ছাড়া হারবাল অ্যাসিস্ট্যান্টের ১৬টি, কার্ডিওগ্রাফারের ১৬টি ও হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট কাম অ্যাকাউনট্যান্টের ১৪টি পদই শূন্য। 
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রউফ বলেন, ‘দিনে গড়ে দুই-তিনশ রোগী আসেন জরুরি বিভাগে। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা রোগী, মারামারির রোগী তো দিনরাতই আসছে। আমি আর পারছি না। ৩০ শয্যার লোকবলই নেই, ৫০ শয্যা চালাবো কীভাবে?’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক পদ র ব পর ত কর মকর ত চ ক ৎসক উপজ ল ব উফল

এছাড়াও পড়ুন:

দহন থেকে  জংলি

‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।

গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা। 

সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’

মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।  

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে। 

ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।

ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’ 
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই  দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ