পঞ্চায়েত সমিতির ঘর দখল নিয়ে সংঘর্ষ আহত অর্ধশতাধিক
Published: 25th, April 2025 GMT
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার ও গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির ঘর দখলকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত উপজেলার জলসুখা ইউনিয়নের নোয়াগড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গুরুতর আহত অবস্থায় পাঁচজনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নোয়াগড় গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতি প্রতিবছর আশপাশের জমি, পুকুর ও ডোবা ইজারা দিয়ে থাকে। সমিতির তহবিলে বেশ কিছু টাকাও রয়েছে। এতদিন সমিতির ঘরের নিয়ন্ত্রণ ওই গ্রামের বাসিন্দা আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান মেম্বারের কাছে ছিল। সম্প্রতি লতিফুর মেম্বার ও বিএনপি নেতা আক্তার হোসেন তাঁকে বাধা দেন ও সমিতির হিসাব চান। এর পরই দু’পক্ষের বিরোধ জোরদার হয়।
এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এর জের ধরে গতকাল সকালে উভয় পক্ষের লোকজন দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে অন্তত অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় মনু মিয়া, নিহাদ, ইসরাত, শফিক মিয়া, আবু সাঈদ, তসকির মিয়া, সাদ্দাম, মরিয়ম আক্তার, জবেদা, মাছুম, শাহিন, সাব্বির, জমিলা খাতুন, আলি নুর ও ওয়াহিদুরকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাঁচজনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে শাহজাহান মেম্বারের পক্ষের লোক সিরাজুল ইসলাম সেলিম সমকালকে বলেন, বহু বছর ধরে শাহজাহান মেম্বার ও আক্তার হোসেনের লোকজনের মধ্যে বিরোধ চলছে। সম্প্রতি লতিফুর মেম্বার এলাকার নতুন সর্দার হওয়ার পর থেকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে থাকেন। এ নিয়ে বিরোধ চাঙ্গা হয়।
এ ব্যাপারে লতিফুর রহমান মেম্বার বলেন, শাহজাহান মেম্বার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের করা ৯ হত্যা মামলার আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক ওয়ারেন্ট রয়েছে। তবুও তাঁকে গ্রেপ্তার করছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ নিয়ে কিছুদিন আগে এলাকাবাসীকে নিয়ে মানববন্ধন করলে ক্ষিপ্ত হয় শাহজাহান বাহিনী। আজমিরীগঞ্জ থানার ওসি এবিএম মাঈদুল হাছান বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ হজ হ ন ম ম ব র
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।