সংস্কারের মৌলিক বিষয়গুলোতে বিএনপির বিপরীত অবস্থানে থাকা জামায়াতে ইসলামী জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসছে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কমিশন কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হবে। 

সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কারে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশন ১৬৬ সুপারিশ করেছে। এতে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপর আলোচনা চলছে। জামায়াত ঐকমত্য কমিশনের ৭৭ সুপারিশে একমত, ৩৬ সুপারিশে আংশিক একমত জানিয়েছে। একমত নয় ৫৩ সুপারিশে। রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সুপারিশে আংশিক একমত এবং একমত নয়, সেগুলো নিয়ে বৈঠক করছে কমিশন। কেন একমত না তাও জানতে চাইছেন তারা। 

প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমাতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। এটিকে মৌলিক সুপারিশ বলা হচ্ছে। বিএনপি এতে একমত না হলেও, প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তের পরিবর্তে এনসিসির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগের সুপারিশে একমত জামায়াত। যদিও প্রস্তাবিত এনসিসিতে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতিকে চায় না। সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে এনসিসিও বিলুপ্ত হবে বলে মতামত দিয়েছে জামায়াত। 

সংসদ নির্বাচনের ভোটের অনুপাতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব করেছে জামায়াত। নির্বাচনে যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, উচ্চকক্ষে তত শতাংশ আসন পাবে। বিএনপি দ্বিকক্ষের সংসদ গঠনে রাজি হলেও, ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষে রাজি নয়। জামায়াত উচ্চকক্ষের মতো নিম্নকক্ষও ভোটের অনুপাতে গঠনের মতামত দিয়েছে। নবগঠিত এনসিপি ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ চাইলেও, দলটি বিদ্যমান আসন ব্যবস্থা অনুযায়ী নিম্ন কক্ষ নির্বাচন চায়। 

কমিশন সুপারিশ করেছে, ৪০০ আসনের নিম্নকক্ষের ১০০ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত থাকবে। জামায়াত এতে রাজি নয়। দলটি মতামত দিয়েছে, ৫০টি নারী আসন ভোটের অনুপাতে ভাগ হবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বয়স কমিয়ে ২১ নির্ধারণেও একমত জামায়াত। 

জামায়াত সংবিধান সংস্কার কমিশনের ৭০ সুপারিশের ৩১ সুপারিশে একমত, ১৬ সুপারিশে আংশিক একমত এবং ২৩ সুপারিশে একমত নয় বলে জানিয়েছে। দলটি বিচার বিভাগ সংস্কারের ২৩ সুপারিশের একটি বাদে বাকিগুলোতে একমত বা আংশিক একমত। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের ২৭ সুপারিশের ১০টিতে একমত নয় বলে জানিয়েছে। সুপারিশে মতামত দেওয়া ছাড়া জামায়াত নিজে থেকে কিছু প্রস্তাব দিয়েছে কমিশনে। বিএনপির মতো জামায়াতও ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে, সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ চায় না। উভয় দল মূলনীতি হিসেবে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহাল চায়। 
বিএনপির সঙ্গে ১৭ এপ্রিল, ২০ এবং ২২ এপ্রিল তিন দিনব্যাপী বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন। জামায়াতের সঙ্গেও একাধিক বৈঠক হতে পারে। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ সমকালকে বলেন, জামায়াত দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠে সংস্কার চায়। এমনভাবে সংস্কার হতে হবে, আর যাতে ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসন ফিরতে না পারে। নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা এবং বিচার বিভাগ-রাষ্ট্রের তিন স্তম্ভের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। 

 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ভ ট র অন প ত আ শ ক একমত একমত নয় ব এনপ র মত মত দ একমত ন এনস স

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এখন দেশের ১৮ কোটি মানুষের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘এই সনদ নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জারি করা হোক এবং প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করা হোক। তবে এই গণভোট অবশ্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে হবে, নির্বাচনের পরে নয়।’

আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে তৃতীয় ধাপে তৃতীয় দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রফিকুল ইসলাম খান। এ সময় উপস্থিত ছিলে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।

জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই আবারও রাস্তায় নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেন রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর সে সময়কার দলগুলোর ঐকমত্য থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতায় থাকা দলগুলো সেটি (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) যথাসময়ে বাস্তবায়ন করেনি। পরে আন্দোলনের মাধ্যমেই তা সংবিধানে যুক্ত হয়।

জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়েছিল বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের মাধ্যমে। আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এ রায় দেওয়ানো হয়েছিল। তাই বিচার বিভাগকে আবার বিতর্কের মুখে না ফেলে সংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে জামায়াত।

জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ঐকমত্য কমিশন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে চারটি বিকল্প নিয়ে কাজ করেছে, যার মধ্যে কমিশন সংবিধানিক আদেশের প্রস্তাবটি সমর্থন করেছে। এই আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের ২২টি আর্টিকেল বাস্তবায়িত হতে পারে। এটি আইনিভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি।

এক প্রশ্নের জবাবে হামিদুর রহমান বলেন, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করার এখতিয়ার সংসদের নেই, এবং এ ধরনের পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই গণভোটের প্রয়োজন হয়।

জামায়াতে ইসলামী জনগণের অভিপ্রায়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে জামায়াতের এ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাই হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন।

জুলাই সনদের যে আদর্শ ও চেতনা, তা বাস্তবায়ন হওয়া উচিত এবং যারা এই আদর্শের পথে হাঁটবে না, জনগণ তাদের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করেন হামিদুর রহমান আযাদ। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ এটি প্রমাণ করে যে এ দেশের তরুণসমাজ ও জনগণ নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা চায় এবং জুলাই বিপ্লবের যোদ্ধাদের পক্ষেই রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের সুপারিশ, একমত নয় দলগুলো
  • ‘সংবিধান আদেশ’ জারির সুপারিশ করতে পারে কমিশন: আলী রীয়াজ
  • জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
  • কমিটি গঠন, প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত 
  • বর্ধিত মেয়াদের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ
  • বিএনপি নির্বাচনমুখী কর্মসূচিতে যাবে
  • দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন
  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হতে হবে
  • জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ফের এক মাস বাড়ল
  • সব দলের সম্মতিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে এবি পার্টি